২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাতে ঘুরতে গিয়ে যশোরে লাশ হলেন দুই বোন ও ভাবী সিলেটে প্রাণহানি এমসি কলেজের দুই ছাত্রের

যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হ নয়া দিগন্ত -

যশোর শহরে বিয়ের আয়োজনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই বোন ও তাদের ভাবী। আহত হয়েছেন এক শিশুসহ দু’জন। গোপালগঞ্জে নিহত হয়েছেন দুই নারী। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে নিহত হয়েছেন মসজিদের ইমাম। সিলেটে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে এমসি কলেজের দুই ছাত্রের।
যশোর অফিস জানায়, যশোর শহরে রাতে ঘুরতে গিয়ে লাশ হলেন দুই বোন ও তাদের ভাবী। তাদের নিজস্ব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগে। এতে তারা মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শিশুসহ আরো দুইজন। শুক্রবার রাত পৌনে ২টার দিকে যশোর শহরের বিমান অফিস মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা সবাই গাড়িটির যাত্রী ছিলেন।
নিহতরা হলেনÑ যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী ডা: তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা (২৫), শহরের আরএন রোড এলাকার সুমন ইসলামের স্ত্রী তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা (২৮), একই এলাকার মনজুর হোসেনের স্ত্রী তিথী (৩২)। নিহতদের মধ্যে ডা: তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা ও তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা আপন বোন এবং তিথী তাদের ভাইয়ের স্ত্রী। আহতরা হলেনÑ নিহত তিথীর শিশু সন্তান মনিরুল ইসলাম (৪) ও নিহতদের নিকটাত্মীয় হৃদয় (৩০)।
পিয়াশার মামা শাহিনুর রহমান ঠাণ্ডু জানান, শহরের লোন অফিস পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সাথে আদদ্বীন সখিনা মেডিক্যালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশার দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে পিয়াশাকে তাদের তুলে নেয়ার কথা। সেজন্য জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়। পিয়াশা রাতে ফোন করে জ্যোতিকে জানান, তারা আলোকসজ্জা দেখবেন এবং শহর ঘুরবেন। এ কারণে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্যোতি তার নিজস্ব মাইক্রোবাস নিয়ে বের হন। গাড়িতে পিয়াশার বোন তানজিলা, খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী, তার মেয়ে মানিজুর এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন ছিলেন। তারা রাতে আলোকসজ্জা দেখে তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ফেরার পথে যশোর শহরের পুরনো কসবা শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের (আকিজের গলি) পাশে থাকা একটি ভবনের প্রাচীর ও বিদ্যুতের খুঁটিতে মাইক্রোবাসটি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। গাড়িতে থাকা অন্যরা কমবেশি আহত হন।
এলাকাবাসীর বরাতে যশোর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার সময় ব্যক্তিগত গাড়িতে একই পরিবারের সদস্যরা শহরে তাদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে বিমান অফিস মোড়ে পৌঁছলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রা¯Íার পাশের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কা খায়। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে আরোহীরা গুরুতর আহত হন।
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে গোপালগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসের দুই নারী যাত্রী নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের সদর উপজেলার সাতপাড় ভেন্নাবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চামটা গ্রামের নুরু মোলøার স্ত্রী রোমিছা বেগম (৫০) ও মুকসুদপুরের ননীক্ষির ইউনিয়নের মহিষতলীর সুবল বালার স্ত্রী শেফালি বালা (৪০)।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, টেকেরহাট থেকে যাত্রী নিয়ে বন্ধন পরিবহনের একটি লোকাল বাস গোপালগঞ্জ আসছিল। বাসটি ভেন্নাবাড়িতে পৌঁছলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় গাছ ও বাসের মাঝখানে চাপা পড়ে দুই নারী যাত্রী রোমিছা ও শেফালি ঘটনাস্থলে নিহত ও ১৫ যাত্রী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসটি সরিয়ে নিহত দুই নারীর লাশ উদ্ধার করেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাওলানা আবদুল আজিজ (৫০) নামে মসজিদের এক ইমাম চলন্ত মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রা¯Íায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় অপর আরোহী হাবিবুর রহমান আহত হন। গতকাল কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কে পিরিজপুর ইউনিয়নের জামতলীতে এ ঘটনা ঘটে। মাওলানা আবদুল আজিজ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়বাগ এলাকার মৃত আবদুল গফুরের ছেলে এবং বাজিতপুর উপজেলার মাটিকাটা পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম। কটিয়াদী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রাইভেট কার উল্টে এমসি কলেজের দুই ছাত্র নিহত, সড়ক অবরোধ : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট নগরীর টিলাগড়ে প্রাইভেট কার উল্টে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী নয়ন দাসসহ দু’জন নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দিবাগত রাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর সময় গতিরোধকে ধাক্কা খেয়ে প্রাইভেট কারটি উল্টে যায়। এ সময় নয়ন দাস ছাড়াও গাড়িতে থাকা রুবেল নামে অপর শিক্ষার্থীও গুরুতর আহত হন। গতকাল শনিবার তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এর প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে এমসি কলেজের পেছনের ফটকসংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ‘টিলাগড় থেকে আম্বরখানা যাওয়ার রা¯Íায় একটি ইনস্টিটিউটের সামনে কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে স্পিড ব্রেকার ও রোড ডিভাইডার বসানো হয়েছে। এর কারণেই দুর্ঘটনায় পড়েছে কারটি। খবর পেয়ে পুলিশ ও কলেজ প্রশাসন সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।
উলেøখ্য, গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে স্পিড ব্রেকার ক্রসিংয়ের সময় বেপরোয়াভাবে চালানো প্রাইভেট কারটি উল্টে যায়। এতে প্রাইভেট কারের ভেতরের থাকা চার বন্ধু আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা নয়নকে মৃত ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর আহত রুবেলকে ঢাকায় পাঠানো হয়। শনিবার তিনি মারা যান।


আরো সংবাদ



premium cement