২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার শুনানি কাল আইসিজেতে শুরু

অঘটনের শঙ্কায় সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি
-

গণহত্যার অপরাধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সিদ্ধান্তে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হচ্ছে। শুনানিতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার জাতিসঙ্ঘের গণহত্যা সনদ ভঙ্গ হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে যাতে বিরত থাকে একং মামলার সাথে সম্পর্কিত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আলামত যাতে ধ্বংস না করে সে জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাইবে গাম্বিয়া। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আইসিজের দেয়া রায় মিয়ানমার প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবে।
গণহত্যার জন্য আইসিজে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি নয়, বরং দেশ হিসেবে গণহত্যার সনদ লঙ্ঘনের অপরাধে মিয়ানমারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। তবে গণহত্যার নির্দেশ দেয়া বা এর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্ব এবং গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও ক্ষমতাসীন এনডিএ দলের শীর্ষ নেতা অং সাং সু চি পরোক্ষভাবে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন।
আইসিজেতে দায়ের করা মামলাটি ‘জাতীয় স্বার্থে’ গুরুত্বের সাথে নিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে স্বয়ং সু চি নেদারল্যান্ডস গেছেন। গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল আবু বকর তামবাডু। এ ছাড়া শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল গতকাল নেদারল্যান্ডস গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদসহ নাগরিক সমাজের কয়েকজন সদস্যও এ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
এ দিকে বহুল আলোচিত আইসিজের শুনানিতে থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার অঘটন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। বাংলাদেশ সীমান্তে বিপুল পরিমাণ সৈন্য জড়ো করেছে প্রতিবেশী দেশটি। এর প্রেক্ষাপটে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করতে এবং সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অঘটন বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন সম্প্রতি এক চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজেতে ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানি হবে। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য সম্মতি দিয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমার সরকার বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ব্যাপক কর্মতৎপরতা শুরু করেছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সম্মিলিতভাবে সরকারের রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। তারা একযোগে সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলার জন্য একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করেছে। মামলা থেকে দৃষ্টি অন্য খাতে সরাতে মিয়ানমার বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে রোহিঙ্গা শিবিরসহ মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা এবং সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অঘটন বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
নেদারল্যান্ডসের পিস প্যালেসে অবস্থিত আইসিজেতে ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানি শুরু হবে। ১১ ডিসেম্বর বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। এরপর ১২ ডিসেম্বর সকালে গাম্বিয়া পাল্টা যুক্তি দেবে মিয়ানমারের বিপক্ষে। আর দুপুরে মিয়ানমার গাম্বিয়ার জবাব দেবে।
আইসিজের শুনানিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল নেদারল্যান্ডস যাচ্ছে। ইউরোপসহ বিশ্বের দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও সেখানে যাবে। রাখাইনে চালানো গণহত্যার বিচারের দাবিতে রোহিঙ্গারা আদালতের বাইরে সোচ্চার থাকার পরিকল্পনা করছে।
আইসিজের শুনানিতে অংশ নিতে মিয়ানমার ছেড়ে যাওয়ার আগে রাজধানী নেইপিডোতে সু চির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে মিয়ানমারের পক্ষে জোরালো অবস্থানে থাকে চীন। রোহিঙ্গা ইস্যুটি মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিটিয়ে ফেলতে বাংলাদেশকে তাগাদা দিয়ে আসছে বেইজিং। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালনে ওয়াং উইর উদ্যোগে সম্প্রতি চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কার্যকর গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। চীন ও মিয়ানমারের দুই রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে (মিয়ানমার) নিয়ে গঠিত কার্যকরী গ্রুপটি ইতোমধ্যে কক্সাবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে কথাবার্তা বলেছে। তাদের রাখাইন সফরের পরিকল্পনাও রয়েছে।
এর আগে দুই দফায় কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত না হলে রাখাইনে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন ও নৃশংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement