২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সোমবারের মধ্যে গ্রামীণফোনকে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ

-

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নিরীা দাবির পাওনা বাবদ ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দিতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতি আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতের আদেশকে ছোট করে দেখার মানসিকতা পরিহার করতে হবে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ছোট কোর্ট না। এই ভাবনা খুবই কষ্টকর। এটা সর্বোচ্চ আদালত। টাকা কমানো হবে না, টাকা দিতেই হবে।
বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতে গ্রামীণফোনের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিটিআরসির মূল দাবি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। ২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হলে ৮৭ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হবে।
এরপর আদালত বলেন, আদালতের আদেশ কতটুকু বাস্তবায়ন করেছেন? জবাবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী বলেন, ৫০০ কোটি টাকা অফার করা হয়েছে। বিটিআরসি সেই টাকা নেয়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এর আগে আবেদনটি করা হয়েছে। বিটিআরসি বলেছে, ২ হাজার কোটি টাকার কম নিলে আদালত অবমাননা হবে। তিনি আদালতে মূল দাবির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করার আদেশ দেয়ার আরজি জানান।
আদালত তখন বলেন, আমরা বললাম ২ হাজার কোটি টাকা দিতে। আপনারা বলছেন ৫০০ কোটি টাকার কথা। গ্রামীণফোনের আইনজীবী বলেন, বিটিআরসির মূল দাবি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। উনারা কোনোভাবেই আমাদের সুযোগ দিচ্ছে না।
আদালত বলেন, বিটিআরসির দাবি ১২ হাজার কোটি টাকা। আমরা ২ হাজার কোটি টাকা দিতে বললাম। আপনারা আপিল বিভাগের আদেশ উপো করছেন? গ্রামীণফোনের আইনজীবী তখন অর্থ পরিশোধের জন্য সময় বাড়ানো ও কিস্তিতে পরিশোধের আরজি জানান।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কোনো অর্থই পরিশোধ করা হয়নি। ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হলে সব আদায় করা যাবে।
আদালতে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী এবং বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পরে ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, অডিটে রবির েেত্র সিম্পল ইন্টারেস্ট ক্যালকুলেট করা হয়েছে। জিপির েেত্র কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট সিস্টেমে করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আদালত বলেছেনÑ সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে আসতে। ওই দিন রিভিউ আবেদনের ওপর আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত। আমরা এখন এটা কোম্পানিকে জানাবো। আদালত বলেছেন- আদেশ অনুসারে অবশ্যই দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। আমরা বলার চেষ্টা করেছি কোম্পানির অ্যাবিলিটি তো থাকতে হবে। গ্রামীণফোন একটা শেয়ার মার্কেট লিস্টেড কোম্পানি। তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি ৫০০ কোটি টাকা এক মাসে দেবো। বাকিটা ছয় মাসে ইক্যুয়েলি দেবো। কিন্তু আদালত সেটা গ্রহণ করেননি।
গত ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনার মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ আদেশ রিভিউ চেয়ে আবেদন করে গ্রামীণফোন।
গত বছরের ২ এপ্রিল বিভিন্ন খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি করে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়েছিল। পরে গ্রামীণফোন ওই চিঠির বিষয়ে নি¤œ আদালতে টাইটেল স্যুট (মামলা) করে। একই সঙ্গে ওই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে ২৮ আগস্ট নি¤œ আদালত গ্রামীণফোনের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে দিলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। পরে শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ অক্টোবর আদালত আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন।
পরে গ্রামীণফোনের কাছে ওই টাকা দাবি আদায়ের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২৪ নভেম্বর তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দেয়ার আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ আবেদনের রিভিউ চেয়ে আবেদন করে গ্রামীণফোন।

 


আরো সংবাদ



premium cement