২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেশি দামে লবণ বিক্রি

বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা ও কারাদণ্ড

-

গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে লবণের দাম অনেক বেড়ে যাবে। এতে আতঙ্কিত হয়ে লোকজন দোকানে দোকানে ভিড় জমায়। আর এ সুযোগে দোকানিরা অধিক দাম আদায় করে ক্রেতাদের কাছ থেকে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, লবণের কেজি কমপক্ষে ৩০০ টাকা হবে- এমন গুজবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন এলাকায় লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকানে ক্রেতাদের লাইন দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনতে দেখা গেছে। তবে গতকাল বুধবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল এবং কোথাও বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগ শোনা যায়নি।
লবণের দাম বাড়ানোয় সাভারের কিছু এলাকায় ব্যবসায়ীদের সাথে ক্রেতাদের হাতাহাতিও হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ৩৫ টাকা কেজির লবণ এলাকা ভেদে ৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। গ্রাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য হয়েছে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে জোরালো ভূমিকা নেয়ায় রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় বাড়তি দামে লবণ বিক্রির দায়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড, নামা বাজার, গেন্ডা, উলাইল, হেমায়েতপুর ও আমিনবাজারে ১৭ জনকে আটক ও জেল-জরিমানা করা হয়। সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পারভেজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ মাহফুজ দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
লবণের দাম বেশি রাখায় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের জয়নাবাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালত একজনকে দু’দিনের জেল, শ্যামপুর এলাকায় একজনকে ১৫ দিনের ও একজনকে দুই মাসের জেল, হরিণধরা এলাকায় একজনকে ছয় মাসের জেল ও ঝাউচর এলাকায় একজনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এদিকে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সাভার উপজেলা প্রশাসন চারটি টিম গঠন করেছে। অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রি না করতে সাভারের নামাবাজার এলাকায় মাইকিং করেন সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জাকারিয়া হোসেন।
সাভার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার লিটন আহমদ জানান, তিনি বিকেলে প্রথমে ব্যাংক টাউন এলাকায় কাঁচা বাজার করতে গেলে লবণের দাম বেশি চাওয়া হয়। পরে তিনি উলাইল বাজারের এক দোকানির কাছে দুই কেজি লবণ চাইলে দোকানি ২০০ টাকা দাম চায়। বিষয়টি তিনি সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পারভেজুর রহমানকে ফোনে জানালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে লতিফ জেনারেল স্টেশনারির মালিক আব্দুল লতিফকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নড়াইলে ৫ ক্রেতা-বিক্রেতাকে কারাদণ্ড
নড়াইল সংবাদদাতা জানান, নড়াইলে অধিক দামে লবণ কেনাবেচা এবং গুজব ছড়ানোয় পাঁচ ক্রেতা-বিক্রেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নড়াইলের বিভিন্ন বাজারে এ জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ বাজারে এক ক্রেতা, নাকশি-মাদরাসা বাজারে এক বিক্রেতা ও লোহাগড়ায় তিনজনকে জরিমানা করা হয়। এ সময় প্রায় ২০০ কেজি লবণ উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া লবণের দাম বৃদ্ধি না পাওয়া এবং এক সাথে অনেক লবণ কিনে মজুদ না করতে জনসাধারণের উদ্দেশে মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলেন, লবণ নিয়ে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোথাও লবণ বেশি দামে বিক্রি ও গুজব ছড়ানো হলে এবং মজুদ রাখলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
চাঁদপুরে ১০ জনকে জরিমানা
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, যারা লবণের দাম বাড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে গত মঙ্গলবার ১০ বিক্রেতাকে ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। অনেককে আটক করে অঙ্গীকারনামা রেখে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো: মাজেদুর রহমান খান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির গুজব প্রতিরোধে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
চাঁদপুর সদরে লবণ ও পেঁয়াজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করায় শহরের বিপণিবাগের মেসার্স বাচ্চু মিয়া স্টোরকে পাঁচ হাজার টাকা ও শহরের ঘোষপাড়ায় মুদি দোকানি খোকন মিজিকে পাঁচ হাজার টাকা ও মুদি দোকানি তুষার ঘোষকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে ফরিদগঞ্জে মাইকিং করা হয়েছে। গুজবের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ও লবণের দাম বাড়ানোয় পুলিশ তিনজনকে আটক এবং রতন সাহা ও ইব্রাহীম নামে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। একই অভিযোগে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ মহসীন (৫০), গৌতম সাহা (৪২) ও সুমনকে (৩৬) আটক করে। তাদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। একই অভিযোগে মতলব দক্ষিণ উপজেলার মাস্টার বাজার, মুন্সিরহাট ও পিংড়া বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রি করায় তিন ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা ও হাজীগঞ্জে দুই ব্যবসায়ীকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো: মাজেদুর রহমান খান বলেছেন, লবণ নিয়ে একটি চক্র গুজব ছড়াচ্ছে। গুজবের কারণে একটি অসাধু মহলের পকেট ভারী হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির গুজব প্রতিরোধের লক্ষ্যে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
লবণ বিক্রেতার ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, ভূরুঙ্গামারীতে লবণের দামবৃদ্ধির গুজব রোধে অভিযান চালিয়ে দুই ব্যবসায়ীকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাগফুরুল হাসান আব্বাসী বাসস্ট্যান্ডের কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় লিমন স্টোরে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির সত্যতা মেলায় স্বত্বাধিকারী ফরিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। লিমন স্টোরে ৩০ টাকার লবণ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছিল। এ ছাড়া পাইকের ছড়া ইউনিয়নের পাটেশ্বরী বাজারে ৩০ টাকার লবণের দাম ৬০ টাকা চাওয়ায় নুরুল ইসলামকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অপর দিকে জনতা ১২০ কেজি লবণ আটক করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে। জানা যায় লবণগুলো মজুদ করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মনিরহাট বাজারে বেশি দামে লবণ বিক্রি করার অভিযোগে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ আব্দুল কুদ্দুস (৩৫) ও দুলাল সাহা (৫০) নামে দুই ব্যবসায়ীকে আটক করে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চিলমারীতে গত মঙ্গলবার লবণ কিনতে দোকানে দোকানে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দোকানিরা প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি নেয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে লবণের দাম বেড়ে কেজি ১০০ থেকে ২০০ টাকা হতে পারে। এ গুজবে থানাহাট, জোড়গাছ, বালাবাড়িহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মুদি দোকানগুলোতে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। কেউ কেউ পাঁচ কেজি থেকে শুরু করে পুরো বস্তা পর্যন্ত কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কেজি প্রতি পাঁচ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
থানাহাট বাজারে লবণ কিনতে আসা রাজারভিটা এলাকার নজরুল জানান, বাড়ির পাশে দোকানে লবণ কিনতে গেলে ৩০ টাকা কেজির এক প্যাকেট লবণ প্রথমে ৬০ টাকা ও পরে ৮০ টাকা চায়। এ সময় লবণ নিতে আসা কোহিনুর, রতনসহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, হঠাৎ শুনতে পান লবণের দাম ১০০ টাকার উপরে যাবে তাই ছুটে এসেছেন খোলা লবণ কিনতে। যদিও সন্ধ্যায় প্রশাসন মাঠে নামলে কিছুটা সময় লবণের দাম ঠিক ছিল। কিন্তু এর পরপরই আবারো কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।


আরো সংবাদ



premium cement