২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সরকারের হস্তক্ষেপে জামিনে বাধা দেয়া হয় : মির্জা ফখরুল

-

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি পেছানোয় বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে জামিনে বাধা দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের পর গতকাল নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অভিমত তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্তে সমস্ত জাতি শুধু হতাশই হয়নি, বিক্ষুব্ধ হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন-বিক্ষুব্ধ। বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন জনগণের সরাসরি ভোটে, দুইবার বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং ৭৩ বছর বয়সে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নেতাকে জামিন না দেয়াটা প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধেই শুধু নয়, এটা অমানবিক আচরণ।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ক্রমাবণতিতে গোটা জাতি উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মুক্তি অবশ্যই প্রয়োজন। চিকিৎসা না হলে ফার্দার ট্রিটমেন্ট না হলে যেকোনো সময়ে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। আমরা খুব স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতির সমস্ত দায়-দায়িত্ব এবং চিকিৎসা না হওয়ার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ এই অনির্বাচিত সরকার ও সরকার প্রধানকে গ্রহণ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলরের দুইটি রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপনের বাধ্যবাধ্যকতা ছিল। একটি নতুন বোর্ড গঠন করে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়া এবং অন্যটি ৩০ নভেম্বর যে নতুন একটা বোর্ড তৈরি করা হয়েছিল সেই বোর্ডের রিপোর্টটি দেয়ার কথা ছিল। আমরা মনে করি, আজকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এই রিপোর্টটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত অবমাননা করেছে। এ জন্য যে এটা (রিপোর্ট প্রদান) আদালতের বাধ্যবাধকতা ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অপেক্ষা করব। ৭ দিনের কথা বলা হয়েছে। মুক্তি না দিলে কী করবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মুক্তি না দিলে স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবো। ৩০ নভেম্বর চার সদস্যের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের রিপোর্টের অংশ বিশেষ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই রিপোর্টের ওপরই কিন্তু তার জামিন হওয়ার কথা। তারপরেও আমরা যতটুকু জানি, বলতে পারেন যে, আন অফিসিয়াল সূত্রে আমরা জানি যে, গত রাতেই আপনার রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে আজকে তার জামিনকে বাধা দেয়া হয়। তিনি বলেন, দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ। তিনি মারাত্মক রিউমেটিড আর্থারাইটিজে আক্রান্ত। প্রতিদিন পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এখনই প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। পিজির চিকিৎসক যারা বোর্ডের সদস্য তারা যেটা মতামত দিয়েছেন, তা আপনাদেরকে বলেছি। তিনি এখন সাহায্য ছাড়া একেবারে চলতে পারেন না, বিছানা থেকেও উঠতে পারেন না কারো সাহায্য ছাড়া। এই মারাত্মক স্বাস্থ্যের অবণতির পরেও সরকার ক্রমাগত তার (খালেদা জিয়া) মুক্তিতে বাধা প্রদান করছে এবং জামিনে বাধা দিচ্ছে। দেশনেত্রী শুধু একজন সাধারণ নাগরিক নন, তিনি এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলে মনে করে। আজ এই ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কটে দেশনেত্রীর নেতৃত্ব জাতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। তার মুক্তির মধ্য দিয়ে এই সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে, এই বিচার চলাকালীন একটা মামলায় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিচ্ছে তা সরাসরিভাবে বিচার বিভাগের ওপরে হস্তক্ষেপের শামিল। আদালত অবমাননার শামিল ও কিছুটা রায়ের মতোই। এই ধরনের বক্তব্যে প্রমাণ হয়ে যায়, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ও তার সরকার চান না যে বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হন। ফখরুল বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কী বলেছেন আপনারা সবাই জানেন। তাকে গডফাদার বলে উল্লেখ করেছেন, তারপরে বলেছেন যে, তিনি রাজার হালে আছেন, আগের থেকেই হুইল চেয়ারে আছেন। সুতরাং এখনো হুইল চেয়ারেই থাকবেনÑ তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্যের অর্থটা দাঁড়ায় এটাই।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্র দায়ের ঘটনার মিল রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কাকতালীয় কি না জানি না, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাহেবের মামলার চার্জশিট হয়েছে। এক দিকে সাবেক প্রধান বিচারপতির মামলার চার্জশিট আরেক দিকে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি এই দুইটি জিনিস যদি মেলাই তাহলে পরিষ্কার করে বলতে পারি- ইটস এ থ্রেট টু ইন্ডিপেন্ডেন্ট জুডিশিয়ারি এবং ইটস এ থ্রেট ফর দ্য ডক্টরস যারা স্বাধীনভাবে একটা রিপোর্ট দেবেন। এর চাইতে অমানবিক আর কিছু হতে পারে না।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আফরোজা আব্বাস, মীর সরফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, সেলিম রেজা হাবিব, আনোয়ার হোসেইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement