২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোনাজাত করে মাঠে ঢুকেছিলেন সালাহ

সালাহ
মোহাম্মদ সালাহ - সংগৃহীত

ফাইনাল শুরুর আগেই উত্তেজনার তুঙ্গে ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। কারণ বর্তমান ফুটবলবিশ্ব কাঁপানো মিসরের রাজপুত্র মোহাম্মদ সালাহর প্রতিপক্ষ ছিল রিয়াল মাদ্রিদের প্রাণভোমরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। যার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৮ গোলের রেকর্ড ভেঙেছিলেন সালাহ। এক মৌসুমে সালাহর গোল ৪৪টি। তাই ফাইনাল ম্যাচটি নিয়ে আগ্রহ ছিল ফুটবলবিশ্বের। মাঠে নামার আগে চাপে ছিলেন রোনালদো, সেটা তার মুখ দেখে যে কেউ অনুমান করতে পারবে। অপরদিকে নির্ভার ছিলেন সালাহ। স্বভাবজাত হাসি মুখেই ছিলেন তিনি। ধর্মপ্রাণ সালাহ মুসলিম-অমুসলিম সবারই ছিলেন চোখেরমণি। মাঠে নেমে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর রেফারির বাশি বাজার আগ মুহূর্তে মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন তিনি।

হাইভোল্টেজ ম্যাচটিতে সবার আগ্রহ ছিলে রোনালদো আর সালাহর দ্বৈরথ দেখার। তাই গ্যালারিতে উপচে পড়া দর্শক। ম্যাচ শুরুর আগে রোনালদো অনেক চাপে ছিলেন, প্রতিনিয়ত তার সাথে তুলনা করা হচ্ছিল সালাহর। ম্যাচের দিন কয়েক আগে তিনি বলেই দিয়েছিলেন, সালাহর সাথে তার তুলনা কী করে হয়? 'সালাহ বাম পায়ে খেলেন আর তিনি ডান পায়ে। তিনি লম্বা আর সালাহ খাটো।'

লিভারপুল বস ক্লপও বার বার রোনালদোর সাথে সালাহর তুলনা করতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ সালাহর মাত্র শুরু আর রোনালদো অনেক অভিজ্ঞ।

ম্যাচ শুরুর আগে তাই উত্তাপ আঁচ করা ছিল সহজ। সেই ম্যাচে মাঠে নামার আগে সাবলীল ছিলেন সালাহ। হাসি লেগেই ছিল মুখে। ম্যাচ শুরুর আগে মহান আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে মোনাজাত করেন সালাহ। তারপর খেলা শুরু করেন তিনি। রিয়ালের জালে একের পর এক আক্রমণ চালায় সালাহরা। কিছু সময়ের জন্য বল বাগে পেলেও তা ছিনিয়ে নেয় লিভারপুল। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল।

কিন্তু ম্যাচটি সৌন্দর্য হারায় যখন রিয়ালের রামোস সালাহকে আটকাতে গিয়ে হাত ধরে হেঁচকা টান দেন। ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যান সালাহ। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ার সময় বাম হাতটি পড়ে যায় তার গায়ের নিচে। ফলে ব্যাথায় ককিয়ে উঠেন তিনি। হয়ত তখনই বুঝতে পারেন, কী হয়েছে তার। এই কাণ্ডের পর রামোস নিজেকে নির্দোষ বলে সরে পড়েন। রেফারিও তাকে ছেড়ে দেন।

গ্যালারি শুদ্ধ সালাহ ভক্তরা তখন মুখে হাত দিয়ে বসে পড়েন। এরপরও মাঠের বাইরে নেয়া হলেও ফিরে আসেন সালাহ। আশায় বুক বাধে ভক্তরা। কিন্তু এক মিনিটও টিকতে পারেননি তিনি। ব্যাথায় লুটিয়ে পড়েন। এরপর কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন সালাহ। শেষ হয় তার শিরোপা জয়ের লড়াই, শেষ হয় লিভারপুলেরও। বিউটিফুল গেম তার সৌন্দর্য হারায়...।

 

সালাহবিহীন ম্যাচ জিতে নিলো রিয়াল

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ। শনিবার দিবাগত রাতে ইউক্রেনের কিয়েভ অলিম্পিয়ক স্টেডিয়ামে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারায় রিয়াল। রিয়ালের হয়ে দুটি গোল করেন 
গ্যারেথ বেল। অপর গোলটি করেন করিম বেনজেমা।

দুই দলই প্রথমার্ধে একাধিক প্রচেষ্টা চালালেও তা ব্যর্থ হয়ে যায়। যে কারণে গোলশূন্যতেই শেষ হয় প্রথমার্ধ। তবে লিভারপুলের জন্য দুঃসংবাদটা বড়ই ছিল। দলটির মূল তারকা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ প্রথমার্ধের ৩০ মিনিটেই ওঠে যেতে হয়েছে। ২৫ মিনিটে সার্জিও রামোসের বাজে ট্যাকলে চোট পান তিনি। বেশ কিছুক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়েও স্বাভাবিক হতে না পেরে ফিজিওর পরামর্শে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়েন তিনি।

তাই দ্বিতীয়ার্ধে যে লিভারপুলের জন্য কঠিন কিছু অপেক্ষা করছিল তা অনুমান করা গিয়েছিল। হলোও তাই। ৫১ মিনিটে করিম বেনজেমা রিয়ালের পক্ষে গোলের সূচনা করেন। গোলরক্ষকের ভুলে হয় গোলটি। গোললাইনে বল ধরে নিজ দলের খেলোয়াড়কে বল দিতে আলতো করে সামনে বল বাড়িয়ে দেন লিভারপুল গোলরক্ষক। সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল করেন বেনজেমা।

চার মিনিটের ব্যবধানে সাদিও মানে খেলায় সমতা ফেরান। কর্নার থেকে পাওয়া বল থেকে হেডের সাহায্যে গোল করেন তিনি। তবে সমতা ভাঙতে বেশিক্ষণ প্রয়োজন হয়নি রিয়ালের। ৬৩ মিনিটে মার্শেলোর ক্রস থেকে পাওয়া বলে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে গোল করেন গ্যারেথ বেল।

৮৩ মিনিটে শেষ গোলটিও করেছেন এই ওয়েলস তারকা। ৩০ গজ দূর থেকে বেলের দুর্দান্ত শটটি লিভারপুল গোলরক্ষকের হাতে লাগলেও তিনি বেলকে গোলবঞ্চিত করতে পারেননি। তাই শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে জয় পায় দলটি।

 

তুলনা কীভাবে হয়? আমি লম্বা, সালাহ খাটো : রোনালদো

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের উত্তেজনা যেন আর সহ্য হচ্ছিল না রিয়াল মাদ্রিদের প্রাণভোমরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। শনিবার ফাইনালে তারা মুখোমুখি হচ্ছে মোহাম্মদ সালাহর লিভারপুলের বিপক্ষে। আর এই ম্যাচের উত্তেজনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে রোনালদো আর সালাহর তুলনা। যা নিয়ে অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন রোনালদো।

বিটি স্পোর্টসকে সিআর সেভেন বললেন, 'আমরা দু'জন একবারেই আলাদা। তুলনা কীভাবে হয়? সালাহ খেলে বাম পায়ে আর আমি ডান পায়ে। আমি লম্বা আর সালাহ আমার চেয়ে একটু খাটো।'

তিনি আরো বলেন, 'আমাদের দু'জনের মধ্যে কোনো মিল নেই। মানুষ আমার সাথে অন্য খেলোয়াড়দের তুলনা করে। কিন্তু আমার সাথে কারো তুলনা হয় না, আমি সবার চেয়ে আলাদা।'

রোনালদো বলেন, 'সালাহ অন্য আরেকজন খেলোয়াড়ের চেয়ে আলাদা। আমরা দু'জনেই আলাদা। কিন্তু সে চ্যাম্পিন্স লিগের এই মৌসুমে দুর্দান্ত খেলেছে, দুর্দান্ত। এখন অপেক্ষা শনিবারের। দেখা যাক সেদিন কী হয়।'

এককভাবে এর আগে চারবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন রোনালদো। আর দল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন তিনবার।

৩৩ বছর বয়সী এই রিয়াল তারকা বলেন, 'যদি প্রথমবারের মতো এইবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলতাম, তবুও আমি এতোটাই অনুপ্রাণিত হতাম। কারণ এটি ক্লাবফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রফি। আমি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি। আমরা দলের সবাই চাই আরো একবার ট্রফি ঘরে তুলতে।'

চলতি মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪৪টি গোল করেছেন সালাহ। এর মধ্য দিয়ে তিনি ভেঙেছেন রোনালদোর করা এক মৌসুমে ৩৮ গোলের রেকর্ড। এরপর থেকেই মূলত রোনালদোর সাথে সালাহর তুলনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেটা এতটাই যে, লিভারপুল বস পর্যন্ত এই বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।

তার মতে, 'চলতি মৌসুমে সালাহ'র পারফমরমেন্স দুর্দান্ত ছিল, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই বলে মেসি আর রোনালদোর সাথে সালাহ'র তুলনা চলে না।'

ব্রিটিশ পত্রিকা এক্সপ্রেসকে ক্লপ বলেন, 'সালাহ চলতি মৌসুমে দারুণ খেলেছেন। কিন্তু রোনালদো এমন আরো ১৫টি দুর্দান্ত মৌসুম খেলেছেন। আমরা কেন সালাহ'র সাথে তাদের তুলনা করব? পেলের পারফরমেন্স চোখধাঁধিয়ে দিত, কিন্তু পেলের সাথে কোনো খেলোয়াড়ের তুলনা কেউ কখনো করেনি। এখন আমাদের আছে মেসি-রোনালদোর মতো সুপারস্টার ফুটবলার, যারা কয়েক বছর ধরে ফুটবলবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের এখন শেষ সময়। ঠিক সময় লক্ষ্যে পৌঁছানোটা খুব জরুরি।'

তিনি আরো যোগ করেন, 'মেসি-রোনালদোর হাতে এক দশক ধরে ব্যালন ডি'অর শোভা পাচ্ছে। তারাই এর যোগ্য।'

লিভারপুল বস বলেন, 'যখন তারা খেলা ছেড়ে দিবেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত, তাদের অভাব আমরা অনুভব করব। আমি চাই না, মেসি-রোনালদোর সাথে সালাহকে তুলনা করা হোক।'

শেষটা এভাবে টানেন ক্লপ, 'সব সময় একজনকে সেরা বানিয়ে আলাদা করা উচিত নয়। আসল কথা হলো, ভালো ফুটবল খেলা এবং এর জন্য সবাইকে প্রয়োজন, একসাথে।'

যে সালাহর সাথে তুলনা নিয়ে রোনালদো আর লিভারপুল বসের এতো কথা, সেই সালাহ কিন্তু এখনো এ নিয়ে মুখ খুলেননি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের এখন বাকি আর দুই দিন। উত্তেজনার পারদ আরো চড়বে তা অনুমেয়।


আরো সংবাদ



premium cement