২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রিপোর্ট পাল্টে ফেলার আশঙ্কা

খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সরকার : ফখরুল

নিখোঁজ ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে অনুষ্ঠানে উদ্বিগ্ন স্বজনরা : নয়া দিগন্ত -

বিএসএমএমইউর মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সরিয়ে ভিন্ন রিপোর্ট আদালতে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে গতকাল বুধবার বিএনপি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেই রিপোর্টটি সরিয়ে দিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করছি, অত্যন্ত সচেতনভাবে দেশনেত্রীকে বেআইনিভাবে কারাগারে আটক করে রাখার জন্য সরকার কাজ করছে এবং এভাবে তারা বড় রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
গুলশানের লেক শোর হোটেলে এই গোলটেবিল বৈঠক হয়। আলোচনার শুরুতে বিএনপির সম্পাদনায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ ‘এবসেন্স অব ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস বাই স্টেট অ্যাপারেটাস’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। গ্রন্থের ওপর তথ্য চিত্র তুলে ধরেন ডা: সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ। এরপর দলের মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। গোলটেবিলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ১৫টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, এ এইচ এম মোফাজ্জল করীম, নুর খান, মাসুদ আজিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার শাহ ফয়সাল কাকর পাকিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতি রক্ষায় তার দেশের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বক্তব্যের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাশ্মির ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন।
গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এনামুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, জহিরউদ্দিন স্বপন, জেবা খান, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনিসুর রহমান খোকন, শায়রুল কবির খান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল হাসান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া দলের নেতাকর্মীদের স্বজনরাও বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মানবাধিকারের যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আর কখনোই ছিল না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি যে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে শুধু ভিন্নমত, ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার কারণে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষকে মামলার আসামি করা হয়েছে। রাজনৈতিক মামলা এবং মামলা দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪৮১৪টি। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সরকারের হাতে এবং আওয়ামী লীগের হাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মারা গেছেন ১৫২৬ জন এবং গুম হয়েছে আমাদের হিসাব মতে বিএনপির ৪২৩ জন এবং সামগ্রিকভাবে ৭৮১ জন।
তিনি বলেন, দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হয়ে গেল, আগামী বছর আমরা ৫০ বছর অর্থাৎ অর্ধশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি। এখনো বাংলাদেশের মানুষকে, আমাদের সন্তানদের তাদের পিতার জন্য, আমাদের মাকে তার সন্তানদের জন্য কাঁদতে হচ্ছে। আজকে গোটা বাংলাদেশে এমন একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, মানুষ তার কোনো অধিকারই পাচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জোর করে নির্বাচনে সমস্ত ভোট নিয়ে গেছে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই তাদের এই বেআইনি কাজগুলো করতে হচ্ছে।
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বক্তব্য তুলে ধরে অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, অমর্ত্য সেন সুন্দর করে একটি কথা বলেছেন, কখনোই কোনো ডেভেলপমেন্ট টেকসই হবে না যদি সেখানে গণতন্ত্র না থাকে। বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই। এই সরকার মানুষকে বোকা বানিয়ে উন্নয়নের কথা বলে, উন্নয়নের একটা মিথ তৈরি করেছে মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। শুধু উন্নয়ন দিয়ে কখনো জনগণের সমস্যার সমাধান করা যায় না। যদি গণতন্ত্র না থাকে, গণতন্ত্রের পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে সেটা কখনোই ফলপ্রসূ বা টেকসই হতে পারে না। উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না যদি গণতন্ত্র না থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বিনা কারণেই বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে প্রায় ২০ মাস ধরে। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এই ধরনের মামলায় অন্য আসামিদের জামিন হয়ে গেছে, তারা জামিনে আছেন; কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement