১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধন্যবাদ মেসি, ধন্যবাদ আর্জেন্টিনা...

মেসি, আর্জেন্টিনা, ফুটবল, ফিলিস্তিন
মেসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) - সংগৃহীত

ধন্যবাদ, ধন্যবাদ মেসি, ধন্যবাদ আর্জেন্টিনা। ইসরাইলের সাথে প্রীতি ম্যাচটি বাতিল করার পর এভাবেই ফুটবল রাজপুত্র লিওনেল মেসি ও আর্জেন্টিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ)। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আগামী শনিবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ম্যাচটি খেলার কথা ছিল আর্জেন্টিনার। সেই ম্যাচটি যাতে মেসিরা বাতিল করে তার জন্য অনুরোধ করে আসছিল ফিলিস্তিনিরা। অবশেষে রাজনৈতিক চাপের মুখে ম্যাচটি বাতিলের ঘোষণা দেয় আর্জেন্টিনা। স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েইন ইএসপিএন স্পোর্টসকে ম্যাচ বাতিলের কথাটি জানিয়েছেন। তিনি জানান, 'শেষ পর্যন্ত তারা সঠিক কাজটি করেছে।'

এ ঘোষণার পরই উল্লাসে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা। পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে পিএফএ এক বিবৃতিতে আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার লিওনেল মেসি এবং তার সতীর্থদের ধন্যবাদ জানায়।

ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জিবরিল রজব বলেছেন, 'মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং খেলা জয়লাভ করেছে এবং এ ম্যাচ বাতিলের মাধ্যমে ইসরাইলকে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়েছে।'

এদিকে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমে এ ম্যাচ বাতিলের খবর প্রকাশ করার পর ইসরাইলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এর আগে পশ্চিম তীরে লিওনেল মেসির একটি পোস্টারে লেখা হয়েছিল, "আপনি একটি দখলকৃত জায়গায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। মানবতার পক্ষে দাঁড়ান।"

এ ম্যাচ বাতিলের আগে রজব ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা যাতে লিওনের মেসির ছবি এবং নকল জার্সিতে অগ্নিসংযোগ করে।

ফিলিস্তিনি ক্যাম্পেইন গ্রুপ আভাজ এ ম্যাচ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল।

গত সোমবার পিএফএ সভাপতি জিব্রিল রজব জেরুসালেমের টেডি স্টেডিয়ামকে ভেন্যু নির্ধারণের প্রতিবাদে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন এবং বিশ্ব ফুটবলের মূল সংস্থা ফিফার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাতে রজব বলেছিলেন, 'ইসরাইল খেলাকেও রাজনীতিকরণ করেছে। ৯ ‍জুন টেডি স্টেডিয়ামে ইসরাইল যে প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করেছে সেটি সম্পূণ অনৈতিক।'

তিনি বিবৃতিতে আরো বলেন, 'যেখানে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১৯৪৮ সালের আগে এই স্থানে ফিলিস্তিনের গ্রাম ছিল। সেখান থেকে এর অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে ইসরাইলে এই এলাকা দখল করেছিল। ইসরাইল একটি দখলদার বাহিনী। তারা অপশক্তির প্রয়োগ করছে। এরা বৈশ্বিক মূল্যবোধের লঙ্ঘন করে আসছে। ইসরাইল খেলার মূলনীতিরও বিরোধী। এই ম্যাচের কারণে আর্জেন্টিনাকে তার খেলোয়াড়ি এবং নৈতিকতার বিষয়ে মূল্য দিতে হবে। ইসরাইল ‘ইহুদিদের জন্য অখন্ড জেরুসালেম’ বলে আর্জেন্টিনার জনগনকে ভুল বুঝাচ্ছেন।'

তাদের অনুরোধ রেখে ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা আসার পর আর্জেন্টিনার সিদ্ধান্তকে' সাহসী নৈতিক সিদ্ধান্ত' হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা।

আভাজ ক্যাম্পেইন গ্রুপের পরিচালক অ্যালিস জে বলেছেন, 'এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে জেরুসালেমে খেলার সাথে বন্ধুত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ এর কয়েক মাইল দূরে ইসরাইলি বন্দুকধারীরা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনদের গুলি করে মারছে।'

বিশ্বকাপের আগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছিল আর্জেন্টিনার জন্য সর্বশেষ প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ। পশ্চিম জেরুসালেমের একটি স্টেডিয়ামে এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।

জেরুসালেম ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের জন্য খুবই স্পর্শকাতর জায়গা।

পুরো জেরুসালেমকে ইসরাইল মনে করে অবিভক্ত রাজধানী। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুসালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে মনে করে।

আর্জেন্টিনা এবং ইসরাইলের মধ্যকার ম্যাচটি প্রথমে হাইফা শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি পশ্চিম জেরুসালেমে সরিয়ে আনা হয়। এ সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ করেছিল ফিলিস্তিনিদের।

সাম্প্রতি ফিলিস্তিনদের বিক্ষোভের সময় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ১২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার গাজা সীমান্তে আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় রাজান আশরাফ আল নাজার নামে একজন ফিলিস্তিনি নার্স নিহত হন। ২১ বছর বয়সী নিহত নাজার স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনেস এলাকায় এ ঘটনার শিকার হন তিনি।

বিক্ষোভ চলার সময় আহত একজনকে চিকিৎসা দিতে ইসরাইল সীমান্তের কাছে ছুটে যান নাজার। সেখানেই ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। নাজার চিকিৎসা পেশাজীবীদের মতো সাদা পোশাক পরে ছিলেন। তার ওপর তিনি ইসরাইলি সেনাদের উদ্দেশে দুই হাত উপরে তুলে সঙ্কেতও দিয়েছিলেন। তার পরও ইসরাইলি সেনারা তার ওপর গুলি চালায়। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাজার। এই ঘটনায় উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়।

উল্লেখ্য, গতমাসে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে আনার মাধ্যমে শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

সূত্র : গোল ডট কম, ইএসপিএন, বিবিসি ও রয়টার্স

 

আরো পড়ুন : ধীরে চলো ‘মাস্টারপ্ল্যান’ আর্জেন্টিনার

৩২ ট্রফি ইতোমধ্যেই জিতেছেন বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে। আর্জেন্টাইন জার্সিতে অলিম্পিক স্বর্ণ ও যুব বিশ্বকাপের মেডেলও শোভাবর্ধন করছে তার শোকেসে। গ্রিনিজ বইয়ের রেকর্ড তালিকায় জায়গা হয়েছে মেসির ফুটবল ক্যালেন্ডারের এক মওসুমে সর্বোচ্চ গোল করার কৃতিত্ব। তবে সিনিয়র ফুটবলের পেশাদার প্রতিনিধি হিসেবে সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ট্রফি বিশ্বকাপে এখনো হাত রাখার সৌভাগ্য জোটেনি আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরের তিলকে। দরজার কড়া নাড়তে থাকা রাশিয়া টুর্নামেন্টে কী ঘটতে চলেছে মেসি অ্যান্ড কোংয়ের ভাগ্যে? এই মুহূর্তে কেউই ওই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নন। সমালোচকেরাও অপেক্ষার পথ বেছে নিয়েছেন। সম্প্রতি খোদ লায়নেল মেসিই নিশ্চিত করেন ফুটবলের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগিতার মঞ্চ আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপের ফেবারিটের তালিকায় আর্জেন্টাইনদের অনুপস্থিতি। কিন্তু শিরোপা উৎসবই যে লাতিন জায়ান্টদের সর্বাগ্রে রয়েছে তা-ও খোলামেলা প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টাইন সেনসেশন।

বিশ্বকাপের ২১তম আসরের মাঠের লড়াইয়ের সূচনার ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে ফুটবল দুনিয়া। ভক্তদের মধ্যকার উত্তাপও বাড়ছে হু-হু করে। রাশান বিশ্বকাপের চলমান উত্তেজনায় নতুন গতির সঞ্চার করল নিউইয়র্ক ভিত্তিক আলোচিত ম্যাগজিন পেপারম্যাগ। প্রকাশনাটির প্রথম ক্রীড়া সংস্করণের প্রচ্ছদ্যের গোয়াট (জিওএটি) ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ ফুটবলার হিসেবে মেসির উপস্থিতি মুহূর্তেই হট কেকে পরিণত হয়েছে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের। জীবন্ত ছাগল ছানার সাথে বিরল ফটোসেশনের পাশাপাশি একজন আর্জেন্টাইন হিসেবে আসছে বিশ্বকাপ নিয়েও দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেন বার্সা সুপারস্টার। আধুনিক ফুটবলের অন্যতম বিম্ময় মেসির কথোপকথনের চৌম্বুক অংশ নিয়েই এই প্রতিবেদন :

পেপারম্যাগ : আপনিই বিশ্বের সেরা ফুটবলার?
মেসি : কখনো নিজেকে সেরা হিসেবে কল্পনাও করিনি। আমিও আরেকজন সাধারণ ফুটবলারের মতো। মাঠে যখন খেলার সূচনা হয় আমরা প্রত্যেকেই সমান।

পেপারম্যাগ : অনেক কিছুই জিতেছেন। আরো জেতার আকাক্সক্ষা অনুভব করেন?
মেসি : প্রতিটি নতুন দিনকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। সর্বদা চেষ্টা করি নিজেকে হারিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার। পেশাদার ক্যারিয়ারের সূচনা থেকে এখনো পর্যন্ত ওই এক ফর্মুলাতেই অতিবাহিত হচ্ছে আমার দিনগুলো।

পেপারম্যাগ : রাশিয়া বিশ্বকাপের টার্গেট?
মেসি : প্রথমত পারফেক্ট প্রস্তুতি সম্পন্ন করার রেসে সাফল্য প্রয়োজন। দল হিসেবে আমাদের আরো বেশি সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। জার্মানি, ব্রাজিল কিংবা স্পেনের মতো দলগুলোর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে। পজেটিভ অনেক কিছুই রয়েছে যা, ফুটবলারদের প্রেরণা জোগাবে উজ্জীবিত পারফরম্যান্স প্রদর্শনে। নিঃসন্দেহে দারুণ এক দল রয়েছে আমাদের। বাস্তবতা বলছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই বিশ্বকাপে অংশ নেয় ব্রাজিল। এক্ষেত্রে বাছাইপর্বে কী ঘটেছে তা কোনো বিবেচ্য নয়। আমরাও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি শিরোপা জেতার জন্য। রাশিয়াতে সতর্ক সূচনা নিশ্চিতের পর শক্তিশালী দল হিসেবে উদ্ভাসিত হতে চায় আর্জেন্টিনা।

পেপারম্যাগ : প্রাণী জগতের প্রতি কোনো টান অনুভব করেন?
মেসি : প্রাণিজগতের ওপর আমার বিশেষ মমতা রয়েছে। জন্মগতভাবেই পেয়েছি। বেড়ে উঠেছি প্রাণিজগতের পাশাপাশি অবস্থানের মধ্য দিয়ে। তাদের কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছু। এই মুহূর্তে আমার পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ সবার প্রিয় কুকুর, হল্ক। সে সর্বদা আমাদের ছবির মতো অনুসরণ করে।

পেপারম্যাগ : মাতৃভূমির জনগণ ও আর্জেন্টাইন ভক্তদের কাছে প্রত্যাশা?
মেসি : একজন আর্জেন্টাইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য দৃঢ় আত্মবিশ্বাস। পরিস্থিতি যতই প্রতিকুল হোক না কেন, হাল ছেড়ে দেয়ার দলভুক্ত নই আমরা। ব্যর্থতা আমাদের স্বপ্ন পূরণের সঙ্কল্প আরো দৃঢ় করে দেয়। কাক্সিক্ষত যেকোনো বিষয়ে সাফল্যের আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আর্জেন্টাইনদের রক্তে মিশে রয়েছে। সত্য বলতে কী একত্রিতভাবে যেকোনো পরিস্থিতি উৎরে সাফল্যের উৎসবে মেতে ওঠার সামর্থ্য রয়েছে আমাদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে টিম আর্জেন্টিনার প্রত্যেক ফুটবলারের মূল প্রেরণার কারণও হবে ওই বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি বুঝেছি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোকে একমাত্র অবলম্বন বানিয়ে ফেলা পুরোপুরিই বোকার কর্ম। এতে নিজের ওপর চাপ বেড়ে যায়, আর কমে যায় স্বপ্ন পূরণে সাফল্যের সম্ভাবনা।


আরো সংবাদ



premium cement