২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

মোশতাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিলেন জিয়া

-

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া মোশতাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক ছিলেন বলেই তিনি তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়া জড়িত না-ই থাকবেন, তবে খন্দকার মোশতাক তাকে কেন সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন? দেশবাসীকে মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের মাটিতে মীর জাফর ও খন্দকার মোশতাকের মতো বিশ্বাসঘাতকরা জন্মেছিলেন এবং যুগে যুগে ‘খুনি জিয়ার’ মতো মানুষ আসতেই থাকবে। তাই যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দায়িত্ব নিতে হবে এবং কেউ যেন মানুষের সাথে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভার শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
স্বাধীনতার আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল জিয়াউর রহমান। কিন্তু সত্যকে কখনো কেউ একেবারে মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটা প্রমাণ হয়েছে সারা বিশ্বের কাছে। আজ তা প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের কাছে। আজকের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে কেউ পারবে না এটা মুছে ফেলতে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কড়া সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, হত্যা, খুন, সন্ত্রাস আর লুটপাট করেছে তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছেন জিয়া। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা পালিয়েছিল, তাদের ধরে এনে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন। তাদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা লাগিয়ে দিয়েছেন। ভোট চুরি করে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের হাত দিয়েই খালেদা জিয়ার ব্যবসা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা। তার ছেলেই সাজাপ্রাপ্ত। আর নিজে তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে কারাগারেই আছে। একটা দেশের মানুষের জন্য দরদ নাই এবং এই দেশটা যে এত লাখো শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এই বিষয়ে তাদের কোনোরকম সহানুভূতি ছিল না। তাদের ওই পাকিস্তানের প্রতি যে বহুল আনুগত্য, সেই আনুগত্যই তারা দেখিয়ে গেছে। তাদেরই তোষামোদী, চাটুকারিতা করে গেছে এবং করে যাচ্ছে এখনো। জাতীয় পার্টির এরশাদও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। এরশাদ ক্ষমতায় এসে ফারুককে করেছে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। দল করার সুযোগ দিয়েছে। খুনিরা বানিয়েছে ফ্রিডম পার্টি। অর্থাৎ খুন করার ফ্রিডম, সেই ফ্রিডম দিয়েছিল এরশাদ।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ২১ বছর এ দেশের মানুষ কষ্ট ভোগ করেছে। এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তাদের কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সেগুলোর সৃষ্টি করেছে। পরে আমরা যখন সরকারে এলাম, তারপর শুরু হলো অগ্নিসন্ত্রাসের তাণ্ডব। যার মধ্যে এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকে সে কি পারে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করতÑ এটাই নাকি খালেদা জিয়ার আন্দোলন ছিল! অর্থাৎ খুন, হত্যা ছাড়া এরা আর কিছুই জানে না। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের পেটোয়া বাহিনী বানিয়েছে। শুরু করল জিয়া, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করল খালেদা জিয়া। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, এখন বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু তার সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই এই রক্ত কখনও বৃথা যায় না, বৃথা যেতে পারে না।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়ে গেছেন এ দেশের জন্য, যাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছেÑ তাদের নামটাও তো মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুছে ফেলতে পারেনি। কারণ আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না, কখনোই বৃথা যায় নাই। সেটাই প্রমাণ হয়েছে এখন বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনসহ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কিভাবে উন্নত জীবনযাপন করবে, তার পরিকল্পনাও করে দেয়া হয়েছেÑ সেটা ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে।
সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি আজকে অপশক্তিকে উসকানি দিতে নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে সজাগ থাকতে হবে’। তিনি বলেন, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, এই দেশে যদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতার মঞ্চে না আসতেন, তাহলে কী হতো? তিনি যদি ক্ষমতায় না আসতেন তাহলে এদেশে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো? এদেশে কি বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচার হতো? জেলহত্যার বিচার হতো? তিনি বলেন, আমাদের বারবার মনে করতে হবে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই স্বাধীনতার মূল্যবোধ বেঁচে আছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণালকান্তি দাস, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল