২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজয়ীদের হাতে চলচ্চিত্র পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শিল্পীদের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা :বাসস -

২০১৭ ও ২০১৮ সালের বিজয়ীদের হাতে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে এসব পুরস্কার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গত ৭ নভেম্বর একসাথে ঘোষণা করা হয় ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাসস, বাংলানিউজ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণে বিশেষ করে যুবসমাজের বিদ্যমান ব্যাপক মেধার সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচুরসংখ্যক মেধাবী লোকজন রয়েছে এবং মেধার বিবেচনায় আমরা অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি।
বাংলাদেশের শিল্পীরা প্রতিবেশী দেশে গিয়ে ভালো কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদেরকে আমাদের চলচ্চিত্রের প্রতি অন্যান্য দেশকে আকর্ষণ করতে একই কাজ এমনকি আরো ভালো করতে হবে। তিনি সব পুরস্কার বিজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে এবং আপনাদের আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাতে এই পুরস্কার।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান ও তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় অস্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তথ্য সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকদের প্রতি সিনেমা নির্মাণে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কারণ এর মাধ্যমে সমাজ সংস্কার অথবা এর বিনাশের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পরিবর্তনের ধারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত ডিজিটালাইজড সিনেমা হল নির্মাণে তার সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্র উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে ‘ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন’ নামে বিল উত্থাপন করে প্রথম বাংলাদেশে একজন বাঙালি কর্তৃক চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়নে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র নগরীর প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপ শিগগির শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক ধারার সাথে তালমেলাতে রেটিং সিস্টেমের ভিত্তিতে একটি প্রত্যয়ন আইন বলবৎ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৩২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএফডিসি নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে বিএফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে গত দুই বছরের ২৮টি শাখায় ৬৩ জন পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০১৭ সালের জন্য আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান ও সালমা বেগম সুজাতা। আর ২০১৮ সালের জন্য এ সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও এম এ আলমগীর।
২০১৭ সালে ‘গহীন বালুচর’ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন বদরুল আনাম সৌদ এবং একই বছর সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ২০১৮ সালে ‘জান্নাত’ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালক হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক এবং একই বছর সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে ‘পুত্র’।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। দেখে নিন কারা পেয়েছেন ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
২০১৭ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা : আজীবন সম্মাননা : এ টি এম শামসুজ্জামান ও সালমা বেগম সুজাতা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : ঢাকা অ্যাটাক (কায়সার আহমেদ ও সানী সানোয়ার), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : বিশ্ব আঙিনায় অমর একুশে (বাংলাদেশ টেলিভিশন), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক : বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র : শাকিব খান (সত্তা) ও আরিফিন শুভ (ঢাকা অ্যাটাক), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র : নুসরাত ইমরোজ তিশা (হালদা), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্র : মো: শাহাদাৎ হোসেন (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্র : সুবর্ণা মুস্তাফা (গহীন বালুচর) ও রুনা খান (হালদা), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্র : জাহিদ হাসান (হালদা), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্র : এম ফজলুর রহমান বাবু (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : নাইমুর রহমান আপন (ছিটকিনি), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার : অনন্য সামায়েল (আঁখি ও তার বন্ধুরা), শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক : এম ফরিদ আহমেদ হাজরা (ফরিদ আহমেদ (তুমি রবে নীরবে), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : ইভান শাহরিয়ার সোহাগ, (ধ্যাততেরিকি), শ্রেষ্ঠ গায়ক : মাহফুজ আনাম জেমস (তোর প্রেমেতে অন্ধ..., চলচ্চিত্র: সত্তা), শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মমতাজ বেগম (গান : না জানি কোন অপরাধে..., চলচ্চিত্র: সত্তা), শ্রেষ্ঠ গীতিকার : সেজুল হোসেন (গান : না জানি কোন অপরাধে..., চলচ্চিত্র : সত্তা), শ্রেষ্ঠ সুরকার : শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা (গান : না জানি কোন অপরাধে..., চলচ্চিত্র : সত্তা), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার : আজাদ বুলবুল (হালদা), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : তৌকির আহমেদ (হালদা), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : মো: কালাম (ঢাকা অ্যাটাক), শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক : উত্তম কুমার গুহ (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : কমল চন্দ্র দাস (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রিপন নাথ (ঢাকা অ্যাটাক), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : রিটা হোসেন (তুমি রবে নীরবে), শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান : মো: জাভেদ মিয়া (ঢাকা অ্যাটাক)।
২০১৮ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা : আজীবন সম্মাননা : অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও এম এ আলমগীর, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : পুত্র (চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর), শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : গল্প সংক্ষেপ (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র : ফেরদৌস আহমেদ (পুত্র) ও সাদিক মো: সাইমন (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র : জয়া আহসান (দেবী), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্র : আলী রাজ (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্বচরিত্র : সুচরিতা (মেঘকন্যা), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্র : সাদেক বাচ্চু (একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্র : মোশাররফ করিম (কমলা রকেট) ও আফজাল শরিফ (পবিত্র ভালোবাসা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : ফাহিম মুহতাসিম লাজিম (পুত্র), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার : মাহমুদুর রহমান (মাটির প্রজার দেশে), শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: ইমন সাহা (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : মাসুম বাবুল (একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ গায়ক : নাইমুল ইসলাম রাতুল (গান : যদি দুঃখ ছুঁয়ে..., চলচ্চিত্র : পুত্র), শ্রেষ্ঠ গায়িকা : সাবিনা ইয়াসমিন (গান : ভুলে মান অভিমান, চলচ্চিত্র : পুত্র) ও আঁখি আলমগীর (গান : গল্প কথার ঐ..., চলচ্চিত্র: একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ গীতিকার : কবির বকুল (গান : যদি এভাবেই ভালোবাসা..., চলচ্চিত্র : নায়ক) ও জুলফিকার রাসেল (গান : যদি দুঃখ ছুঁয়ে দেখো..., চলচ্চিত্র: পুত্র), শ্রেষ্ঠ সুরকার : রুনা লায়লা (গান: গল্প কথার ঐ..., চলচ্চিত্র: একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার : সুদীপ্ত সাঈদ খান (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : সাইফুল ইসলাম মান্নু (পুত্র), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : এস এম হারুন-অর-রশীদ (পুত্র), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: তারিক হোসেন বিদ্যুৎ (পুত্র), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক : উত্তম কুমার গুহ (একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : জেড এইচ মিন্টু (পোস্ট মাস্টার ৭১), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: আজম বাবু (পুত্র), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : সাদিয়া শবনম শানতু (পুত্র), শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান: ফরহাদ রেজা মিলন (দেবী)।


আরো সংবাদ



premium cement