১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিমানে পেঁয়াজ আসবে আজ

বিপদে আছি : বাণিজ্যমন্ত্রী
-

কার্গো বিমানে পেঁয়াজের প্রথম চালান ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি। গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেঁয়াজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে বিপদে আছি। আজ যে পেঁয়াজ আসার কথা ছিল সেটা লোডিং পর্যায়ে সমস্যা হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছাবে। একই সাথে কাল থেকে প্রতিদিন আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ আসবে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে কার্গো বিমানে আসবে ৫০ হাজার টন। এ সময় বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিমানে আনা পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দেবে। কাল পেঁয়াজবাহী কার্গো দেশে পৌঁছালেই চার-পাঁচ শ’ ট্রাক ভরে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবো যাতে সব জায়গায় দামটা কমে যায়। এ ছাড়া আগামী সাত দিনের মাথায় নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন পেঁয়াজের দাম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্রে জানা গেছে, প্রক্রিয়াগত কারণে মিসর থেকে পেঁয়াজ আসতে আরো এক দিন দেরি হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিকারক এস আলম গ্রুপ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে মঙ্গলবার রাতে মিসর থেকে পেঁয়াজের যে চালানটি আসার কথা ছিল তা বুধবার রাতে ঢাকা পৌঁছাবে।
উল্লেখ্য, কিছু দিন ধরে পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ডের পর এস আলম মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে শনিবার অথবা রোববার মিসর থেকে পেঁয়াজ আসছে বলে জানানো হয়। পরে গত সোমবার বাণিজ্য সচিব এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার রাতে আসার কথা জানান। কিন্তু মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে জানা যায় মিসর থেকে পেঁয়াজ আসতে বুধবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম বিভাগ তৈরি আছে। পেঁয়াজবাহী বিমানটি ঢাকায় অবতরণের সাথে সাথে দ্রুততার সাথে ছাড় করার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে প্রথম চালানটি আসবে বুধবার রাতে। এর পরদিন বিসমিল্লাহ এয়ারলাইনসের পণ্যবাহী উড়োজাহাজে দ্বিতীয় চালান আসবে এবং শুক্রবার সৌদিয়া এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে তৃতীয় চালান আসবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে শুধু শুল্কায়নের কাজই নয়। এ ছাড়াও আমদানিকৃত পেঁয়াজে কোনো ক্ষতিকর পোকামাকড় আছে কি না সেটাও পরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়ম দ্রুত পালন শেষে আমদানি করা পেঁয়াজ টিসিবির কাছে হস্তান্তর করবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। পরে তা দেশজুড়ে সরবরাহ করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধির জন্য সরকার শুরু থেকেই আমদানিকারকদের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে এবং মিয়ানমার পেঁয়াজের মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করলে বিকল্প হিসেবে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়।
তিনি বলেন, সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আসতে সময় বেশি লাগার কারণে এখন তা আকাশ পথে আমদানি করা হচ্ছে। দেশে দৈনিক প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। দেশে মজুদ এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ মিলে তা পর্যাপ্ত হবে। ইতোমধ্যে দেশীয় পেঁয়াজ পর্যাপ্ত বাজারে আসবে। সামনে কোনো সমস্যা হবে না।
টিপু মুন্শি বলেন, আমাদের প্রতি বছর আট থেকে দশ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এর বেশির ভাগই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এখন আমদানিনির্ভর না থেকে চাহিদার পুরো পেঁয়াজই দেশে উৎপাদনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য কৃষকদের ভর্তুকি ও উৎসাহ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে পেঁয়াজ সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানির কারণে যাতে দেশের কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে সময় পেঁয়াজ আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। কৃষকেরা যাতে পেঁয়াজের উপযুক্ত মূল্য পান, তা নিশ্চিত করা হবে।
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক জানান, কার্গো বিমানযোগে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় থমকে দাঁড়ানো পেঁয়াজের বাজারে এখন গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে। ঘোষণা অনুযায়ী কার্গো বিমানের প্রথম চালান গতকাল দেশে না পৌঁছায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ বাজারে গতকাল পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি বললেই চলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী পেঁয়াজবাহী প্রথম বিমান গতকাল মঙ্গলবার দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু বিকেল ৪টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেন, বিমানে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান আজকে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সেটা আজ বুধবার আসবে। গত শনিবার রাজধানীতে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে। কার্গো বিমান ভাড়া করে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। কাল-পরশু পেঁয়াজ এলে দাম কমে যাবে।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। আড়ত, পাইকারি কিংবা খুচরা বাজার কোথাও ক্রেতা নেই। মজুদ করা পেঁয়াজ যে যার মতো করে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে সব বাজারেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে আগের দিন যেখানে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল সেখানে গতকাল বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে আগের দিন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশী পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। দেশী হাইব্রিড পেঁয়াজ ১৬০ টাকা এবং চীন ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকগুলোর সামনে গতকালও যথারীতি উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। এ সময় নি¤œ আয়ের মানুষদের তিন ঘণ্টা লাইন ধরে ট্রাকের অপেক্ষায় থেকে ন্যায্যমূল্যের পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায়।
এ দিকে কার্গো বিমানে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান পৌঁছানোর সময় এক দিন পিছিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি। মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে বিপদে আছি। তবে বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে। পেঁয়াজ লোডিংয়ে সমস্যা হওয়ায় ২৪ ঘণ্টা পিছিয়েছে। তিনি বলেন, বিমানে আনা পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দেবে। আজ বুধবার পেঁয়াজবাহী প্লেন দেশে পৌঁছালেই চার-পাঁচ শ’ ট্রাক ভরে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবো, যাতে সব জায়গায় দামটা কমে যায়।
খিলগাঁও বাজারে খুচরা বিক্রেতা সোলায়মান তার দোকানের সামনে মূল্য তালিকায় পেঁয়াজের ঘরে লিখেছেন ক্রয়মূল্য ২০০, বিক্রয়মূল্য ২০০। লেখার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাজার যখন চড়া ছিল তখন ২০০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। এখন বাজার কমে গেছে। কম দামে বিক্রি করি কিভাবে? তাই অপেক্ষা করছি। ে
রাজবাড়ীর বাজারে নতুন পেঁয়াজ : দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, টানা দুই সপ্তাহ আকাশচুম্বী দামে কেনাবেচার পর রাজবাড়ীর বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। রাজবাড়ীর বড় বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। এ দিকে পেঁয়াজের বাড়তি মূল্য দেখে বাড়তি যতœ নিচ্ছেন রাজবাড়ীর কৃষকেরা। তারা বলছেন, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি বাজারে আসবে। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে এলেই অনেক কমে আসবে পেঁয়াজের দাম। রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছরও রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে কালুখালী উপজেলায়। এ আবাদ থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন তারা।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়ার চরাঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে মাঠের পর মাঠ মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি দাম দেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ তুলতে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা। কৃষক হারুণ মোল্লা বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করতে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। গত বছর পেঁয়াজ তোলার সময় বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ পচে যায়। তাই গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে আমার আড়াই লাখ টাকা লোকসান হয়। ঢাকার শ্যামবাজারে পেঁয়াজ নিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। আমরা যেই ট্রাকে করে পেঁয়াজ নিয়েছি তার ভাড়া দেয়াই কষ্টকর হয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সেখ বলেন, জেলায় প্রতি বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। সারা দেশের বাজারের শতকরা ১৩ ভাগ পেঁয়াজ রাজবাড়ী থেকে জোগান দেয়া হয়। পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের প্রণোদনা ও প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তারা সব সময় পরামর্শ দিয়ে আসছেন।


আরো সংবাদ



premium cement