বিশ্বকাপ : কী থেকে কী হতে পারে!
- ১৩ জুন ২০১৮, ১৯:৩০
বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ৩২টি দল। সব ক’টা দলের সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সাধ্য এতদূরে বসে নেই। নামী দলগুলোকেই ভালো দল ধরে নিয়ে সাধারণত বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এখানে বসে সারা বছর ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি বা জার্মানিতে যে–সব ক্লাবের খেলা হয় সেগুলো দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। সেখানে যারা খেলে তারাই বিশ্বকাপের সময় নিজের নিজের জাতীয় দলে খেলে থাকে। ক্লাবে যে–সব প্লেয়ার খেলে তারা যে–সব দেশের প্লেয়ার সেই সব দেশের দলকেই প্রাধান্য দিয়ে সাধারণত বিচার করা হয়। তাই হয়তো কখনো কখনো বিচারে কিছু কিছু ত্রুটি থেকে যায়। বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করার সময় এই স্বীকারোক্তি করে নেয়া উচিত মনে করে তা–ই করা হলো। তার কারণ, প্রথম রাউন্ডে গ্রুপবিন্যাস থেকে প্রতি গ্রুপে চার দলের মধ্যে দুটি দলকে শেষ ১৬–তে নিতে গিয়ে নামী দলগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রথম রাউন্ডে যদি কিছু অঘটন ঘটে, অর্থাৎ যদি কোনো নামী দল হেরে যায় তাহলে গোটা বিশ্লেষণটাই ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়। গ্রুপবিন্যাসের ভিত্তিতে আলোচনা করলেই বোঝা যাবে কারা এই বিশ্লেষণ অনুযায়ী শেষ ৪–এ পৌঁছচ্ছে।
গ্রুপ এ–তে আছে রাশিয়া মানে, আয়োজক দেশ–সহ চারটি দল— রাশিয়া, সৌদি আরব, মিসর আর উরুগুয়ে। রাশিয়া যেহেতু প্রস্তুতি পর্বে খুব ভালো খেলতে পারেনি এবং যোগ্যতা অর্জনের পরীক্ষায় বসতে পারেনি, তাই তারা একটু দুর্বল বলে মনে হচ্ছে। সালাহ না থাকলেও মিসরকে প্রি–কোয়ার্টার ফাইনালে পেতে পারি বলে মনে হচ্ছে। এই গ্রুপ থেকে সঙ্গে যাবে উরুগুয়ে।
গ্রুপ বি–তে মরক্কো আর ইরানকে নিশ্চয়ই পর্তুগাল আর স্পেনের আগে রাখা যায় না। প্রশ্ন শুধু এটাই থাকে যে, গ্রুপশীর্ষে পর্তুগাল আর স্পেনের মধ্যে কে থাকবে? স্পেনকেই শীর্ষে রাখা যায়।
সি গ্রুপে ফ্রান্স শীর্ষে থাকবে আশা করা যায়। অস্ট্রেলিয়া, পেরু আর ডেনমার্কের মধ্যে কে প্রি–কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে, বলা খুব মুশকিল। ডেনমার্ককেই ধরা যেতে পারে। গ্রুপ ডি–তে আর্জেন্টিনার সঙ্গে আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া আর নাইজেরিয়ার মধ্যে যে–কেউ যেতে পারে। মেসি যদি ফর্মে খেলতে না পারে তাহলে অঘটন ঘটতেও পারে। ডি গ্রুপের শীর্ষে আর্জেন্টিনাকে রেখে সঙ্গে ক্রোয়েশিয়াকে রাখা যেতে পারে।
ই গ্রুপে ব্রাজিল আর সার্বিয়াকে ১ আর ২ নম্বরে রাখলাম। এফ গ্রুপে জার্মানি থাকেছে শীর্ষে, দ্বিতীয় স্থানে মেক্সিকো, সুইডেন আর কোরিয়ার মধ্যে মেক্সিকোকেই রাখলাম। জি গ্রুপের বিশ্লেষণ তুলনায় সহজ— বেলজিয়াম আর ইংল্যান্ড যথাক্রমে ২ আর ১ নম্বরে থাকছে বলে মনে করছি। এইচ গ্রুপের থেকে নিচ্ছি কলম্বিয়া আর জাপানকে।
প্রথম রাউন্ডের এই ফলাফল ধরে নিয়ে প্রি–কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছে ফ্রান্সের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়া; উরুগুয়ে আর পর্তুগাল; স্পেন আর মিসর; আর্জেন্টিনা আর ডেনমার্ক; ব্রাজিল বনাম মেক্সিকো; ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জাপান; জার্মানির বিপক্ষে সার্বিয়া; এবং কলম্বিয়া বনাম বেলজিয়াম। পরবর্তী পদক্ষেপ কোয়ার্টার ফাইনাল। সেখানে আশা করা হচ্ছে, ফ্রান্সের মুখোমুখি পর্তুগাল পড়বে, ব্রাজিলের সামনে পড়তে পারে ইংল্যান্ড, জার্মানির মুখোমুখি বেলজিয়াম, আর স্পেন মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনার।
প্রথম রাউন্ডের পর স্পেনের বদলে যদি পর্তুগাল শীর্ষে থাকে তাহলে রোনালদো আর মেসির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে কোয়ার্টার ফাইনালে। এই হিসাব যদি এ পর্যন্ত মিলে যায়, তাহলে শেষ চারে থাকতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল, জার্মানি আর আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স খেলতে পারে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আর জার্মানি খেলতে পারে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। এমনটাই যদি শেষ চার পর্যন্ত হয়, তাহলে ব্রাজিল আর জার্মানি ফাইনাল খেলতে পারে। এটাই বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীরা হয়তো চাইছে। কিন্তু, প্রথম রাউন্ড থেকে যদি কিছু অঘটন ঘটে যায় তাহলে এতক্ষণ যে হিসেবে বা বিশ্লেষণ আলোচিত হল তা সব গুলিয়ে যাবে, উলটপালট হয়ে যাবে অনেক কিছুই।
যেমন প্রথম রাউন্ডে আয়োজক দেশের সুবিধা নিয়ে শেষ ১৬–তে পৌঁছে যেতে পারে রাশিয়া। সি গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে পারে প্রি–কোয়ার্টার ফাইনালে। আইসল্যান্ড ডি গ্রুপে চমক দিতে পারে। জার্মানির গ্রুপে সুইডেন অঘটন ঘটাতে পারে। তাহলে হয়তো অনেক হিসেবই গুলিয়ে যেতে পারে। তবে বারবারই মনে হতে পারে যে, তথাকথিত বড় দল বা নামী দলগুলোই শেষ চারে পৌঁছবে। ইংল্যান্ড ভালো দল, তবে কোচ সাউথগেটের ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভবত ব্রাজিলের মুখোমুখি হতে পারে। তাহলে সেটাই এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচ হতে পারে।
তবে, এতক্ষণ যে আলোচনা করা হরো, বিশ্বকাপের খেলা শুরু হয়ে গেলে সেই আলোচনার কিছুটা মিলতে পারে, আবার না–ও মিলতে পারে। এখানো তো আর ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে না। তাই কৃতিত্ব দাবি করা বা হতাশায় মুষড়ে পড়ার ব্যাপার থাকবে না। বিশ্বকাপ জমে গেলেই খুশি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা