২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্রিটেনে বরিস জনসনের বিশাল জয়

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের পর দলীয় কার্যালয়ে সমর্থকদের সাথে কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন হএএফপি -

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিটকে ঘিরে প্রায় তিন বছর ধরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছরের মধ্যে এটি তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন। জনসন ক্ষমতায় ফিরলেই ইইউ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ হওয়া এখন কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র। নতুন সরকার গঠনে অনুমতি চাইতে তিনি এখন রানি এলিজাবেথের সাথে দেখা করবেন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
বিবিসি জানিয়েছে, পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৬৪৯টি আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৩৬৪ আসন এবং লেবার পার্টি পেয়েছে ২০৩ আসন। কনজারভেটিভ পার্টি গতবারের চেয়ে ৪৭টি আসন বেশি পেয়েছে। অন্য দিকে লেবার পার্টি ৫৯টি আসন হারিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৬টি আসনে জয়।
সেইন্ট আইভসের একটি বাদে বাকি আসনের ফল চূড়ান্ত হওয়ার পর বিরোধীদের চেয়ে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা রক্ষণশীল দলের এ শীর্ষ নেতা বলেছেন, জনরায়ের প্রত্যাশা মেটাতে তিনি একটি ‘জনগণের সরকার’ গঠন এবং ‘সার্বক্ষণিক কাজ’ করবেন।
নির্বাচনে ভরাডুবি মেনে নিয়েছেন বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। নিজের আসন ধরে রাখতে পারলেও পরবর্তী নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন না জানিয়ে তিনি লেবারের শীর্ষ পদ থেকে সরে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ইউরোপের ২৮ দেশের জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর বা ব্রেক্সিটই মূল ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হওয়া গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে বিরোধী লেবার পার্টি এমনকি মিডল্যান্ডস ও উত্তরপূর্ব ইংল্যান্ডের মতো ঘাঁটি অঞ্চলগুলোরও আসন খুইয়েছে। ওয়েলসে তারা হারিয়েছে ছয়টি আসন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিবিসি যে ৬৪৯টি আসনের চূড়ান্ত ফল জানিয়েছে; তার মধ্যে রক্ষণশীলরা একাই জিতেছে ৩৬৪টি। লেবার ২০৩, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৪৮, লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ১১ এবং আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) জয়লাভ করেছে আটটি আসনে।
চলতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে নাইজেল ফারাজের ব্রেক্সিট পার্টি চমক দেখালেও, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে তারা কোনো আসনই জিততে পারেনি। বিবিসি বলেছে, জনসনের নেতৃত্বে এবার কনজারভেটিভ পার্টি ১৯৮৭ সালের পর সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জিতেছে, লেবার করেছে ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ ফল।
জয় নিশ্চিত হওয়ার পর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে যুক্তরাজ্যে ‘নতুন সূর্য’ উদিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর লেবারের টনি ব্লেয়ারও এমন কথাই বলেছিলেন। লেবার পার্টির অনেক সমর্থক বৃহস্পতিবার কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দিয়েছে দাবি করে জনসন সেসব ভোটারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘হয়তো আগামীবারই আপনারা ফের লেবারেই ফিরে যেতে চাইবেন; যদি তাই হয়, তাও এবার আমার উপর আস্থা রাখায় আমি কৃতজ্ঞ, আমি আপনাদের সমর্থনকে ব্যর্থ হতে দেবো না। আমাকে ভোট দিয়ে আপনারা যে ঠিক কাজটিই করেছেন, তা নিশ্চিতে আমি সার্বক্ষণিক, দিন রাত কাজ করার লক্ষ্য ঠিক করেছি, যেন ভবিষ্যতেও আপনারা আমাকেই সমর্থন করেন।’
রক্ষণশীলদের এবারের জয়ের তোড়ে কেবল লেবাররাই দিশা হারায়নি, এসএনপি বাদে অন্য দলগুলোরও ভরাডুবি হয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা জো সুইনসন এমনকি নিজের আসনেই ১৪৯ ভোটে হেরে গেছেন। পরাজয়ের পরপরই দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
‘বিজয়ী ভাষণে’ জনসন জানান, টোরিদের এ অসামান্য জয়ে ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টে দীর্ঘ দিন ধরে যে অচলাবস্থা চলছিল, তা নিরসনের প্রবল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ব্রেক্সিটকেন্দ্রিক আরেকটি গণভোট আয়োজনের ‘যে ঘৃণ্য হুমকি’ সৃষ্টি হয়েছিল, এবারের নির্বাচন তাতে ইতি টানবে বলেও প্রত্যাশা তার।
‘আমরা নির্ধারিত সময় ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ব্রেক্সিট সম্পন্ন করবো, কোনো যদি, তবে, কিন্তু নেই,’ বলেছেন জুলাইয়ে থেরেসা মে’র হাত থেকে দল ও ডাউনিং স্ট্রিটের দায়িত্ব নেয়া জনসন।
নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্বে থাকবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের পুরো ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই করবিন পদত্যাগের এমন আভাস দেন। ব্রিটেনের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে লেবার পার্টির ভরাডুবির ইঙ্গিত আসার পর দলের করবিনবিরোধীরা পরাজয়ের জন্য তার নেতৃত্বকে দায়ী করতে শুরু করেন। যদিও নির্বাচনের ফলাফল বলছে, ব্রেক্সিটবিরোধী অবস্থানের কারণে ঐতিহ্যগতভাবে লেবার পার্টির ভোটাররা এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, যারা ২০১৬ সালের গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি জনসনের
নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর এক বক্তব্যে সমর্থকদের উদ্দেশে বরিস জনসন বলেন, ‘ভোটাররা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে ফের যুক্তরাজ্যের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। নির্বাচনের ফল ব্রেক্সিটের জন্য নতুন শক্তিশালী ম্যান্ডেট।’ তিনি আরো বলেন, এটা আমাদের দেশের জন্য নতুন যুগের সূচনা। মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরা তাদের পিছিয়ে দিতে পারি না। আর আমাদের এটা করা উচিত নয়। এরপর জনসন প্রতিশ্রুতি দেন, আস্থার প্রতিদান দিতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আর দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাব।
নিজ আসনে সাত হাজার ভোটে জিতেছেন জনসন
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন তার অক্সব্রিজ আসনে সাত হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার ৩৫১ ভোট এবং লেবার পার্টির প্রার্থী আলী মিলানি পেয়েছেন ১৮ হাজার ভোট।
২০২০ সালে ইইউর সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবেন জনসন : থেরেসা মে
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তিনি বেশ খুশি। তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রিটেনের মানুষ একটি পরিষ্কার প্রশ্ন ছিল। সেটি হচ্ছে, তারা ব্রেক্সিট চায় কি না। তারা এটাও বুঝতে পেরেছে যে, কনজারভেটিভ পার্টি জয়লাভ করলে ব্রেক্সিট হবে। ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি কেটে যাবে। ব্রেক্সিট হবে এবং এগিয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement