২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সমালোচনার ঝড়, মুখ খুললেন রামোস

সালাহ-রামোস
সার্জিও রামোসের সাথে চ্যালেঞ্জে সালাহ বাম কাঁধে গুরুতর আঘাত পান - সংগৃহীত

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের একাধিক তারকাকে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন লিভারপুলের এবারের মৌসুমের সুপারস্টার মোহাম্মদ সালাহ। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে কাল মাত্র ৩০ মিনিট মাঠে ছিলেন এই মিসরীয় তারকা। রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোসের সাথে চ্যালেঞ্জে সালাহ বাম কাঁধে গুরুতর আঘাত পান। এ ঘটনায় এখন সালাহ ভক্তদের কাছে ভিলেন রামোস। সমালোচনার ঝড় উঠেছে তাকে নিয়ে।

এ নিয়ে কী বলেছেন তিনি?

ম্যাচ শেষে টুইট করেছেন রামোস। লিখেছেন, ‘অনেক সময় ফুটবল তোমাকে ভালো দিক দেখাবে, আবার কোন সময় খারাপ দিক। সর্বোপরী আমরা সবাই সতীর্থ। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো সালাহ, ভবিষ্যত তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

শনিবার কিয়েভে মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে পরাজিত হয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় লিভারপুলের। সেই সাথে সালাহর ইনজুরি নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে অল রেডদের।

মিসরীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সূত্র মতে, ২৫ বছর বয়সী সালাহ’র কাঁধে লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারা আশা করছেন বিশ্বকাপের আগেই দ্রুত সুস্থ হবে তিনি।

 

'সালাহ যখন কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছিলেন, রামোস তখন শয়তানের মতো হাসছিলেন'

কোনো কিছুই এখন মানুষের চোখ এড়ায় না। কিন্তু চোখ তো প্রমাণ রাখতে পারে না, যা পারে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায়বন্দি হলো, রামোসের কুৎসিত হাসি। মোহাম্মদ সালাহ যখন ঘাড়ের যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন কুৎসিতভাবে হাসছিলেন তিনি। সেই হাসি বন্দি হয়েছে ক্যামেরায়। আর এখন দেখেছে সারাবিশ্ব।

সালাহকে মাঠে ফেলে দেয়ার পর হাত সরিয়ে নেন সার্জিও রামোস। রেফারিকে বলেন, তিনি নির্দোষ। তা-ই মেনে নেন রেফারি।

ফিজিও এসে সালাহকে দেখে মাঠের বাইরে নিয়ে যান, তখন ক্যামেরা তাক করা ছিল রামোসের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া নেয়ার চেষ্টা। তা পেয়েও যান ক্যামেরাম্যান। সালাহকে মাঠ ছাড়তে দেখে কুৎসিতভাবে হাসতে থাকেন রামোস।

এই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ফুটবলবিশ্ব ধিক্কার দিচ্ছে এই রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়কে। তাকে ভিলেন বলে সম্বোধন করা হচ্ছে।

গ্যালারি শুদ্ধ মানুষ যখন সালাহর জন্য কাঁদছেন, তখন স্বস্তির হাসি হাসছিলেন রামোস। যেন পথের কাটা দুর করে তৃপ্ত তিনি।

টুইটারে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একজন সমালোচনা করে বলেছেন, 'সালাহ যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, শয়তানের মতো হাসছিলেন রামোস।'

আরেকজন টুইট করেছেন, 'রামোস দেখতে তখন জঘন্য লাগছিল।'

ক্ষুদ্ধ আরেকজন বলেন, 'আমি ভাবতেই পারছি না রামোস কীভাবে এমন একটা কাজ করলেন?'

রামোসকে ধিক্কার জানিয়ে একজন লিখেছেন, 'বাজে কাজ করেছেন রামোস। সে ভয়ঙ্কর একজন খেলোয়াড়।'

 

লিভারপুলকে কাঁদিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা মাদ্রিদের

বদলি বেঞ্চ থেকে উঠে এসে পরপর দুই গোল করে লিভারপুলের বিপক্ষে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছেন ওয়েলস তারকা গ্যারেথ বেল। তার এই দুই গোলের সাথে বেনজেমার এক গোলে কিয়েভে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মাদ্রিদ ৩-১ গোলে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখায়।

মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে বেল দুর্দান্ত ওভারহেড কিকের সাহায্যে ৬৪ মিনিটে রিয়ালকে ২-১ গোলে এগিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে অবশ্য লিভারপুল গোলরক্ষক লোরিস কারিয়াসের হেঁয়ালির সুযোগে করিম বেনজেমা দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর সাথে সাথে রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও রিয়ালের এই লিড বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সাদিও মানে চার মিনিটের মধ্যে অল রেডদের হয়ে সমতা ফিরিয়েছিলেন। তবে বেল যাদু তখনো বাকি ছিল। ৮৩ মিনিটে কারিয়াসের আরেকটি ভুলে বেলের দুর পাল্লার শট জালে জড়ালে রিয়ালের জয় নিশ্চিত হয়।

যদিও প্রথমার্ধে দলের তারকা স্ট্রাইকার মোহামেদ সালাহর ইনজুরি লিভারপুলকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছিল। ম্যাচের ৩০ মিনিটে রামোসের সাথে চ্যালেঞ্জে কাঁধে আঘাত লেগে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন প্রিমিয়ার লীগের এবারের মৌসুমের বর্ষসেরা খেলোয়াড়।

অথচ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুল জায়গা করে নেয়ার পর থেকেই মাদ্রিদকে ছাপিয়ে অনেকটাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন সালাহ। এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত পারফরমেন্সই তাকে ফাইনালে আগে সবার থেকে এগিয়ে রেখেছিল। যদিও দূর্ভাগ্যকে সঙ্গী করেই ফাইনাল শেষ করতে হয়েছে সালাহকে।

তবে প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন মাদ্রিদ বস জিনেদিন জিদান। ম্যাচ শেষে জিদান বলেছেন, ‘এই ধরনের দল নিয়ে আমরা অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারি। কিন্তু পরপর তিনবার শিরোপা জেতা, সত্যিই এক বিশেষ অর্জন।’

১৯৭৬ সালে বায়ার্ন মিউনিখের পরে প্রথম দল হিসেবে মাদ্রিদ হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করলো। গত পাঁচ বছরে এটি তাদের চতুর্থ শিরোপা, সব মিলিয়ে ১৩তম যা একটি রেকর্ড।

এদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ক্যারিয়ারের পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয় করলেন। যদিও কাল শিরোপা জেতার পরে তাকে নিয়ে মাদ্রিদ ছাড়ার জোড় গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তার কথাতেই অবশ্য কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, ‘রিয়াল মাদ্রিদের সময়টা দারুণ কেটেছে।’

তবে সবাইকে পিছনে ফেলে কালকের রাতটা শুধুমাত্র বেলের হয়েই থাকবে। নিজের দেয়া প্রথম গোলটিকে ক্যারিয়ারের সেরা গোল বলবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ওয়েলসম্যান বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি এটাকে এগিয়ে রাখবো। এত বড় মঞ্চে এই ধরনের গোল পাওয়া অনেকটা স্বপ্ন সত্যি হবার মতই ঘটনা।’

যদিও এবারের মৌসুমে রিয়ালের হয়ে মূল একাদশে মোটেই নিয়মিত ছিলেন না বেল। ম্যাচ শেষে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে বিবেচনা করার কথা স্বীকার করেছেন বেল, ‘আমি মনে করি প্রতি সপ্তাহে অবশ্যই আমার খেলা উচিত। আর তা যদি না হয় তবে আমাকে বিকল্প কিছু চিন্তা করতেই হবে। খুব শিগগিরই আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করবো।’

কালকের ম্যাচে অবশ্য বেলের মূল একাদশে খেলার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইসকোর কাছে তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। গত বছর জুভেন্টাসের বিপক্ষে ফাইনালেও এই ঘটনা ঘটেছিল।

দ্বিতীয়ার্ধে গোলরক্ষক কারিয়াসের ব্যর্থতায় দলের পরাজয় এবং একইসাথে সালাহ’র কান্নাজড়িত বিদায়- এসবই লিভারপুলের জন্য তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। ২৫ মিনিটে সার্জিও রামোসের সাথে চ্যালেঞ্জে বাম কাঁধে আঘাত পেয়ে সালাহ ইনজুরিতে পড়েন। পাঁচ মিনিট পরে এ্যাডাম লালানার কাছে জায়গা ছেড়ে দিয়ে তিনি মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন। ইনজুরির মাত্রা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও আসন্ন বিশ্বকাপকে সামনে রেখে লিভারপুল বস ইয়র্গেন ক্লপ কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি।

এ প্রসঙ্গে ক্লপ বলেন, ‘আমরা সবকিছু চেয়েছি, কিন্তু কিছুই পাইনি। আমরা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে হারিয়েছি, মিসরের বিশ্বকাপ দলের জন্যও সে গুরুত্বপূর্ণ।’

সালাহর পরে ৩৭ মিনিটে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়েন ডানি কারভাহাল। স্প্যানিশ এই ডিফেন্ডারও কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ত্যাগ করেন। বিশ্বকাপে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সালাহ চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই লিভারপুলের দিকেই ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই ম্যাচের চিত্র পাল্টাতে থাকে। ৪৩ মিনিটে ইসকোর ক্রস থেকে রোনালদোর হেড কারিয়াসের হাত ঘুড়ে ফিরতি বলে বেনজেমা গোল করলেও অফ-সাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইসকোন শট গোল বারে লেগে ফেরত আসে। কিন্তু ৫১ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। যদিও এই গোলের জন্য কারিয়াসকে হয়ত কখনই ভুলবে না লিভারপুল। সতীর্থদের দিকে বল বাড়াতে গিয়ে পাশে দাঁড়ানো বেনজেমার পায়ে বল জমা পড়ে। হঠাৎ করে এমন একটি বল পেয়ে তারকা ফ্রেঞ্চম্যান কোনো ভুল করেননি।

কারিয়াসের এই হেঁয়ালিই লিভারপুলকে পিছিয়ে দেয়। যদিও দ্রুতই লিভারপুল ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিল। জেমস মিলনারের কর্ণার থেকে ডেজান লোভরেনের হেডে মানে বল জালে জড়ান। কিন্তু বেল মাঠে নামার সাথে সাথে লিভারপুলের সব আশা শেষ হয়ে যায়। মার্সেলোর ক্রস থেকে প্রায় ১৫ গজ দুর থেকে ওভারহেড কিকে তিনি কারিয়াসকে পরাস্ত করেন। এরপর ৮৩ মিনিটে আবারো তার দুরপাল্লার শট কারিয়াস ধরতে গিয়ে হাত ফসকে জালে জড়ায়।


আরো সংবাদ



premium cement