২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন

৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডে সরাসরি নিয়োগও মেধার ভিত্তিতে

আকাশপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাড়িয়ে ১ কোটি ১৭ লাখ
আবদুল মান্নান এমপির কফিনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

নন-ক্যাডার ৮ম গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব অর্থাৎ ১ম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোনো কোটা থাকবে না। এসব পদের নিয়োগও হবে মেধার ভিত্তিতে। গতকাল সোমবার নন-ক্যাডার ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োাগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টনপদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। কোটা বাতিলের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের স্পষ্টকরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রস্তাব পাঠালে সেই প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নন ক্যাডার ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে নাকি আগের কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে এ বিষয়টি স্পষ্টকরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণী) এবং ১০ম থেকে ১৩ম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হবে। ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩ম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিপত্রে ৯ম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণী) এবং ১০ম থেকে ১৩ম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলেও আগের ১ম শ্রেণীভুক্ত ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাবণ্টন পদ্ধতি কী হবে সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড ছাড়াও ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোনো কোনো পদে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’ এ শ্রেণীর পরিবর্তে গ্রেড উল্লেখ করা হয়েছে এবং আগের ১ম শ্রেণীর পদ বলতে ৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদকে বুঝানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ‘৯ম গ্রেড’ এর স্থলে ‘৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেড’ উল্লেখ করে পরিপত্রটির সংশোধন প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে ৯ম থেকে যত ওপরের দিকের যাক সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা পদ্ধতি থাকবে না।’
আগের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটি ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশ জমা দেন। কমিটি ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। সেই প্রস্তাবটিই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ২ জুলাই কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন।
আকাশপথে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ছে : সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আকাশপথে ভ্রমণ দুর্ঘটনা বা লাগেজ হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন ২০২০-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনের কার্যকর হলে আকাশপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, আঘাত এবং লাগেজ হারিয়ে গেলে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়বে। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে বর্তমানে ক্ষতিপূরণে পরিমাণ ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। নতুন খসড়ায় বিমান দুর্ঘটনায় মত্যু হলে এক কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০২০ আইনের খসড়া, আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০২০ এর খসড়া, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৯-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া ৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া দিবস উদযাপনের অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ছিল ৭৫ দশমিক ২৬ শতাংশ : মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ প্রান্তিক বা শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর) হয়েছে ৯টি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে ৯৭টি এবং বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৩টি। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার শতকরা হিসেবে ৭৫.২৬ শতাংশ। আর বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্ত রয়েছে ২৪টি। শতকরা ২৪.৭৪ শতাংশ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement