২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একীভূত হচ্ছে

মন্ত্রিসভার বৈঠক
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে এসএসএফের মহাপরিচালকের কাছে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের দু’টি ১৮০০ সিসি মোটরসাইকেল হস্তান্তর হ বাসস -

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ দু’টি সংস্থাকে একীভূত করতে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন, ২০২০’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অন্য দিকে, বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সহযোগিতা চুক্তির খসড়ারও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ ছাড়া করোনাভাইরাসসহ যেকোনো ভাইরাস শনাক্তে দেশের সব বিমানবন্দরে কোরিয়ান টেকনোলজির স্ক্যানিং মেশিন বসানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘১৯৭৭ সালে শেরেবাংলা নগরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন ও সীমিতভাবে দরিদ্র রোগাক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হতো। পরবর্তী সময়ে শিশুদের সার্বিক চিকিৎসার জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’
ঢাকা শিশু হাসপাতাল কোনো আইনগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। নবম জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটির সুপারিশের আলোকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় জারি করা ১২২টি অধ্যাদেশের মধ্যে ৫৪টি অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়। অননুমোদিত ৬৮টি অধ্যাদেশের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশও রয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে একীভূত করে ২১টি ধারা সংবলিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী ইনস্টিটিউটের সুষ্ঠু পরিচালনা ও প্রশাসন সার্বিকভাবে একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সরকারের একজন চেয়ারম্যানসহ ১২ সদস্যের ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠিত হবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মনোনীত সদস্যরা তাদের মনোনয়নের তারিখ থেকে তিন বছরের জন্য বহাল থাকবেন।’
রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ চলমান অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের বিকাশ টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন করতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি গতকাল বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্যদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে ভাষণে বলেন, ‘আপনারা হচ্ছেন সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ। তাই এই বন্ধন যত বেশি মজবুত ও দৃঢ় হবে, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বিকাশও তত বেশি টেকসই হবে।’ তিনি বলেন, আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণ অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে আপনাদেরকে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তাই আপনাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া-পাওয়া খুবই সীমিত। অল্পতেই তারা খুশি হন। নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা থাকে প্রয়োজনের সময় তারা যেন তাকে কাছে পায়।
আবদুল হামিদ বলেন, বিরোধী দল সংসদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাদের গঠনমূলক সমালোচনা ও ভূমিকা সংসদকে কার্যকর করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ও বিগত সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল সংসদকে কার্যকর করতে যে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। আশা করি ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো: ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা যোগ দেন।
এর আগে সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি হামিদ ও তার পতœী রাশিদা খানম তাকে স্বাগত জানান। এ সময় রাষ্ট্রপতির সাথে পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রিসের সাথে শিক্ষা-সংস্কৃতি সহযোগিতা চুক্তি হচ্ছে : গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সহযোগিতা চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশ্ব সংস্কৃতির সাথে বাঙালি সংস্কৃতির মেলবন্ধন জোরদার করার লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন ও এর আওতায় সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে মোট ৪৪টি দেশের সাথে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।’
চুক্তির মূল লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ; দুই দেশের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের মাধ্যমে শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উভয় দেশের জনগণের জ্ঞান ও সচেতনতা অর্জন; সভা, সেমিনার ও প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি; চারুকলা, শিল্পকলা, শিল্প সংস্কৃতি ও সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উভয় দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধকরণ; প্রকাশনা, গবেষণা ও তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ; সামগ্রিকভাবে সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য গ্রিস সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নেয়া হয়। এরপর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের ১৩ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রিস সরকারের কাছে খসড়া চুক্তিটি পাঠানো হয়। গ্রিস সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর খসড়ায় কিছু অনুচ্ছেদে কিছু শব্দ ও বাক্য সংযোজন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও গ্রিস সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিতব্য সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
এসএসএফ-কে হোন্ডার দু’টি ফ্ল্যাগশিপ মোটরসাইকেল হস্তান্তর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনীকে (এসএসএফ) দু’টি ফ্ল্যাগশিপ ‘জিএল ১৮০০ গোল্ডউইং’ মোটরসাইকেল হস্তান্তর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিমিহিকো কাৎসুকি এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: মজিবুর রহমানের কাছে দু’টি ১৮০০সিসি মোটরসাইকেলের চাবি হস্তান্তর করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র সাংবাদিকদের জানায়, ‘খুব শিগগিরই এই ব্র্যান্ডের আরো ছয়টি মোটরসাইকেল এসএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ও হোন্ডার মধ্যকার সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে বিশ্বের অত্যাধুনিক মোটরসাইকেল দু’টি উপহার দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, পিএমও সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমতুল মুনিম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ড. মো: কামরুল আহসান।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের বঙ্গবন্ধু কর্নারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও কথোপকথনের সঙ্কলন গ্রন্থ ‘জয় বাংলা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বইটির ভূমিকা লিখেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এবং লেখক ও কবি পিয়াস মজিদ বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার ও কথোপকথনগুলো সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেন। সারওয়ার বলেন, নাহিদ ও মজিদ ছাড়াও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-এ-আলম চৌধুরী লিটন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করেন। সব্যসাচী লেখক শামসুল হক বইটির গ্রন্থনা এবং পিয়াস মজিদ বইটির সম্পাদনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement