২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২৯ হাজার পৃষ্ঠার রায় নিয়ে বিপাকে আসামিপক্ষ

পিলখানা হত্যা মামলা
-

বহুল আলোচিত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হত্যা মামলার হাইকোর্টের রায়ের পর এখন আপিল আবেদন নিয়ে বিপাকে আসামিপক্ষ। এ মামলার ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার এ রায় নিয়ে দরিদ্র আসামিদের পক্ষে আপিল আবেদন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তারা জানান, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি স্ট্যাম্প ফলিওতে যদি কোর্ট ফি দিয়ে নিতে হয় তাহলে অধিক টাকার প্রয়োজন হবে। ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ে এটা যদি ফলিওতে যায় তাহলে এটা ৬০ হাজার পৃষ্ঠা হয়ে যাবে। প্রতি পৃষ্ঠা ১৪ টাকা করে হিসাব ধরলে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা প্রায়োজন। আর পুরো আপিল তৈরি করতে আরো বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে। এই বিপুল অর্থ ব্যয় করা দরিদ্র আসামিদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে কোর্ট ফি ছাড়া সাদা কাগজে রায় ফটোকপি করে দেয়া হলে খরচ অনেক কমে যাবে বলে আইনজীবীরা জানান।
পিলখানার বিডিআর হত্যা মামলায়, ১৩৯ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনের যাবজ্জীবনসহ ৫৫২ জনকে সাজা দিয়ে ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায় দেন হাইকোর্ট। বিশ্বের ইতিহাসে এত পৃষ্ঠার রায় এটিই প্রথম।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলছেন, আমরা রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাচ্ছি না। এখন যেটা সত্যায়িত অনুলিপি আছে তা স্ট্যাম্প ফলিওতে যদি কোর্ট ফি দিয়ে নিতে হয় তাহলে অধিক টাকার প্রয়োজন হবে। ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ে এটা যদি ফলিওতে যায় তাহলে এটা ৬০ হাজার পৃষ্ঠা হয়ে যাবে। প্রতি পৃষ্ঠা ১৪ টাকা করে হিসাব ধরলে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা প্রায়োজন। আর ফটো সার্টিফাইড কপি দিলে কোর্ট ফি দিয়ে তাতেও প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা যায়। আমরা একটা আবেদন করি রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর। সেখানে বলেছি, কোর্ট ফি ছাড়া সাদা কাগজে ফটোকপি করে দেয়া যায় কি না? তা হলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় হয়ে যাবে। ওই আবেদন পেন্ডিং আছে। আমরা এখনো সিদ্ধান্ত পাইনি। যেহেতু এখানে অনেক মানুষ। আপিলও অনেক হবে। এতগুলো সত্যায়িত অনুলিপি তাদের পক্ষে দেয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি আমাদের পক্ষে এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে আনা আমাদের দরিদ্র আসামিদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। আর ফলিও যদি কোর্ট ফি দিয়ে করতে হয় সেখানে ৯ লাখ টাকা প্রায়োজন হবে। এর সাথে নিম্ন আদালতের রায় ও অন্যান্য নথি যুক্ত হবে।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, এদের পক্ষে এই অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে কি না তা চিন্তার বিষয়। এটা সমাধানে প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলব। তিনি বলেন, অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ দরকার।
গত ৮ জানুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ‘ঘটনার পেছনের ঘটনা’ উদঘাটন করে জাতির সামনে প্রকৃত স্বার্থান্বেষী মহলের মুখোশ উন্মোচনের জন্য সুপারিশ করা হয়। রায় প্রদানকারী তিনজন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। একই সাথে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। মামলার ৪৯ আসামি খালাস পান।
৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা এ মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন জজ আদালত। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ১৮৫ জনকে। আর খালাস পান ৪৯ জন। বাকি ২৫৩ জনের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, দুইজনকে ১৩ বছর করে কারাদণ্ড, আটজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। খালাস পান ২৯ জন। এ ছাড়া ২৮ জনের বিষয়ে আপিল না হওয়ায় তাদের আগের ক্ষেত্রে জজ আদালতের দেয়া তিন থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রয়েছে।
এ মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন জজ আদালত। রায়ে নি¤œ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া অন্য এক আসামি মামলা চলাকালীন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
অন্য দিকে জজ আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আসামিদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে; আর হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন ১২ জন।
এ ছাড়া জজ আদালতে খালাস পাওয়া যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল, তাদের মধ্যে ৩১ জনকে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন ১৮৫ জন।
আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ২০১৫ সালে এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। দীর্ঘ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুই দিন ধরে এ মামলার রায় প্রদান করা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে (পিলখানা) সংঘটিত ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এরপর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর লালবাগের সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার করা হয়। বিচার শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো: আখতারুজ্জামান।


আরো সংবাদ



premium cement
লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ

সকল