২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২৫ শতাংশ পানির

ঢাকায় আবাসিকে ২৪.৯৭%, বাণিজ্যিকে ৭.৯৯%; চট্টগ্রামে আবাসিকে ২৫%, বাণিজ্যিকে ৯.৯৪%
-

বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট ও সরবরাহে জটিলতার মধ্যে দাম বাড়াল ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা। ঢাকা ওয়াসায় আবাসিক ক্ষেত্রে দাম প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) ১১.৫৭ টাকা থেকে ২ টাকা ৮৯ পয়সা বাড়িয়ে ১৪.৪৬ টাকা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৩৭.০৪ টাকা থেকে ২ টাকা ৯৬ পয়সা বাড়িয়ে ৩০.৩০ টাকা করা হয়েছে। ওয়াসার পানির দাম বছরে সাধারণত ৫ শতাংশ হারে বাড়ার নিয়ম থাকলেও এ দফায় আবাসিকে বাড়ানো হয়েছে ২৪.৯৭ শতাংশ। আর বাণিজ্যিকে বাড়ানো হয়েছে ৭.৯৯ শতাংশ।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসায় আবাসিক ক্ষেত্রে ৯.৯২ টাকা থেকে ২ টাকা ৪৮ পয়সা বাড়িয়ে ১২.৪০টা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ২৭.৫৬ থেকে ২ টাকা ৭৪ পয়সা বাড়িয়ে ৩০.৩০ টাকা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসায় ৫৯,০৪৭টি বিলযোগ্য সংযোগ রয়েছে যার মধ্যে ৯২ শতাংশ আবাসিক ও ৮ শতাংশ অনাবাসিক সংযোগ। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব সাঈদ উর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন ওয়াসার পানির প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ছয় টাকা। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গ্রাহক, বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মতামত নিতে গণশুনানির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢাকা ওয়াসার অধীনে জরিপে অংশ নেয়া ৪৪.৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বলেছেন তারা চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। ৫১.৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বলেছেন সরবরাহকৃত পানি অপরিষ্কার। ৪১.৪ শতাংশ বলেছেন সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত। ঢাকা ওয়াসার সেবার মান এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে ৩৭.৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতাই অসন্তুষ্ট। সেবাগ্রহীতাদের মতামত না নিয়ে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও সিস্টেম লস নিরসনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই একতরফাভাবে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর নামে অযৌক্তিকভাবে পানির দাম বাড়ানোর আগে ঢাকা ওয়াসার ক্রয় প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকপর্যায়ে মিটার রিডিংসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
এর আগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পানির দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ওয়াসা। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেয়া চিঠিতে ওয়াসা এই প্রস্তাব করে। আবাসিক ব্যবহারের জন্য প্রতি ইউনিট বা ১ হাজার লিটার পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বর্তমান দাম ৩৪ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ওয়াসা বলছে, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য পানির দাম বাড়ানো দরকার। এ ছাড়াও সংস্থাটির পরিচালনা খরচ বেড়েছে।
২০১৭ সালে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে পানির দাম যথাক্রমে ২২ এবং ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ওয়াসা আইন-১৯৯৬ এর ২৩ ধারা অনুযায়ী, ওয়াসা বোর্ড পানির দাম বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে বাড়াতে পারে। গত বছরও সংস্থাটি মুদ্রাস্ফীতির কথা বলে ৫ শতাংশ দাম বাড়ায়।
নগরবাসী বলছে, পানির দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে নগরবাসীর জীবনযাত্রার ওপর। পানির দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন। এতে পিষ্ট হবে স্বল্প আয়ের মানুষ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ওয়াসার সামগ্রিক সেবার মান ভালো না। কিছু জায়গায় তাদের সেবা ভালো হলেও বেশির ভাগ জায়গা, বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের সেবার মান খুব খারাপ। এই পরিস্থিতিতে প্রতি বছর পানির দাম বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।


আরো সংবাদ



premium cement