২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আউটসোর্সিংয়ে একজনের বেতন দেড় লাখ টাকা

লাইন স্থাপনে প্রতি কিমি. খরচ ১১.১১ কোটি টাকা
-

উন্নয়ন প্রকল্পে কিছু কিছু খাতে ব্যয়ের অঙ্ক প্রকল্পকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অস্বাভাবিক ব্যয় প্রাক্কলন বা বরাদ্দের কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও অনেক বেশি হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করতে মেইন লাইন নির্মাণ প্রকল্পে আউট সোর্সিং জনবলের মাথাপিছু বেতন ধরা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। যেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত নিরাপত্তা প্রকল্পে জনপ্রতি মাসে বেতন ৩৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। আউটসোর্সিং খাতে আটজনের জন্য ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পরিকল্পনা কমিশনে। বিষয়টিকে মাত্রাতিরিক্ত বলেও অভিহিত করেছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
ঢাকা ওয়াসার প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৬৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকায় পদ্মা (যশোলদিয়া) পানি শোধনাগারের ফেজ-১) পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরে সরবরাহের জন্য মেইন লাইন নির্মাণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। দুই বছরের এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে মিটফোর্ড, বাবুবাজার, সদরঘাট, লালবাগ, ধানমন্ডি, পিলখানা, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া ও তৎসংলগ্ন এলাকার জনগোষ্ঠী। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার জনগণ উপকৃত হবে।
ঢাকা ওয়াসার প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নগরবাসীকে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ‘পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার ফেইজ-১’ নামে প্রকল্পটি চলমান আছে। ওয়াসার দায়িত্ব হলো পাইপ লাইনের মাধ্যমে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করা। বর্তমানে ওয়াসা দৈনিক গড়ে ২৪০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। যার ৭৮ শতাংশ ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে প্রায় ৯০০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে এবং ২২ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠস্থ উৎস থেকে পাঁচটি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরে বসবাসরত আড়াই কোটির দৈনিক পানির চাহিদা হচ্ছে প্রায় ২৪০ কোটি লিটার। বর্তমানে জনসংখ্যার হার ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। অন্য দিকে কমছে গভীর নলকূপের উৎপাদনক্ষমতা। এ দু’টি নগরে ২০২৫ সালে জনসংখ্যা তিন কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অন্য দিকে মানুষের পানির ব্যবহারের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। ২০২৩ সালে দৈনিক চাহিদা হবে ৩৫০ কোটি লিটার।
সরবরাহ লাইন নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন খাত ও ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে খোদ ভৌত পরিকল্পনা বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। তারা প্রকল্পের অনেক খাতের ব্যয়ের অঙ্কের ব্যাপারে স্বচ্ছতা পাচ্ছেন না বলেও জানান। ওয়াসার প্রস্তাবনায় প্রকল্পের আওতায় ১১ কর্মকর্তাকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া বলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের জনবল সংক্রান্ত কমিটির কোনো সুপারিশই গ্রহণ করা হয়নি। নিয়ম অনুসারে এ কমিটির সুপারিশ ছাড়া জনবল সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব দেয়ার কথা যৌক্তিক নয়। এখানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আটজন জনবল নেয়া হবে। তাদের জন্য দুই বছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রস্তাবনায় ওয়াসা এখানে প্রশাসনিক বিবিধ ব্যয়ও উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিস্তারিতভাবে কোনো কিছু প্রকাশ করেনি। এই আটজনের বেতন ২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরা হলে তাতে জনপ্রতি মাসে ব্যয় হবে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অথচ রূপপুর প্রকল্পের ভৌত নিরাপত্তার প্রকল্পে ১১ জনকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। ওই জনবলের জন্য ৪২ মাসে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এখানে মাসে জনপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকার কিছু বেশি।
অন্য দিকে, ৪০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কাজসহ এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৫১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটারে লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ১১ কোটি ১১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। যেখানে সদ্য সমাপ্ত ৩৭ জেলায় পানি সরবরাহ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে নতুন সরবরাহ লাইন নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এক হাজার ৩২০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৯৮ কোটি টাকা। আর ১২টি কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কেনা বাবদ মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। কোন কম্পিউটারে কত ব্যয় হবে তারও উল্লেখ নেই।
এ দিকে প্রস্তাবনায় নতুন করে নিয়োগ দেয়া ১১ কর্মকর্তার জন্য বেতন ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা। এর বাইরে দায়িত্বভার ভাতা ৬ লাখ টাকা। অন্য কোনো প্রকল্পে এ ধরনের খাতের উল্লেখ নেই। সেখানে বদলি ভাতা বলে খাত পাওয়া গেছে। আপ্যায়ন ভাতা ৫ লাখ টাকা ও সম্মানী ভাতা ধরা হয়েছে ৫০ লাখ। অর্থাৎ দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পে ১১ কর্মকর্তার পেছনে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বিস্তারিতভাবে ব্যয়গুলো উল্লেখ না করাটা অপরিচ্ছন্ন বলেও কমিশনের সংশ্লিষ্টরা অভিমত প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্ম প্রধানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখনো পিইসি সভা হয়নি। বিভিন্ন খাতের বিস্তারিত ঢাকা ওয়াসাই ভালো বলতে পারবে।
ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো: কামরুল হাসানের সাথে গত রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement