২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হামলায় রক্তাক্ত তাবিথ আউয়াল

কাপুরুষের মতো পিছু হটব না : তাবিথ ; এই হামলা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ : আতিকুল ; অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা : রিটার্নিং কর্মকর্তা
গাবতলীর আনন্দনগরে প্রচারণার সময় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের (তীর চিহ্নিত) ওপর হামলা : নয়া দিগন্ত -

রাজধানীর গাবতলীতে নির্বাচনী প্রচারকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় তাবিথসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাবিথ। তিনি সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাবিথ আউয়াল বলেছেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। অন্য দিকে এই হামলা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ বলে আখ্যা দিয়েছেন উত্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আর অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলী পর্বতা সিনেমা হল থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ। সেখান থেকে প্রচার মিছিল নিয়ে আনন্দনগরের তেলের মিল এলাকায় এলে পেছন থেকে হঠাৎ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুম নিজেই। তারা প্রার্থীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা তাবিথ আউয়ালকে ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করলে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ইট নিক্ষেপ ও ঘুষিতে তাবিথ আউয়াল মুখ ও মাথায় আঘাত পান।
এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এরপর তাবিথ আউয়াল বক্তব্য দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ জন্য ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে দায়ী করেন তিনি। তার বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ফের হামলা চালায়। তারা নেতাকর্মীদের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এমন অবস্থায় বক্তব্য থামিয়ে তাবিথ আউয়াল পিছু না হটে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। পুলিশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে অবস্থান নেয়। পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে পেটাতে থাকে। হামলায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সাইফুদ্দিন রবিন, রিপোর্টার সাঈদ খানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
হামলার পরও তাবিথ আউয়াল প্রচার থেকে বিরত থাকেননি। নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আমাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, হামলা আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে যাবো।
হামলায় আহত শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমাদের ওপর দুই দফা হামলা হয়েছে। আমাদের প্রার্থীসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। হামলার পর গোলারটেক, দিয়াবাড়ি, বর্ধনবাড়ি, বাঘবাড়ি, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছিলাম। পেছন দিক থেকে কাপুরুষের মতো আমাকে টার্গেট করে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমার সাথের সহকর্মী নেতাদেরকে আঘাত করা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলোÑ এই হামলা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সামনেই হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা নিজের চোখে দেখেছেন এই হামলা ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুম ও তার লোকেরা করেছে। আমি আশা করছি, পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি আরো বলেন, আমি আমার প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আমার ওপর হামলা করে আমার মনোবল নষ্ট করা যাবে না। আমাদের পিছু হটাতে পারবেন না। আমাদের প্রচারণার কাজ এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তা প্রমাণ করব। এরপর লেকভিউ, দক্ষিণ পাইকপাড়া, বটতলা, মধ্য পাইকপাড়া, লালওয়াল, নতুন বাজার, ডি টাইপ কলোনি, কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেট, পোড়াবস্তি, শহীদ মিনার রোডে গণসংযোগ করেন তিনি।
গণসংযোগকালে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুল ইসলামসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ইব্রাহিমপুর এলাকায় তিন ঘণ্টা প্রচারণা চালান তাবিথ আউয়াল। এতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু যুক্ত হন। পরে কচুক্ষেত স্বাধীনতা চত্বরে পথসভা করেন তারা। সেখানে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বির (ঘুড়ি প্রতীক) পক্ষে ভোট চান নেতারা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ, ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি : হামলার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আমিসহ আমার নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি। ঘটনার সময় পুলিশ আইনুযায়ী সক্রিয় থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এ ঘটনার পুনারাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্য দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
আজকের কর্মসূচি : আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশকোনো হাজী ক্যাম্পে পথসভার মাধ্যমে গণসংযোগ শুরু করবেন তাবিথ।
তাবিথের ওপর হামলা ‘নিজেদের সংঘর্ষ’: আতিকুল
ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, তারা নিজেরা সংঘর্ষ বাধাতে পারেন।
গতকাল উত্তর সিটির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে আতিকুল ইসলাম এ কথা বলেন। আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার বিষয়ে এখনো শুনিনি। তারা নিজেরা সংঘর্ষ বাধাতে পারেন। আমরা সব সময় উন্নয়নের কথা বলে আসছি, এখনো বলব, আমরা চাই উন্নয়ন।’
অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে : রিটার্নিং অফিসার
তাবিথ আওয়ালের ওপর হামলার অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রিটার্নিং অফিসার মো: আবুল কাশেম। গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ে তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। আবুল কাশেম বলেন, এখন পর্যন্ত তারা বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement