১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইটভাটা ও বন নিধনে বিষাক্ত পরিবেশ

চকরিয়া ও লামায় এক মাসে ৫ হাতির মৃত্যু

-

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার পাহাড় কেটে ইটভাটা স্থাপন, বনভূমিতে অবৈধভাবে জনবসতি স্থাপনের কারণে বন্যহাতির বিচরণস্থল ও খাদ্যপ্রাপ্তিতে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে হাতির পাল প্রতিনিয়ত লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে। গত এক মাসে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়া ও লামা বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালীতে রোগাক্রান্ত হয়ে পাঁচটি হাতি মারা গেছে।
সূত্র মতে আগে কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগ ও লামা বনবিভাগের গভীর বনাঞ্চলে শত শত হাতির পালকে অবাধ বিচরণ করতে দেখা গেলেও এখন হাতির পাল তেমন দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে হাতেগোনা ১০-১৫টি হাতিকে বিচরণ করতে দেখা যায়। তাও খাদ্যসঙ্কটের কারণে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমন ও বোরো মৌসুমে হাতির পাল খাদ্যের সন্ধানে ধানক্ষেতে ছুটে যায়। এ সময় অসহায় কৃষকরা হাতির পাল তাড়াতে গিয়ে বন্দুক, আগুনের গোলা ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চালায়। অনেক সময় কৃষকদের ছোড়া গুলি ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে হাতি আক্রান্ত হয়ে পাহাড়ে ফিরে যায়। পরে আঘাতপ্রাপ্ত হাতির পচন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার নজিরও কম নেই। গত নভেম্বর মাসে চকরিয়া ও লামার বনাঞ্চলে পাঁচটি হাতি মারা গেছে। এর একটির বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর হবে। হাতিটি আঘাতজনিত কারণে মারা গেছে বলে ধারণা করেছে বন বিভাগ। ডুলাহাজরার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে দুই থেকে তিন বছর বয়সী যে চারটি বাচ্চা হাতি মারা গেছে সেগুলো ভাইরাসজনিত রোগে মারা গেছে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, মারা যাওয়া হাতিগুলোর রোগ নির্ণয়ের জন্য হাতির শরীরে বিশেষ কিছু অঙ্গ ঢাকার সিডিআইএল-এ পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে কী কারণে হাতিগুলো মারা গিয়েছে তা নির্ণয় করা যাবে।
অপর দিকে চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: সুপন নন্দীর সাথে হাতির মড়ক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ ক’মাস ধরে লামপি স্কিন ডিজিজ (ভাইরাসজনিত) রোগ দেখা দিয়েছে। গ্রামগঞ্জে এ রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হলেও বর্তমানে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাতির বাচ্চাগুলো এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সত্যতা তিনিও স্বীকার করেছেন।
অভিজ্ঞ ও পরিবেশবাদীদের মতে, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ডুলাহাজরা খুঁটাখালী, সুরাজপুর-মানিকপুর ও লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী, ফাইতং, ইয়াংছা, কুমারী, হিমছড়ি, আজিজনগরের গভীর বনাঞ্চল ছিল হাতির অভয়ারণ্য। বর্তমানে এসব এলাকায় হাতি বিচরণের মতো কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। এসব বনাঞ্চলে বিগত তিন দশকে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বসতবাড়ি ও অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ফলে বনে হাতির অবাধ বিচরণ এবং খাওয়ার মতো কোনো লতাপাতা, বাঁশঝাড় ও গাছপালা অবশিষ্ট নেই। এ ছাড়া ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে হাতি, হরিণ, বন মোরগ, অতিথি পাখিসহ সব ধরনের বন্যপ্রাণী অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এক সময় শীতের রাতে শিয়াল ও হরিণের শোর-চিৎকার শোনা গেলেও এখন তা আর শোনা যায় না। বন নিধন, বনাঞ্চলে জনবসতি ও ইটভাটা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে এখন দেখা পাওয়া স্বল্প সংখ্যক হাতিও আর বনে দেখা যাবে না।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী বন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ রেঞ্জের পাঁচটি বনবিটেই হাতির অভয়ারণ্য ছিল। বর্তমানে বন উজাড় ও বনভূমি জবর দখলের কারণে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র ছোট হয়ে গেছে। স্বল্প সংখ্যক বনকর্মী নিয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল