২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ এর লক্ষ্যমাত্রা

মাথাপিছু আয় সাড়ে ১২ হাজার ডলার

জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ; চরম দারিদ্র্য শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ; মানুষের গড় আয়ু ৮০ বছর
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

দারিদ্র্য নিরসন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) বা বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ এ। এতে মাথাপিছু আয় বর্তমান বাজারমূল্যে সাড়ে ১২ হাজার ডলার, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, চরম দারিদ্র্য শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, দারিদ্র্য হার ৫ শতাংশের নিচে করা। ওই সময়ে হতদরিদ্রের হার কমে শূন্যের ঘরে আনা হবে। আর মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হবে ৮০ বছর বলে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার (২০২১-৪১) বাস্তবায়ন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। পরে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব অধ্যাপক ড. শামসুল আলম পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বলছে, নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা চারটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তরের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হচ্ছেÑ সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন, বিকেন্দ্রীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। এই চারটি ভিত্তির ওপর স্থাপিত হবে উন্নত জাতি হিসেবে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রা। রূপকল্প-২০৪১ এর আওতায় বেশ কিছু মাইলফলক অভীষ্ট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই অভীষ্টসমূহ অর্জনে পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ জন্য চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। যার প্রথমটি হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। দারিদ্র্য নিরসনের কৌশলে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে যেসব নীতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ।
রূপকল্প ২০৪১ এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হবে। বর্তমান বাজারমূল্যে তখন মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি, যা বর্তমানে এক হাজার ৯০৯ ডলার। এটা হবে ডিজিটাল বিশ্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সোনার বাংলায় দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের কোনো বিষয়। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে হতদরিদ্র নির্মূল হবে (৩ শতাংশে নামলে নির্মূল বলা হয়)। আর ২০৪১ সালে হতদরিদ্রের হার কমে দশমিক ৬৮ শতাংশ হবে, যা বর্তমানে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০৪১ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এই হার বর্তমানে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। শিল্পায়ন এবং কাঠামোগত রূপান্তর, কৃষি খাতে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন, রফতানিমুখী উৎপাদন অর্থনীতি, টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, জ্বালানি ও টেকসই অবকাঠামো, জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করা এই রূপকল্পের অভীষ্ট।
রূপকল্প প্রতিবেদনে জিইডি বলছে, বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ২০৩০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে জিডিপির ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশে। আর ২০৪১ সালে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬ দশমিক ৮৮ শতাংশে। এই বিনিয়োগের মধ্যে সরকারি খাতের হার হবে ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতের হার ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বা এফডিআই হবে ৩ শতাংশ। যা বর্তমানে এক শতাংশ।
অন্য দিকে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমানে রাজস্বের পরিমাণ জিডিপির ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০৩০ সালে এটি বেড়ে ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ হবে। আর ২০৪১ সালে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়াবে জিডিপির ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশে। মোট ব্যয় হবে ২০৪১ সালে ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। মোট বকেয়া ঋণ দেশজ আয়ের ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশে দাঁড়াবে, যা বর্তমানে ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ কমবে, বাড়বে দেশজ ঋণের পরিমাণ।
পরিকল্পনা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ২১ কোটি তিন লাখ হবে। তখন মানুষের গড় আয়ু ৮০ বছরে উন্নীত করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই গড় আয়ু ৭২ বছর। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। শিশুমৃত্যুর হার (১ হাজার জীবিত জন্মে) ২৪ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
পরিকল্পনার জন্য নির্ধারিত উদ্দেশ্যাবলী ও অভীষ্টে একটি উচ্চ আয়ের অর্থনীতির জন্য দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সঠিক ও সচল পথে পরিচালনার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ও নীতিমালার মূল উপাদানগুলো হচ্ছে, ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিস্তারের পন্থা অনুসরণ করা হবে। এ ছাড়া স্বল্পমূল্যে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ করা। প্রাথমিক জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে বিনিয়োগ ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ। প্রতিষ্ঠিত সক্ষমতার দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, জ্বালানিতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, বিদ্যুৎ বাণিজ্যের অধিকতর বিস্তার, জ্বালানির উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ নীতি নিশ্চিতকরণ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ করার কৌশল নেয়া। বলা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে নির্ধারিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হবে ৯২ হাজার মেগাওয়াটের এক বিশাল স্থাপনা। যার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে চার হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আগামী দিনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করতে অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন হবে, যা দরিদ্র মানুষের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাসহ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও মানসম্মত শিক্ষার মতো সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী নিশ্চিত করবে। দারিদ্র্য নিরসনে মানব উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শতভাগ স্বাক্ষরতার হার। ১২ বছর পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা এবং সাশ্রয়ীমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও স্বাস্থ্যবীমা স্কিম নিশ্চিত করতে কর্মসূচি নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement