বিশ^ ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু কাল আখেরি মুনাজাত
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন গাজীপুর
- ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বের পর চার দিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এ পর্ব শুরু হয়। তবে বৃহস্পতিবার মাগরিব নামাজের পরপরই অনানুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হয়েছে। আগামীকাল রোববার আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা। এ পর্বের শেষ দিনে হেদায়েতি বয়ান ও আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের নিজামুদ্দিনের মাওলানা জামশেদ। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এর আগে গত ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আমির প্রকৌশলী ওয়াসেফুল ইসলাম জানান, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভি ‘পরিস্থিতি বিবেচনায়’ এবারো ইজতেমায় আসছেন না। তবে নিজামুদ্দিন মারকাজের পক্ষ থেকে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইজতেমায় এসেছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হচ্ছে ইজতেমার এ পর্ব। তিনি আরো জানান, ইজতেমার প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর গত সোমবার থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি। বুধবার থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেন।
ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার প্রকৌশলী শাহ মহিবুল্লাহ জানান, ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে বয়ান শুরু হয়েছে। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ান করেন দিল্লির মুফতি ওসমান। এরপর মুফতি আসাদুল্লাহ জুমা নামাজের আগ পর্যন্ত বয়ান করেন।
দুপুরে ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে ইমামতি করেন বংলাদেশের মাওলানা মোশারফ। মূল প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে ইজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায় ও খোলা জায়গার ওপর অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও গাজীপুর মেট্রো পুলিশ কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে শরিক হন। বাদ জুমা বয়ান করেন ভারতের নিজামুদ্দিনের মুফতি চেরাগ আলি। এরপর বাদ আসর বাংলাদেশের নাসিম খান শাহাবুদ্দিন নাসিম এবং বাদ মাগরিব নিজামুদ্দিনের মাওলানা আবদুস সাত্তার বয়ান করেন।
বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও মুরব্বি পর্যায়ক্রমে বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও ইজতেমায় আগত বিভিন্ন দেশের-ভাষা মুসল্লিদের জন্য বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিকভাবে অনুবাদ করা হচ্ছে। বিদেশী মুসল্লিদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নিবাস তৈরি করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানান, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায়ও বহাল রয়েছে আগের দফার প্রায় সব প্রস্তুতি। নিরাপত্তাব্যবস্থা পাঁচটি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তায় ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা ময়দান সিসি ক্যামেরা, ওয়াচটাওয়ারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদ্যরা পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ছাড়াও মেটাল ডিটেক্টর, ফুটপেট্রল, মোবাইল পেট্রল ও চেকপোস্টসহ পোশাকে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা ইজতেমা ময়দানের ভেতরে এবং বাইরে দায়িত্ব পালন করছেন। ইজতেমায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
তিন মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমায় যোগ দিতে আসা এক মুসল্লি গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন। তার নাম কাজী আলাউদ্দিন (৬২)। তিনি সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার থানার চানপুর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে। এ ছাড়াও ইজতেমায় যোগ দিতে আসার পথে টঙ্গীতে গত বুধবার রাতে পৃথক দুর্ঘটনায় দুই মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে টঙ্গী স্টেশনে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে গোলজার হোসেন (৪০) এবং মন্নু নগর এলাকায় সড়ক পার হওয়ার সময় কাভার্ডভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে নরসিংদীর বেলাবো থানার বীরবাগদে গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে সুরুজ মিয়া (৬০) নিহত হন।
বিদেশী মুসল্লি : পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন সকাল পর্যন্ত বিশ্বের ৩১টি দেশের প্রায় এক হাজার ৪ শ’রও বেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা শুরু হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা হতো তিন দিনব্যাপী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এই ইজতেমায় অংশ নেন বলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হতো। পরবর্তী সময়ে তাবলিগের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভি ও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীর বিরোধের কারণে গত বছর থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমার আয়োজন করতে শুরু করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা