ইস্কাটনে পাঁচতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ নিহত ৩
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
রাজধানীর মগবাজারে নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডে একটি পাঁচতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গেছে শিশুসহ তিনজন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিউ ইস্কাটন মগবাজার দিলু রোডে ৪৫/এ নম্বর পাঁচ তলা ভবনে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ভবনটির নিচ তলায় গ্যারেজে আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট গিয়ে সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সেখান থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেনÑ আবদুল কাদের (৪৫), আফরিন জান্নাত (১৭) ও শিশু এ কে এম রুশদী (৫)। চিকিৎসক ও পুলিশ বলছে, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে আবদুল কাদের ছাড়া বাকি দু’জনের শরীর একেবারে পুড়ে গেছে। তাদের চেনা যাচ্ছে না।
বাড়ির কেয়ারটেকার লুৎফর রহমান জানান, নিচ তলায় গাড়ির গ্যারেজ থেকে আগুন লাগে। পাঁচটি প্রাইভেটকার ও দু’টি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। তিনজন মারা গেছে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে বলে ধারণা করছি। তিনি বলেন, নিচতলায় আগুন লাগার পর আমি বাইরে বের হয়ে সবাইকে চিৎকার করে বের হতে বলি। কিন্তু সবাই গভীর ঘুমে ছিলেন। ততক্ষণে আগুন নিচ থেকে ওপরে উঠে যায়। প্রাণ বাঁচাতে অনেকে ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নামেন। আবার অনেকে আতঙ্কে ছুটাছুটি করতে গিয়ে সিঁড়িতে আটকা পড়েন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভবনের বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে ভবনে আগুন দেখতে পান তিনি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে বের হতে পারেননি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে, কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি জানাতে পারেননি।
পুড়ে অঙ্গার শিশু রুশদীর শরীর : হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন শহিদুল ও স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী। অপর দিকে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে তাদের আদরের শিশু সন্তান রুশদীর শরীর। একেবারে পুড়ে গেছে তার শরীর। শিশু এ কে এম রুশদীর বাবার নাম শহিদুল। মা জান্নাতুল ফেরদৌসী। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামে বাড়ি। তারা বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গতকাল ঢামেক মর্গে লাশ শনাক্ত করেন শিশুটির দাদা এ কে এম শহিদুল্লাহ। আগুনে শিশু রুশদীর মা-বাবা উভয়ই দগ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢামেক হাসপাতালে।
এ দিকে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আবদুল কাদেরের বাবার নাম মোহাম্মদ উল্লাহ। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামে তাদের বাড়ি। তিনি ওই ভবনের নিচ তলায় ক্ল্যাসিক ফ্যাশন নামে বায়িং হাউসের অফিস সহকারী ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী মরিয়ম বেগম। তারা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। কাদের তার কর্মস্থলেই থাকতেন। মর্গে তার স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন।
নিহত আফরিন জান্নাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২) পূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে চাকরি করেন। তার মা লাল বানু (৩৫) গৃহিণী। তারা ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকেন।
আফরিনের চাচা মো: সুরুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত হয়ে আফরিন সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামে। আর ওপর থেকে বাবা ও ভাই গ্রিল বেয়ে নামেন। তারা দু’জনেই সামান্য আহত হন। আফরিনের মা নামতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চাচা ও বাবার ধারণা, দগ্ধ কিশোরীটি তাদেরই মেয়ে। বাবা বলেন, আমরা ছাদ থেকে পাশের ভবনে লাফিয়ে পড়ি। আমাদের আগেই মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে চলে যায়। এটা আমারই মেয়ে।
হাতিরঝিল থানার এস আই খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্টালিন বলেন, নিহত তিনজনের মধ্যে শিশুসহ দুইজন পুরোপুরি পুড়ে গেছে, যা দেখে শনাক্ত করার মতো না। তাই পোড়া দুইজনেরই ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহের জন্য ফরেনসিক বিভাগকে বলা হয়েছে। আর আবদুল কাদের পোড়েননি। তিনি ধোঁয়ার কারণে মারা গেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুড়ে যাওয়া লাশের দাবিদার যারা, তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। একাধিক দাবিদার নেই। এ কারণে তাদের কাছেই দেয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তার কারণ জানতে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে তা বলা যাবে। এ দিকে তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফয়সালুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৭ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্বার করেছে। এ ছাড়া তিনজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা