২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে করোনা

বিদেশ ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ
-

চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। চীনে সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ২৪শ’ ছাড়িয়েছে। এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনের বাইরে বিপজ্জনক অবস্থা দেখা যাচ্ছে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরাইলে। এদিকে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা শুধু চীন নয় অন্য আক্রান্ত দেশগুলোতেও ভ্রমণ সতর্কতা জারির আহ্বান জানিয়েছেন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিকভাবে জটিল বলে মনে করছে। এ পরিস্থিতে শুধু চীন নয়, যেকোনো দেশ ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। জরুরি প্রয়োজন না হলে বিদেশ ভ্রমণে বিরত থাকতে হবে। ভ্রমণ অত্যাবশ্যকীয় না হলে তা এড়িয়ে চলাটা ভালো। সম্ভব না হলে ভ্রমণকালীন সতর্কতা মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
গতকাল রোববার করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই সতর্ক করছিলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বৈশ্বিক জটিল পরিস্থিতি কেন ব্যাখ্যা করে বলেন, চীনের বাইরে হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সব রোগীই এখন আর চীনের সাথে সম্পর্কিত নন। এর মানে হলো এখন থেকে ‘লোকাল ট্রান্সমিশন’ হচ্ছে। নিজ দেশ থেকেই কারো মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে। এ ছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছে তা জানা যাচ্ছে না। এসব কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতিকে খানিকটা জটিল ভেবে পর্যবেক্ষণ বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ মুহূর্তে আইইডিসিআর মনে করছে, যেকোনো দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। অত্যাবশ্যকীয় না হলে ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। তা সম্ভব না হলে ভ্রমণকালীন সতর্কতাগুলো মেনে চলতে হবে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রয়েছে এমন কোনো রোগীর কাছাকাছি না যাওয়া, হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি না করা এবং জনসমাগমে না যেতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আর বিদেশ থেকে আসা কারো মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কোনো উপসর্গ থাকলে তাদের অবশ্যই আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা বিশ্লেষণ করে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন হলে তা করব।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্বে নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৭৯৪ জন, এর মধ্যে চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৩৯২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যোগ হয়েছে ৫৯৯ জন। শুধু চীনে যোগ হয়েছে ৩৯৭ জন। মারা গেছেন দুই হাজার ৩৪৮ জন। চীনে রোগীর সংখ্যা বেশ দ্রুত কমেছে, তবে চীনের বাইরে নতুন রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশ বেশি।
লেবানন ও ইসরাইল নতুন আক্রান্ত দেশের তালিকায় যোগ হয়েছে। চীন ছাড়া ২৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। দক্ষিণ কোরিয়াতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রোগী সংখ্যার দিক এর পরই রয়েছে জাপান ও সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিতভাবে ৮৯ জনের কথা বলেছে।
আল জাজিরা ও রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানে করোনাভাইরাসে নতুন করে আরো চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট জনে দাঁড়িয়েছে। এ দিকে এক ডজনেরও বেশি আক্রান্ত প্রদেশের কর্তৃপক্ষ করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারিভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আর ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২৮ জনের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ। মৃতদের সবাই ইরানি নাগরিক।
গত শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপুর জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এদিন আরো ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। মারকাজি প্রদেশের গভর্নর আলী আগাজাদেহ শনিবার গভীর রাতে বলেছেন, সম্প্রতি আরাকের কেন্দ্রীয় শহরে মারা যাওয়া একজন রোগীকে পরীক্ষা করে তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ওই রোগী হার্টের রোগে ভুগছিলেন বলেও জানান আলী।
ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ডা: টেডরস আধানম গেব্রেয়াসাস। গত শনিবার তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডব্লিউএইচও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। তবে এ অঞ্চলে ইরানেই প্রথম এ ভাইরাসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোম, তেহরান ও গিলান প্রদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দুই ব্যক্তি কোমে মারা গেছেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে ওই শহর থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। শহরটিতে চীনা শ্রমিক রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি স্থানীয়দের দেহে প্রবেশ করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে অন্তত ১১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে প্রথম এ ভাইরাস ধরা পড়ে গত ২৮ জানুয়ারি। তখন সফররত একটি চীনা পরিবারের চার সদস্যের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক। তবে আক্রান্তদের কোথায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বা তারা দেশটির কোন কোন স্থানে গিয়েছিল সে সম্পর্কে মুখ খোলেনি আমিরাতি কর্তৃপক্ষ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইতোমধ্যেই হুবেই প্রদেশের রাস্তায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যক্তিগত যান চলাচল। ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের উপসর্গ গোপন করাকে ফৌজদারি অরপাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে চীনের একটি আদালত। একইসাথে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করলে তার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা
বিবিসি জানায়, করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের পর সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন বলেছেন, ‘দেশ এখন গুরতর এক সঙ্কটের মুখে। আগামী কিছুদিন এই মহামারি মোকাবেলায় আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৬০২ জন। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দায়েগুর এক ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং একটি হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট আরো অনেকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারেন বলে শঙ্কা স্বাস্থ্যকর্মকর্তাদের।
চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। চীনে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজারের বেশি। এ ছাড়া জাপানে ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামের এক প্রমোদতরীতে শত শত যাত্রী আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানেও ছয় শতাধিক মানুষ চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে সংক্রমিত।
মন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের সাথে বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের ঘটনা ভয়াবহ অবস্থার দিকে মোড় নিচ্ছে। আগামী কয়েক দিন হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে সতর্কতার সীমা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (কেসিডিসি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার নতুন করে ১৬৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৯৫ জনই দায়েগু শহরে অবস্থিত শিনচেওঞ্জি চার্চের সাথে সংশ্লিষ্ট। ওই চার্চটির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৩২৯ জন করোনা আক্রান্ত হলেন। এ ছাড়া দায়েগুর পাশের শহর চেংগোদুতে অবস্থিত দায়েনাম নামের একটি হাসপাতালে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে ১১০ জনের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জন হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা কর্মীও রয়েছেন। ওই হাসপাতালে মানসিক প্রবীণ ও মানসিক রোগ আক্রান্তদের সেবা দেয়া হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাদেকুর রহমান মনি জানান, দেগু শহরে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে ওখানে অবস্থিত একটি খ্রিষ্টানদের গির্জায় প্রার্থনা অনুষ্ঠানে ৬১ বছর বয়সী একজন নারীকে। প্রার্থনা অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০০ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৪০০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস দেখা দেয়। কিন্তু বাকি ৬০০ জন কী অবস্থায় আছেন তাদের খোঁজে কোরিয়ান সরকার সবার মোবাইলে মেসেজ দিচ্ছেন, যাতে উক্ত প্রার্থনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসপাতালে রিপোর্ট করে চেকআপ করিয়ে নিশ্চিত হন তারা আক্রান্ত হয়েছেন কি না। ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তিদের কারণে আরো অসংখ্য লোক আক্রান্ত হতে পারেন। কোরিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশবাণী দেয়া হচ্ছে সবাই যাতে অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হন। এ ছাড়া সবাইকে জনসমাগম হয় এমন জায়গা পরিহার করতে সতর্ক করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা নীলফামারীতে ‘হিটস্ট্রোক’ বিষয়ক সেমিনার গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে তিন সংগঠনের মানববন্ধন চুয়েটের ২ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বাস চালক গ্রেফতার পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নদীতে ৪ মোটরসাইকেল ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি

সকল