১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ৫ পুলিশের মৃত্যুদণ্ড

-

১৯৮৮ সালে তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে চট্টগ্রামের লালদীঘিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টার মামলায় তৎকালীন ৫ পুলিশ সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন। রায়ে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় প্রত্যেকের আরো ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেনÑ কোতোয়ালি থানার তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল (মামলার বিচার শুরুর পর থেকেই পলাতক), সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের তৎকালীন হাবিলদার প্রদীপ বড়ুয়া, মো: আব্দুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন রায় ঘোষণার পর বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। এসব ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। হত্যা চেষ্টায় সরাসরি জড়িত থাকায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে ১৪ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় সাবেক মন্ত্রী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ ৫৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রোববার ও গতকাল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যুক্তিতর্কের সময় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে জে সি মণ্ডল তার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছিলাম আমরা। আসামিরা নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৩২ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
এ সময় নিহত হনÑ হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো: কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো: শাহাদাত।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন পেট্্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মণ্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো: আব্দুল্লাহ এবং মমতাজ উদ্দিন।
আসামিদের মধ্যে রকিবুল হুদা, বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম মারা গেছেন। জে সি মণ্ডল পলাতক আর বাকি চারজন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।
আদালতে আলোচিত এ মামলার দুই দফায় চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/ ২০১/১০৯/ ৩২৬/ ৩০৭/ ১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার সাক্ষী ১৬৭ জন। গত ১৪ জানুয়ারি ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement