২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীনগরে বাস-মাইক্রো সংঘর্ষে ১০ বরযাত্রী নিহত

অন্যস্থানে নিহত ৩, আহত ২
-

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত ও অপর সাতজন আহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষকসহ তিনজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ ও শ্রীনগর সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে শুক্রবার দুপুরে যাত্রীবোঝাই বাস ও মাইক্রোর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। বেলা ২টার দিকে জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন বরের বাবা আব্দুর রশিদ বেপারী (৬০), বোন লিজা (১৫), চাচা আব্দুল মফিজ (৫৮), ভাবী রুনা (২৫), ভাতিজা তাহসান (৩), ভাগ্নি তাবাসুস অবনি (৫), মামাত বোন রেনু (১০), ফুফাত ভাই জাহাঙ্গীর (৪৫), প্রতিবেশী কেরামত বেপারী (৬০) ও মাইক্রো চালক বিল্লাল (৪০)। এদের বাড়ি জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের কনকসার বটতলা গ্রামে। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বরের চাচাত ভাই আবু সাঈদ জানান, কনকসার বটতলা গ্রামের আব্দুর রশিদ বেপারীর ছেলে রুবেল ইসলাম বেপারীর (২৮) সাথে ঢাকার কামরাঙ্গীচরের মিশা আক্তারের কাবিন হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে নিজ বাড়ি থেকে পৃথক দু’টি মাইক্রোযোগে বরযাত্রীরা কামরাঙ্গীচরের কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এর মধ্যে বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রো দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে বর রুবেল ইসলাম বেপারী অপর মাইক্রোতে ছিলেন।
হাষাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আব্দুল বাসেদ জানান, বেলা ২টার দিকে ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকামুখী বরযাত্রীবাহী মাইক্রো ও মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের যাত্রীবোঝাই বাসের (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৮১৯৪) মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাইক্রোটি পুরোপুরি ও বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিক হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। আহতদের মধ্যে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দু’জন ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরো দু’জনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনরা শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। এ সময় প্রিয়জন হারানো স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন বরের মামাত বোন তানিয়া। দুর্ঘটনায় তানিয়ার আপন বোন রেনু মারা যান। তিনি বোনের লাশের সামনে বিলাপ করতে থাকেন।
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চাপায় এক মোটরবাইকচালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। নিহত মিলন শেখ (২২) উপজেলার চালতিপাড়া গ্রামের শাহআলম শেখের, ছেলে এবং গুরুতর আহত মো: কবির হোসেন সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি। ঘাতক বাসটির ড্রাইভার পালিয়ে গেলেও বাসটি আটক করেছে হাসাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নিমতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো: আব্দুল বাসেত জানান, গতকাল সকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নিমতলা নামক স্থানে ঢাকাগামী বসুমতি পরিবহন একটি বাস মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে দুই মোটরসাইকেল আরোহী আহত হয়। গুরুতর আহত দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পথে মিলন শেখ মারা যায়, আর আহত কবির হোসেনকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। বাসটি হাইওয়ে থানায় আটক আছে।
তজুমদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, ভোলার তজুমদ্দিন-কুঞ্জেরহাট সড়কে ফায়ার সার্ভিসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী একজন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতকে প্রথমে তজুমদ্দিন পরে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের লাশ পুলিশ ভোলা মর্গে পাঠিয়েছে। থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার ভোরে ওই সড়কের বাবড়ি মসজিদ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের মোটরসাইকেলটিকে চাপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল আরোহী ভোলার বাপ্তা ইউনিয়নের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে মো: জাকির (৪০) নিহত হন। একই ঠিকানার রতন খলিফার ছেলে শামীম (৩০) গুরুতর আহত হন। তারা তজুমদ্দিনে মডেল মসজিদ নির্মাণকাজে নিয়োজিত ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের অপর একটি গাড়ি দুইজনকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে আসে।
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশীদের পরিবারে চলছে মাতম। নিহত হারুন-অর-রশীদ পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা কুতুব আলীর ছেলে। তিনি নারান্দী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তার লাশ বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি নিয়ে এলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশীদ গত গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পাকুন্দিয়া থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। গাজীপুরের সালনা এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে একটি মাইক্রোবাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দিলে তিনি সড়কে ছিটকে পড়ে যান।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি তাবলিগ জামাতের একজন শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ছিলেন। তার মৃত্যুতে নারান্দীসহ পুরো পাকুন্দিয়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

 


আরো সংবাদ



premium cement