১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেসির পেনাল্টি মিসে হতাশ ম্যারাডোনা

মেসির পেনাল্টি মিসে হতাশ ম্যারাডোনা - ছবি : সংগৃহীত

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে টিভি পর্দায় ভেসে উঠল ম্যারাডোনার চোহারা। টিভিতে তাকে দেখেই সবার ঘাড় ঘোরোনো শুরু ভিআইপি গ্যালারির দিকে। ভিআইপি গ্যালারির একেবারে দক্ষিণ কোণায় মিলল ম্যারাডোনাকে। মাঠে নামছেন মেসিরা। আর ততক্ষণে গ্যালারি মাতানো শুরু করলেন ম্যারাডোনা। ফটো সাংবাদিকরা তাকে পেয়েই শুরু করে দিলেন তাকে ক্যামেরাবন্দী করতে। তার পাশে বসা দর্শকরা তো তাকে পেয়ে মহা খুশি। তারা তার সাথে ছবি তুললেন ইচ্ছে মতো। ম্যারাডোনার একটু দূরেরই গ্যালারির একটি অংশের শেষাংশ। সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। এরা আরো উৎসাহেত হয় সাবেক এই তারকা ও আর্জেন্টিাকে সর্বশেষ বিশ্বকাপ এনে দেয়া ব্যাক্তিটিকে পেয়ে।

কালো রঙের গেঞ্জি, গেঞ্জির বুকে সাদা ছাপ, চোখে কালো চশমা, চশমা থেকে মেরুন রঙের আলোকচ্ছ্বটা বেরুচ্ছিল। ওই অবস্থায় সবার দৃষ্টিবন্দী হন ম্যারাডোনা। একটু পরপরই তিনি হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজ দেশের দর্শকদের সাথে ওলে ওলে, ভামোস ভামোস আর্জেন্টিনা , আর্জেন্টিনা (আর্জেন্টিনা এগিযে যাও) বলে গান গাইতেছিলেন।

ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার একটি পেনাল্টি আবেদন নাকচ করে দেন পোল্যান্ডের রেফারি সিজম্যান মাসিনিয়াক। এতে অসন্তুস্ট ম্যারাডোনা ভিডিও রিপ্লে দেখার জন্য আবেদন করতে থাকেন দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে। অবশ্য বিরতির পর মেসি পেনাল্টি মিস করার পর হতাশা ছিল তার মধ্যে। বিরতির পর বেশ স্টাইল করে ছবি তুলতে পোজ দেন তিনি। হাতে সিগারেট ও ছিল তখন। এ সময় একটু দূরে থাকা (মাঝ ফাঁকা) আর্জেন্টিনার এক দর্শক নিজ দেশের পতাকা খালি পানির বোতলে প্যাঁচিয়ে ছুড়ে মারেন ম্যারাডোনার দিকে। উদ্দেশ্য পতাকায় এই সাবেক কোচ এবং অধিনায়কের অটোগ্রাফ নেয়া। কিন্তু ম্যারাডোনা বা তার আশপাশে কারো কাছে কলম ছিল না। তাই আবার সেই দর্শক কলম, ছুড়ে মারলেন। এরপর দুই পক্ষই খুশি।

ম্যাচ চলাকালীন আশপাশের দর্শক এবং মিডিয়াকর্মীরা একটু পরপরই তাকাছিলেন তার দিকে। মানে এখন কী করছেন ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তী। তার অঙ্গভঙ্গী কী তা চোখে আটকানোর জন্য। দলের বকাজে পারফরম্যান্সে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতে দেখা গেছে তাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাকে এবং অন্য সবাইকে মন খারাপ করেই মাঠ ত্যাগ করতে হয়। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা জয়ের বদলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আইসল্যান্ডের সাথে লিড নিয়েও ১-১ এ ড্র করে মাঠ ছাড়ে।

আরো পড়ুন :
এই ড্র হারের সমান : মেসি

রাগে ফুসছিলেন আর্জেন্টিনার দর্শকরা। ক্ষুদ্ধ তাদের সাংবাদিকরাও। গ্যালারিতে উপস্থিত দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার সাথে তাল মিলিয়ে এই সমর্থকরা উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনা দলকে। কিন্তু শনিবার খেলা শেষে সবাইকেই হতাশা নিয়ে ফিরতে হলো মস্কোর স্পার্টাক স্টেডিয়াম থেকে। শিরোপা জিতেতে আসা গতবারের রানার্সআপারা হোঁচট খেল প্রথম ম্যাচেই। বাছাইপর্ব থেকে চমক দেখিয়ে রাশিয়া পর্যন্ত আসা আইসল্যান্ডের বরফে আটকা পড়ল মেসি বাহিনী। তাদেরকে ১-১ গোলে রুখে দিয়ে আইসল্যান্ড এখন স্বপ্নের জাল বুনছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার।

অন্য দিকে আর্জেন্টিাকে নক আউটে যেতে পরের দুই খেলা থেকে অন্তত চার পয়েন্টে পেতেই হবে। প্রথম ম্যাচে জিততে ব্যর্থতা। তবে নকআউট পর্বে যাওয়ার আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।

শনিবার ম্যাচ শেষে সে কাথাই বলেলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। নিজ দেশের দর্শক সহ সবাইকে আশায় রাখলেন তিনি। মিক্সড জোনে তিনি জানান, অপেক্ষা করুন। পরের খেলাতেই আপনারা আনন্দে ভাসতে পারবেন। ‘২১ জুন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আমরা জয়ের জন্যই নামব।’ তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সাথে ড্র কে হারের সাথে তুলনা করলেন তিনি।

খেলা শেষে মিক্সড জোনে সবার আগে এসেছিলেন আইসল্যান্ডের ফুটবলাররা। তাদেরকে ঘিরেই ব্যস্ত মিডিয়া কর্মীরা। বেশ পরে এলেন মেসিরা। আর্জেন্টিনা দল আসার পর আর কেউ ফিরে তাকায় না ড্র করা বীরদের দিকে। সবাই ছুটছে আকাশী নীল জার্সীধারীদের উদ্দেশ্যে। অবশ্য মেসি ও নতুন ১৩ নং জার্সিধারী ম্যাক্সিমিলোনো মেসা ছাড়া কেউই কথা বলেনি মিডিয়ার সাথে। বেচারা মেসা মাত্রই কথা বলা শুরু করেছিলেন। তখনই এলেন মেসি। এরপর যা হওয়ার তাই। সবার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যান মেসি। আর্জেন্টিনার ক্লাব ইন্ডিপিয়েন্তেতে খেলা এই মিডফিল্ডারের দিকে আর কারো আগ্রহ নেই। তাকে রেখেই সবাই পিছু নিলেন বার্সেলোনা তারকার। মনটা একটু খারাপ এবং কিছুটা অপমানিত হয়ে টিম বাসে উঠলেন মেসা।

জিততে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করলেন মেসি। জানান, ‘একটি দল যদি খেলতে না চায় তাহলে তাদের বিপক্ষে কিভাবে জেতা সম্ভব। আইসল্যান্ডতো নেগেটিভ ফুটবল খেলেছে।’ অবশ্য তাদের শক্ত রক্ষণভাগের প্রশংসা তার কন্ঠে। এরপরও প্রথম খেলায় জিততে না পারার জন্য মেসি দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই নিলেন। বললেন ‘এই রেজাল্টে আমি খুব হতাশ। বাজে দিন গেছে আমার । পেনাল্টি মিস করেছি। আসলে এমনটা হতেই পারে। তবে আমরা যে ড্র করেছি এটা হারেরই সমান। কারণ আর্জেন্টিনা সব সময় জয়ের জন্যই খেলে। এখন আমাদের পরে ম্যাচের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ।

নিজ দলের বদলি ফুটবলার ক্রিস্টিয়ান পাভনের প্রশংসা করলেন মেসি। ‘ও খুব ভালো খেলেছে। ব্শে চেষ্টা করেছে সে।’ উল্লেখ্য ১৫মিনিটের জন্য মাঠে নামেন আর্জেন্টিনা লিগে বোকা জুনিয়র্সে খেলা এই ডিফেন্ডোর। মেসি আরো জানান, দর্শকরা আমাদের যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছে।

এদিকে অল্প সময়ের সাক্ষাতকারে মেসা বলেন, মেসি আমাদের ড্রেসিং রুমে বলেছেন পরের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে।


আরো সংবাদ



premium cement