১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নকশাহীন প্রাক্কলন : খরচ বাড়ল ২২৮ কোটি টাকা আইটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্প

-

প্রাথমিক নকশা ছাড়াই ২৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন দেয়া হয়। মাঝপথে এসে প্রকল্পের ব্যয়ও একদফায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এখন মেয়াদ শেষে প্রকল্পের প্রাথমিক নকশা ছাড়াই নির্মাণখরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে। পেশ করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। ফলে চলমান প্রকল্পে নতুন করে নকশার কারণে আইটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনে খরচ বাড়ল ২২৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ৭৪.৮৪ শতাংশ। সময় বাড়ানোয় পরামর্শক খাতে ব্যয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেড়েছে। আর বিদেশ ভ্রমণে সোয়া কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিন বছরের প্রকল্পে আড়াই বছরে মাত্র অর্ধেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, কয়েক দশক ধরে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আইসিটিকে বহুমাত্রিকভাবে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও আইসিটির ব্যবহার বিকশিত হচ্ছে। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করার পর অনেকে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে দক্ষতার সাথে কাজ করছে। আবার অনেকের আগ্রহ থাকলেও সুযোগের অভাবে আইসিটি পেশায় আসছে না। দেশের মেধাবী জনবলকে আইটি পেশার উপযোগী করে গড়ে তুললে তারা ভবিষ্যতে সহজেই জ্ঞানপ্রক্রিয়া আউটসোর্সিংয়ের (কেপিও) জগতে বিচরণ করতে পারবে।
দেশী ফ্রিল্যান্সারদের এই পেশার সাথে জড়িত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তাই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের ৭ মার্চ একনেক সভায় আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়, যা আড়াই বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল।
এরপর আবার ব্যয় ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে সময় আরো ছয় মাস বৃদ্ধি করে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এখন নকশার কারণে প্রকল্পের ব্যয় ২২৮ কোটি ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা করে মেয়াদকাল আরো দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাবনা একনেকে যাচ্ছে। এতে আট জেলায় ৬তলা বহুমুখী ভবন ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম রয়েছে। আট জেলা হলো, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নাটোর, বরিশাল, মাগুরা, নেত্রকোনা ও রংপুর।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাথমিক ডিজাইন করার পর ভবনের পাইলের সংখ্যা ১৪০টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৪টি হয়েছে। পাইলের লেংথ ২০ মিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ মিটার হয়েছে। বরিশাল ও সিলেটের মাটি খারাপ হওয়াতে তিন বছর পার করে এখন ডায়ারের আকৃতি পরিবর্তন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত না করার কারণে এখন নতুন রেট শিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হলো ৫০ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ বা ৬৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণ ও বিদেশ সেমিনার তিনটি খাত রাখা হয়েছে। এই তিন খাতেই যাচ্ছে ৪ কোটি টাকার বেশি। বিদেশ প্রশিক্ষণে মাথাপিছু ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ৬০ জন বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাবে। আর অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে জনপ্রতি ব্যয় হবে ৩৬ হাজার টাকা। এখানে ১৬ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তিন বছরে পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি টাকা। এখন ২ বছর সময় বাড়ানোর ফলে এই ব্যয় আড়াই কোটি টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বছরে পরামর্শকদের পেছনে খরচ হবে দেড় কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যয় সংঘটিত হলে তা ঘটনাত্তোর অনুমোদনের সুযোগ নেই।
এটা বিধিবহির্ভূত। প্রকল্পে নতুনভাবে প্রস্তাবিত ট্রেনিং পরামর্শক এবং টেকনিক্যাল পরামর্শক নিয়োগের সংস্থান প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত জনবলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একনেক থেকে অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন বা সংশোধন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে করা যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement