২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ডাক্তারদের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তারা বলবেন খালেদা জিয়া খারাপ আছেন : ফখরুল

৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হনয়া দিগন্ত -

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা নজিরবিহীন তো আমরাও বলছি। আমরা তো মনে করছি যে, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। যেখানে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অবস্থায়, অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তার চিকিৎসার জন্য বেল পিটিশন করা হয়েছে, সেটাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বরং যারা আদেশ মানল না তাদেরকে আরো সময় দিলেন, তারা আরো সময় নিয়ে এই রিপোর্টটা দেবেন। দুর্ভাগ্য এই দেশ ও জাতির।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’-এর উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক ছাত্র নেতা খোন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও হাবিবুল ইসলাম হাবিব বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আদালত অবমাননা করেছে। বিএসএমএমইউয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আদালত অবমাননা করেছেন। কোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের রিপোর্টটা ডাক্তারদের স্বাক্ষরসহ হাজির করতে হবে, তারা করেননি। ওই জন্যই তো আদালত অবমাননা হওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। বিচার বিভাগকে শ্রদ্ধা করি। তবে বিস্মিত হই যখন আদালতের নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হয়। এত কিছুর পরও আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি, হতাশ হয়েছি যে, প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশন তারা এ বিষয়টা লক্ষ করেননি এবং এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
সরকারের প্রধান কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল ‘দলীয়’ স্বার্থে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি কারাগারে আটক হয়ে আছেন শুধু নয়, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এত অসুস্থ যে, ডাক্তাররা বলেছেন যে, বিলম্ব হলে তাকে সুস্থ অবস্থায় আর পাওয়া যাবে না। এমনকি প্রাণহানিও হতে পারে। আমরা বলছি সব বাদ দেন- শুধু মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দিয়ে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
বিএসএমএমইউয়ের ভিসির ঘাড়ে কয়টা মাথা
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার এই মামলাকে কেন্দ্র করেই বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) খুব ভালো আছেন, সুস্থ আছেন, হুইল চেয়ারে আছেন, সেটাও ভালোভাবে আছেন। কথাটা হচ্ছেÑ চিফ এক্সিকিউটিভ অব দ্য গভর্নমেন্ট, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যখন বলেন যে, সব ঠিক আছেন, কোনো অসুবিধা নেই, তিনি সুস্থ আছেন। তখন তো বিএসএমএমইউয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বা ডাক্তারদের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে, তারা বলবেন তিনি খারাপ আছেন।
‘অর্থনীতির সব সূচক নিচের দিকে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার খালি মুখেই কথা বলে, একটা ঢোল পিটিয়ে বেড়ায় যে, আমরা উন্নতি করছি, জনগণের কল্যাণ করছি, উন্নয়নের রোল মডেল হচ্ছে বাংলাদেশ। আজকের পত্রিকা দেখলে বুঝতে পারবেন (একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন দেখিয়ে) প্রায় সব সূচক নি¤œগামী। অর্থাৎ অর্থনীতির সব সূচক নিচের দিকে যাচ্ছে। রফতানি আয় নিচের দিকে, ব্যাংকিং ঋণপত্র খোলা-নিষ্পত্তিকরণ তা নিচের দিকে, রাজস্ব আদায় নিচের দিকে, আমদানিও নিচের দিকে। অথচ ঢোল বাজানো হচ্ছে সবসময় উন্নয়ন আর উন্নয়ন।
তিনি বলেন, এখন গোটা জাতির সামনে চ্যালেঞ্জ- নব্বইয়ে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিল, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজকেও সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলমত নির্বিশেষ সব দল ও জনতার ঐক্য তৈরি করে এই দানবকে সরাতে হবে।
ফখরুল বলেন, সেই ঐক্য নিয়ে আজকে আন্দোলন করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে এবং যেটা ন্যায়সঙ্গত সেটা করতে হবে। আমাদের নেমে পড়তে হবে, দেশকে উদ্ধার করতে হবে, মানুষকে উদ্ধার করতে হবে, আমাদের নেত্রীকে উদ্ধার করতে হবেÑ এটাই একমাত্র কাজ, এটাই একমাত্র দায়িত্ব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে (গতকাল) ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবসÑ গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। দুঃখের কথা হচ্ছেÑ জাতি এই দিনটা ভুলে যাচ্ছে মনে হয়। আজকে পত্রিকা খুলে আমি ফ্রন্ট পেজে খুব কম জায়গায় দেখলাম যে, আজকের দিনটাকে স্মরণ করে দেয়া হয়েছে। যাদেরকে বলা হয়, চতুর্থ স্তম্ভ। অর্থাৎ গণতন্ত্রকে যারা ধরে রাখেন, গণতন্ত্রের বিবেক হিসেবে কাজ করেন, গণতন্ত্রের রক্ষার কবজ যাদের হাতে সেই মিডিয়া আজ (গতকাল) ৬ ডিসেম্বরকে ভুলে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement