ফুটবল না, কুস্তি করতে নেমেছিল রোনালদোরা
- গোল ডট কম
- ২৭ মে ২০১৮, ১২:০৬, আপডেট: ২৭ মে ২০১৮, ১২:১১
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুটা ভালোই ছিল। রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ আর সালাহর লিভারপুল লড়ে যাচ্ছিল। বল নিজেদের দখলে বেশি রাখছিলেন সালাহরা। কয়েকবারই রিয়ালের জালে আক্রমণ চালিয়েছে তারা। তাতেই হয়ত আতঙ্ক জেকে ধরেছিল রোনালদোদের। এরপর তাদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলেন লিভারপুলের প্রাণভোমরা সালাহ। বার বার তাকে আক্রমণ করা হচ্ছিল। একটা পর্যায়ে তারা এ কাজে সফলও হয়। সার্জিও রামোস সালাহর হাত এমনভাবে আটকান যে, মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সালাহ। হাত বাঁকিয়ে চাপা পড়ে তার শরীরেই। ব্যাথায় ছটফট করেন সালাহ। তখন রামোস নির্দোষ ভাব করে সরে পড়েন। রেফারিও টু শব্দ করেন না। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত লিভারপুল বস ক্লপ। ম্যাচ শেষে বলেন, 'মনে হচ্ছিল কুস্তি হচ্ছে।'
প্রথমার্ধেই কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন সালাহ। চোট পেয়েও মাঠে নেমেছিলেন সালাহ। কিন্তু টিকতে পারেননি। ব্যাথায় ককিয়ে উঠে মাঠে লুটিয়ে পড়েন। পুরো গ্যালারি তখন স্তব্ধ!
সবাই দৌড়ে এসে সালাহকে ঘিরে ধরলেন। সালাহকে উঠে দাড় করালেন, কথা বললেন। এরপর অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন সালাহ। লিভারপুলকে স্বপ্নের শিরোপাটা উপহার দেয়া হলো না।
ওইদিকে গ্যালারিতে সালাহ-ভক্তরা কেউ মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন। কেউ চোখ মুছছেন। আর সালাহ...। সালাহ কাঁদছেন...।
এই ঘটনার পর কার্যত ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় লিভারপুলের। ৩-১ ম্যাচ জিতে নেয় রিয়াল।
ম্যাচ শেষে লিভারপুল বস তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, 'আমি জানি, এ ধরণের একটি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর কিছু বললে, সবাই ব্যর্থতার বুলি আওড়াচ্ছি বলবেন। তবুও বলছি, ম্যাচটি কিছুটা কুস্তির মতো হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে সালাহ ঘাড়ে মারাত্মক চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন।'
তিনি আরো বলেন, 'যা হয়েছে তা কাম্য ছিল না। ছেলেরা এই ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেছে। তারা হতাশায় ডুবি গিয়েছিল, সেই সুযোগটাই রিয়াল কাজে লাগিয়েছে।'
টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় রিয়াল মাদ্রিদের
গ্যারেথ বেলের দুই গোলে - যার মধ্যে একটি চোখ ধাঁধানো ওভারহেড কিক ছিল -রিয়াল মাদ্রিদ লিভারপুলকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে।
ম্যাচের প্রথমার্ধেই ঘাড়ে চোট পাওয়ায় মাঠ ছাড়েন লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ।
লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিয়ুসের হাস্যকর এক ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে করিম বেনজেমা গোল করলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় রিয়াল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে গোল করে লিভারপুলকে সমতায় ফেরান সাদিও মানে।
তবে বদলি হিসেবে মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়ালকে আবার এগিয়ে নেন গ্যারেথ বেল। তার ওই গোলকে মনে করা হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলগুলোর একটি।
লিভারপুলের ষষ্ঠ ইয়োরোপিয়ান কাপের স্বপ্নভঙ্গ হয় গোলরক্ষক কারিয়ুসের আরেকটি ভুলে। গ্যারেথ বেলের দূরপাল্লার শট বুঝতে ভুল করে নিজের জালেই বল জড়ান এই জার্মান গোলরক্ষক।
শেষপর্যন্ত ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে জয়ে ১৩তম ইয়োরোপিয়ান কাপ শিরোপা নিশ্চিত করে রেয়াল মাদ্রিদ।
৪২ বছরে প্রথমবার - পরিসংখ্যান
বায়ার্ন মিউনিখের (১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬) পর প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা তিনবার ইয়োরোপিয়ান কাপ/চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলো রেয়াল মাদ্রিদ।
তিনটি ইয়োরোপিয়ান কাপ/চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা তৃতীয় ম্যানেজার জিনেদিন জিদান (বব পেইসলি ও কার্লো অ্যানচেলত্তির পর)। তবে টানা তিনবার এই শিরোপা জেতা একমাত্র ম্যানেজার তিনি।
ম্যানেজার হিসেবে খেলা সাতটি মেজর ফাইনালের ছয়টিতেই হেরেছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ।
বদলি হিসেবে নেমে ইয়োরোপিয়ান কাপ/চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে দুই গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল।
বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিট দুই সেকেন্ড পর গ্যারেথ বেল গোল করেন যা ১৯৯৭ এ য়ুভেন্টাসের বিপক্ষে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের লার্স রিকেনের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে কোনো বদলি খেলোয়াড়ের দ্রুততম গোল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ/ইয়োরোপিয়ান কাপ ফাইনালে দুই গোল করা দ্বিতীয় বৃটিশ খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল। ১৯৬৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ববি চার্লটন দুই গোল করেছিলেন।
লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের প্রথম দল যাদের তিনজন খেলোয়াড় এক মৌসুমে ১০টি বা তার বেশি গোল করেছে (সালাহ ১০, ফিরমিনো ১০, মানে ১০)
কেন সালাহ'র সাথে তুলনা করা হচ্ছে মেসি-রোনালদোকে?
বর্তমান ফুটবলবিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মিসরের রাজপুত্র মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের হয়ে ৪৪টি গোল করেছেন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে সেরা এই মুসলিম সুপারস্টার। গুঞ্জন উঠছে, তার হাতে এবার শোভা পেতে পারে ব্যালন ডি'অর। তুলনা করা হচ্ছে ফুটবল রাজপুত্র লিওনেল মেসি ও রিয়ালের মধ্যমণি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। কিন্তু কেন এই তুলনা? প্রশ্ন তুলেছেন সালাহ'র লিভারপুল বস জারগেন ক্লপ।
তার মতে, 'চলতি মৌসুমে সালাহ'র পারফমরমেন্স দুর্দান্ত ছিল, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই বলে মেসি আর রোনালদোর সাথে সালাহ'র তুলনা চলে না।'
ব্রিটিশ পত্রিকা এক্সপ্রেসকে ক্লপ বলেন, 'সালাহ চলতি মৌসুমে দারুণ খেলেছেন। কিন্তু রোনালদো এমন আরো ১৫টি দুর্দান্ত মৌসুম খেলেছেন। আমরা কেন সালাহ'র সাথে তাদের তুলনা করব? পেলের পারফরমেন্স চোখধাঁধিয়ে দিত, কিন্তু পেলের সাথে কোনো খেলোয়াড়ের তুলনা কেউ কখনো করেনি। এখন আমাদের আছে মেসি-রোনালদোর মতো সুপারস্টার ফুটবলার, যারা কয়েক বছর ধরে ফুটবলবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের এখন শেষ সময়। ঠিক সময় লক্ষ্যে পৌঁছানোটা খুব জরুরি।'
তিনি আরো যোগ করেন, 'মেসি-রোনালদোর হাতে এক দশক ধরে ব্যালন ডি'অর শোভা পাচ্ছে। তারাই এর যোগ্য।'
লিভারপুল বস বলেন, 'যখন তারা খেলা ছেড়ে দিবেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত, তাদের অভাব আমরা অনুভব করব। আমি চাই না, মেসি-রোনালদোর সাথে সালাহকে তুলনা করা হোক।'
শেষটা এভাবে টানেন ক্লপ, 'সব সময় একজনকে সেরা বানিয়ে আলাদা করা উচিত নয়। আসল কথা হলো, ভালো ফুটবল খেলা এবং এর জন্য সবাইকে প্রয়োজন, একসাথে।' (২০ মে ২০১৮ প্রকাশিত সংবাদ)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা