১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সোনালি হাসিতে উজ্জ্বল পোখারা

এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী বাংলাদেশের তিন কৃতী অ্যাথলেট (বাঁ থেকে) জিয়ারুল, মাবিয়া ও ফাতেমা : নয়া দিগন্ত -

কী অসাধারণ একটা দিন কাটালেন বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। পোখারা সোনালি হাসিতে উজ্জ্বল হলো। মাবিয়া হাসলেন। পিছিয়ে ছিলেন না জিয়ারুল। এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভারোত্তোলনে দুই স্বর্ণপদক উপহার দিয়ে বিজয়ীর আনন্দে আবাহন করলেন বাংলাদেশের দুই স্বর্ণালি অ্যাথলেট। এরপর ফেন্সিংয়ে ফাতেমা ও মুজিব দেশকে গর্বিত করলেন আরেকটি স্বর্ণপদক জিতে। তিনি সেইবার এককে সেরা হয়েছেন। এবারই প্রথম এসএ গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ফেন্সিং। কাঠমান্ডুর নয়াবাজারের কৃতিপুরে গতকাল ফাতেমা পেলেন প্রথম স্বর্ণের জয়ের সাতরঙা আনন্দ। তিনি নেপালের রাবিনা থাপাকে ১৫-১০ পয়েন্টে হারিয়ে দেন।
বাংলাদেশ এবারের এসএ গেমসে ভালো করবে সেই আশা নিয়ে নেপাল যায়। স্বর্ণপদক জয়ের যাত্রা শুরু হয় দীপু চাকমার হাত ধরে। এরপর একই দিন তিনটি স্বর্ণ জয় করে বাংলাদেশ সোনালি দিন উদযাপন করে। তার পর কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। অ্যাথলেটিকস, সাঁতার কিংবা শুটিংয়ে শুধুই ব্যর্থতার কবিতা রচনা করা। অবশেষে হতাশার কুয়াশা কেটে গেছে গতকাল। আবারো তিন স্বর্ণপদক জয়ের গল্পগাথা রচিত হলো। মাবিয়া, জিয়ারুল ও ফাতেমার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। শনিবারের তিন স্বর্ণ জয়ের ফলে বাংলাদেশ এখন সাতটি স্বর্ণ জয় করেছে।
স্বর্ণ জয়ের পর মাবিয়া ছিলেন হাসিতে উজ্জ্বল। হৃদয় মাজারে কিছুটা দুঃখবোধ ছিল। তারপরও দেশকে স্বর্ণ উপহার দিতে পেরে তিনি গর্বিত ছিলেন। কণ্ঠে স্বরের উঠানামা করেছে। তাই তো কিছুটা কাঁপা গলায় নিজের আবেগকে দমিয়ে রেখে বললেন, ‘এসএ গেমসের ক্যাম্প করেছি চার-পাঁচ মাস। তাতেই স্বর্ণ জিততে পেরেছি। যদি দুই বছর ক্যাম্প করার সুযোগ পাই, তাহলে যেকোনো প্রতিযোগিতাতেই পদক এনে দিতে পারব। আমার পরবর্তী টার্গেট অলিম্পিক।’ এসএ গেমসে ভালোত্তোলনে ৭৬ কেজিতে স্বর্ণ জয়ের এমন টার্গেট-বাণী শুনালেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত।
সাথে অরো যুক্ত করলেন, ‘কথা রেখেছি। এখন কর্মকর্তারা কথা রাখলেই হয়। আমি বারবার বলেছি আমদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিলে আরও বেশি পদক উপহার দিতে পারব। ভারোত্তোলনে অনেক প্রতিভা আছে। কাজে লাগানোর জন্য যথেষ্ট পরিকল্পনা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যদি এ দিকটায় মনোযোগ দেয় তাহলে আরও পদক জিতবে ভারোত্তোলন।’
২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের গৌহাটির ভোগেশ্বরী ফুকানানি ইনডোর স্টেডিয়ামে এসএ গেমসে ভারোত্তোলনে মেয়েদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণপদক জিতেছিলন মাবিয়া। কাকতালীয় ব্যাপার, আরেকটি ৭ তারিখে একই আসরে স্বর্ণজয় করলেন তিনি। সাথেই ছাড়িয়ে গেল গত আসরের চার স্বর্ণেওপ্রাপ্তি। মাবিয়ারটি নিয়ে হলো পাঁচটি। ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণীতে মাবিয়া স্ন্যাচে ৮০ কেজি এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি, মোট ১৮৫ কেজি ভার তুলে নিজেকে নিয়ে যান সবার ওপরে। এর ফলে মাবিয়া পেছনে ফেলেন শ্রীলঙ্কার বিসি প্রিয়ান্থি (স্ন্যাচে ৮৩ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০১ কেজিসহ মোট ১৮৪ কেজি) এবং নেপালের তারা দেবীকে (স্ন্যাচে ৭৫ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ৯৭ কেজিসহ ১৭২ কেজি)। ২০১৬ এসএ গেমসে মাবিয়া স্বর্ণ জিতেছিলেন ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে ১৪৯ কেজি ভার তুলে। ১১০ কেজির জন্য দুবার ট্রাই করে পারেননি। তাহলে নতুন একটা রেকর্ড হয়ে যেত।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় মহিলা অ্যাথলেট হিসেবে এসএ গেমসের টানা দুই আসরে স্বর্ণজয়ের কৃতিত্ব দেখালেন মাবিয়া। এর আগে এসএ গেমসে বাংলাদেশী মহিলাদের মধ্যে টানা দুই আসরে স্বর্ণ জিতেছিলেন শুটার কাজী শাহানা পারভীন (শুটিংয়ের স্ট্যান্ডাড রাইফেল ইভেন্টে)।
প্রতিক্রিয়ায় মাবিয়া বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল। কোচ ও ফেডারেশন আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছে। নিজের প্রতি আমার যা বিশ্বাস ছিল, তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস আমার প্রতি ছিল ফেডারেশন ও কোচদের। এই পদক আমি তাদের উৎসর্গ করছি। তাদের আশা পূরণ করতে পেরেছি। দেশের সবার প্রত্যাশা ছিল আমাকে নিয়ে। সেটা পূরণ করতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘মাবিয়ার প্রতি আমাদের বিশ্বাস ছিল। সে প্রত্যাশা মিটিয়েছে। আমরা খুবই খুশি। তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।’
মাবিয়া সচরাচর যে ওজন শ্রেণীতে খেলে থাকেন, এবার সেই ওজনে খেলেননি। ওজন শ্রেণী বদলে যাওয়ার পর এটা কতটা চ্যালেঞ্জ ছিল? মাবিয়ার ভাষ্য, ‘হ্যাঁ, একটু চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। চার বছরের ব্যবধানে বয়সের সাথে সাথে ওজনও বাড়াটা স্বাভাবিক। এটা আমার কাছে রিস্ক মনে হয়নি। রিস্ক মনে হয়েছে দেশকে ঠিকমতো প্রতিনিধিত্ব করতে পারব কি না, দেশকে সাফল্য এনে দিতে পারব কি না।’
ভারত এবার ভারোত্তোলনে অংশ নেয়নি। এতেই সোনা জেতাটা অনেক সহজ হয়েছে বলে মনে করছেন কি না। জবাবে মাবিয়া বলেন, ‘না, এমনটা মনে করছি না। আমরা সবাই ভারতকে নিয়ে মাথা ঘামালেও শ্রীলঙ্কা কিন্তু অনেক ভালো খেলেছে, তারা কিন্তু মোটেও পিছিয়ে নেই। তাদের হারিয়েই আমাকে জিততে হয়েছে। তাদেরকে মোটেও গোনার বাইরে রাখা যাবে না। অসাধারণ খেলেছে তারা।’
‘কষ্ট’ শব্দটার সাথে সীমান্তর পরিচয় শৈশব থেকেই। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সেক্রেটারি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ প্রতিদিন মাবিয়াকে আসা-যাওয়ার ভাড়া দিতেন নিজের পকেট থেকে। টাকার অঙ্কটি খুবই ক্ষুদ্র, মাত্র ৫০ টাকা! কিন্তু মাবিয়ার জন্য সেটাই ছিল অনেক বড় কিছু। দোকানি বাবা কী যে কষ্ট করে তাদের তিন ভাইবোনকে বড় করেছেন, সেটা ভেবে আজও শিউরে ওঠেন এই মহিলা ভারোত্তোলক। ‘খেলাটিতে শরীর থেকে যে প্রাণশক্তি ক্ষয় হয়, সেটা পোষাতে রোজ খাদ্য-তালিকায় আমিষের উপস্থিতি দরকার। দুপুরে মাছ হলে রাতে গোশত, কিংবা দুপুরে গোশত হলে রাতে মাছ। সকাল-বিকেল দুধ-ডিমের খরচ তো আছেই। বাবা কষ্ট হলেও এগুলো জুগিয়ে গেছেন।’
এগুলো মোকাবেলা করেই সীমান্ত আজ এই অবস্থানে। আর্থিক প্রতিকূলতায় একসময় বন্ধ হয়ে যায় সীমান্তর লেখাপড়া। মামা বক্সিং কোচ শাহাদাত কাজী জোর করেই ভাগ্নীকে ভারোত্তোলন অনুশীলন করাতে শুরু করেন। সেই ভারোত্তোলন পাল্টে দিয়েছে সীমান্তর জীবন। রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করার যে প্রবণতা আছে, সব মোকাবেলা করেই প্রচ্ছদে এসেছেন মাবিয়া। আজ তিনি স্বর্ণকন্যা। স্বপ্ন দেখছেন অলিম্পিকের। হয়তো পূরণ করতে পারেন এই সাধও !


আরো সংবাদ



premium cement
সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে! ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৭ নোয়াখালীতে মেলায় সংর্ঘষ নিহত ১ কবরস্থান থেকে বৃদ্ধার বস্তাবন্দি লাশের রহস্য উন্মোচন : পুত্রবধূ ও নাতনি গ্রেফতার মিরসরাইয়ে বজ্রপাতে কৃষকের তিন গরুর মৃত্যু হবিগঞ্জে বাসচাপায় পিকআপের চালক ও হেলপার নিহত

সকল