২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঐতিহাসিক টেস্টে ভৌতিক ইনিংস

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ১০৬ (৩০.৩ ওভার); ভারত প্রথম ইনিংস ১৭৪/৩ (৪৬ ওভার)
-

ভারতই নয়Ñ পৃথিবীর টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর দৃষ্টি ছিল কলকাতায়। নির্দিষ্ট করে বললে নন্দনকানন ইডেন গার্ডেনসে। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাচীন এ স্টেডিয়ামে ইতিহাস সৃষ্টি হবে। দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ খেলবে ভারত ও বাংলাদেশ। তাও আবার প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে। শুধু সাধারণ দর্শকই না, এ ম্যাচ নিয়ে রোমাঞ্চিত ছিলেন শচীন টেন্ডুলকারসহ জীবন্ত কিংবদন্তিদেরও। ইডেনের এ টেস্টে ছিল ক্রিকেট তারকাদের মিলনমেলা। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা সব তারকারা আগেই পা রেখেছেন কলকাতায়।
গোলাপি বলে বাংলাদেশ ও ভারত এ প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট খেলছে। ঐতিহাসিক এ ম্যাচ দেখতে ইডেনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তারা দু’জনে ঘণ্টা বাজিয়ে এ ম্যাচের উদ্বোধন করেন। ইন্দোরে প্রথম টেস্ট হেরে ১-০তে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
সিটি অব জয়, কলকাতা সবসময়ই প্রাণোচ্ছল রঙিন এক নগর। তবে উপমহাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ সামনে রেখে এবার কলকাতাকে নতুন রূপে দেখেছে বিশ্ব। কোটি ক্রিকেট ভক্তের মধ্যে ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছেন ৬৫ হাজার দর্শক যারা মাঠে বসে দেখছেন এ ম্যাচ। কিন্তু ভক্তদের রোমাঞ্চের শেষ ছিল না। বেলা দেড়টায় খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই দর্শকরা ভিড় করেছে ইডেনের সামনে। শুধু কলকাতা না। বাংলাদেশ থেকে এই ম্যাচের সাক্ষী হতে অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন সেখানে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেও ছিল না কোনো ক্লান্তির ছাপ।
ইডেনে গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্টের প্রথম ইনিংসটা নিশ্চয়ই মনে রাখতে চাইবে না বাংলাদেশ। ভারতীয় বোলারদের ইনসুইং আউটসুইং ডেলিভারিতে প্রথম দেড় সেশনেই গুটিয়ে গেছে টাইগাররা। মাত্র ৩০.৩ ওভারেই ১০৬ রান তুলতেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। ওপেনার সাদমান ইসলামের ২৯, লিটন দাসের ২৪ (রিটায়ার্ড হাট) এবং নাইম হাসানের ১৯ ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মাত্র ৪ রান করে ফেরেন ইমরুল কায়েস। এরপর মুমিনুল, মিঠুন এবং মুশফিক পর পর শূন্য রানে বিদায় হন। মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৬ রান। ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া বাংলাদেশের হয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন লিটন দাস। ২৪ রানে তিনি বলের আঘাতে আহত হয়ে ফেরার পর নাঈম ১৯, লিটনের পরিবর্তে মাঠে নামা মেহেদী ৮ রানে ফিরলে প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১০৬ রানে।
প্রথম ইনিংসই মূলত নিজেদের করে নিয়েছেন ভারতীয় বোলারা। বল হাতে একাই পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মা। ১২ ওভারে ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন ইমরুল, মুশফিক, নাইম, এবাদত এবং মেহেদী মিরজের উইকেট। এ ছাড়া ৭ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন উমেশ যাদভ। বাকি দু’টি উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি।
এ দিকে ভারত লিড নিয়েই প্রথম ইনিংস শেষ করেছে। ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে মোটামুটি ভালো বোলিং করলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারেননি এবাদত হোসেন। উইকেটও পান মাত্র একটা। তবে ইডেনে গতকাল গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটের আলোয় ঠিকই নিজেকে ফিরে পেয়েছেন এই পেসার। ভারতীয় ইনিংসে যে ৩ উইকেট পড়েছে, তার মধ্যে দু’টিই নিয়েছেন এবাদত। ভেঙেছেন বিরাট কোহলি আর চেতেশ্বর পুজারার ৯৪ রানের থিতু জুটিটাও।
২৬ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর টেস্টে ফেরা আল আমিন হোসেনকে খেলতে গিয়ে গালিতে বদলি ফিল্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ হন ১৪ রান করা মায়াঙ্ক আগারওয়াল। চা-বিরতির পর সাজঘরে ফেরেন রোহিত। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ২১ রানেই থামে তার ইনিংসটি। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত এরপর ঘুরে দাঁড়ায় কোহলি-পুজারার জুটিতে। ৯৪ রান যোগ করেন তারা। শেষ পর্যন্ত এই জুটিটিও ভাঙেন এবাদত। হাফ সেঞ্চুরিয়ান (৫৫) পুজারাকে দ্বিতীয় স্লিপে সাদমান ইসলামের ক্যাচ বানান তিনি। দিনশেষে ভারত প্রথম ইনিংসে করেছে ৩ উইকেটে ১৭৪ রান। ফলে ৬৮ রানে লিড নিয়েছে ভারত। বিরাট কোহলি ৫৯ রানে এবং অজিঙ্কা রাহানে ২৩ রানে অপরাজিত আছেন।

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-ভারত
দ্বিতীয় টেস্ট
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস
রান বল ৪ ৬
সাদমান ক সাহা ব শর্মা ২৯ ৫২ ৫ ০
ইমরুল এলবিডব্লিউ ব শর্মা ৪ ১৫ ০ ০
মুমিনুল ক সাহা ব জাদব ০ ৭ ০ ০
মিথুন ব জাদব ০ ২ ০ ০
মুশফিক ব সামি ০ ৪ ০ ০
মাহমুদুল্লাহ ক সাহা ব শর্মা ৬ ২১ ১ ০
লিটন আঘাতপ্রাপ্ত অবসর ২৪ ২৭ ৫ ০
নাঈম হাসান ব সাহা ১৯ ২৮ ৪ ০
এবাদত ব সাহা ১ ৭ ০ ০
মিরাজ ক পুজারা ব শর্মা ৮ ১৩ ২ ০
আল আমিন অপরাজিত ১ ৪ ০ ০
আবু জায়েদ ব পুজারা ব সামি ০ ৩ ০ ০
অতিরিক্ত (বা-৮, লেবা-৬) ১৪
মোট (অলআউট, ৩০.৩ ওভার) ১০৬
উইকেট পতন : ১/১৫, ২/১৭, ৩/১৭, ৪/২৬, ৫/৩৮, ৬/৬০, ৭/৮২, ৮/৯৮, ৯/১০৫।
বোলিং : শর্মা ১২-৪-২২-৫, জাদব ৭-২-২৯-৩, সামি ১০.৩-২-৩৬-২, জাদেজা ১-০-৫-০।
ভারত প্রথম ইনিংস
রান বল ৪ ৬
আগারওয়াল ক মিরাজ ক আলআমিন ১৪ ২১ ৩ ০
শর্মা এলবিডব্লিউ ব এবাদত ২১ ৩৫ ২ ১
পুজারা ক সাদমান ব এবাদত ৫৫ ১০৫ ৮ ০
কোহলি অপরাজিত ৫৯ ৯৩ ৮ ০
রাহানে অপরাজিত ২৩ ২১ ৩ ০
অতিরিক্ত (লেবা-১, ও-১) ২
মোট (৩ উইকেটে, ৪৬ ওভার) ১৭৪
উইকেট পতন : ১/২৬, ২/৪৩, ৩/১৩৭।
বোলিং : আল আমিন ১৪-৩-৪৯-১, আবু জায়েদ ১২-৩-৪০-০, এবাদত ১২-১-৬১-২।


আরো সংবাদ



premium cement