২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
অব্যবস্থাপনায় লাভজনক খাতটি হাতছাড়া হচ্ছে

লন্ডন রুটে বিমানের কার্গোতে মাসে লোকসান দেড় কোটি টাকা

-

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন রুটে কার্গো ব্যবসায় প্রতি মাসে লোকসান গুনতে হচ্ছে দেড় কোটি টাকারও বেশি। গত এক যুগ ধরে অন্যতম লাভজনক এই রুটে কার্গো সেক্টরের একচেটিয়া ব্যবসা করে বিমানের আয়ের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হলেও তা হঠাৎ করে মুখথুবড়ে পড়েছে। সম্ভাবনাময় এই ব্যবসাটি এখন চলে যাচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর দখলে।
অভিযোগ উঠেছে, বিমানের নতুন ইউকে কান্ট্রি ম্যানেজার হারুন খানের কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে হাতছাড়া হতে চলেছে বিপুল সম্ভাবনাময় এই কার্গো সেক্টর।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বিমানের কার্গো থেকে আয় ছিল বাংলাদেশী মুদ্রায় যথাক্রমে চার কোটি ২২ লাখ টাকা, চার কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও চার কোটি ৩২ লাখ। সেখানে এ বছর ২০১৯ সালের একই সময়ে তা নেমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে দুই কোটি ৮২ লাখ, তিন কোটি ৯ লাখ ও তিন কোটি টাকায়। গড়ে প্রতি মাসে কার্গো সেলস কমে এসেছে দেড় কোটি টাকায়। বছর হিসাবে যা প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
লন্ডনে কার্গো ব্যবসায় সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নতুন কান্ট্রি ম্যানেজার লন্ডনে আসার পর থেকে প্রতি মাসে এভাবেই লোকসান গুনছে বিমানের লন্ডন রুটের কার্গো শাখা। অথচ বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে কার্গো সেক্টরে বিমান লাভজনক অবস্থায় ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিমানের কার্গো শাখায় লাভজনক এ রুটে হঠাৎ লোকসানে কর্তৃপক্ষ বিবৃত। এ জন্য কান্ট্রি ম্যানেজার হারুন খানের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। হারুন লোকসানের বিষয়টি স্বীকার করলেও কারণ জানাতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন কান্ট্রি ম্যানেজার বিমানের লন্ডন অফিসে নিয়োগ লাভের আগে মালয়েশিয়ায় কান্ট্রি ম্যানেজার ছিলেন। গত বছর জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে পোস্টিং দেয়া হয় লন্ডন অফিসে। তিনি লন্ডন অফিসে এসেই বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ নিয়ম চালু করেন। বিমানের ইতিহাসে যেখানে কমপক্ষে তিন মাস পর কার্গোর মূল্য পরিবর্তনের নিয়ম রয়েছে সেখানে হারুন খান নিজ ক্ষমতাবলে এক মাসেই তিনবার কার্গো মূল্য পরিবর্তন করেন, যা ব্রিটেনের কার্গো মার্কেটের চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ ছাড়া বাংলাদেশী মালিকানাধীন কার্গো প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের নিয়মিত বরাদ্দকৃত কার্গো স্পেস কমিয়ে আনারও অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে লন্ডন থেকে কার্গো অনেক খালি যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লন্ডনে থাকা কান্ট্রি ম্যানেজার হারুন খান এ বিষয়ে বাংলাদেশে বিমানের পিআরো’র সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। মোবাইল ভাইবারে তিনি বলন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু বলার নেই। অফিসিয়িলি আপনি তথ্য চাইলে ফাইল বের করে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে হয়তো জবাব দেবেন।’
২০০৯ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন স্টেশনের জন্য কার্গো জিএসএ নিয়োগ করে; কিন্তু জিএসএ নিয়োগ করলেও কার্গো ব্যবসা প্রসারে এই জিএসএ এককভাবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কমিউনিটির কার্গো ব্যবসায়ীরা নিজস্ব প্রচেষ্টায়, মিডিয়াতে প্রচার ও প্রসার করে কার্গো ব্যবসাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। প্রায়ই ১০টি কার্গো প্রতিষ্ঠান সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। ২০১১ সালে বিমানবহরে বোয়িং ট্রিপল সেভেন যুক্ত হলে লন্ডন রুটে কার্গো ব্যবসা দ্বিগুণ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে লন্ডন রুটে চারটি ফ্লাইট চালু হলে কার্গো স্পেস বৃদ্ধি পায় এবং কার্গো ব্যবসা ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে; কিন্তু গত বছর ২০১৮ সালে হঠাৎ করে বিমান কর্তৃপক্ষ জিএসএ বাতিল করে। জিএসএ নিজস্ব দায়িত্বে নেয়ার ফলে এটি আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় পড়ে। এ ছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও ম্যানেজারদের ক্ষমতার অপব্যবহার।
প্রবাসীরা জানান, ব্রিটেনে দশ লক্ষাধিক ব্রিটিশ বাংলাদেশীর বসবাস। এই বিপুল প্রবাসীকে কেন্দ্র করে বিলেতের প্রায় প্রত্যেকটি শহরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেকগুলো কার্গো, ট্রাভেল এজেন্সি ও মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান। ব্রিটেন এবং ইউরোপ মিলে রয়েছে কয়েক শতাধিক কার্গো ব্যবসা। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তিলে তিলে বিমানের কার্গো সেক্টরকে গড়ে তুলেছে, লাভের মুখ দেখিয়েছে বিমানকে। প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের কাছে বিলেত থেকে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠাচ্ছে। দেশে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত ব্যাগেজ সহজেই পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বেড়েছে এর চাহিদা।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট বশির আহমেদ বলেন, বিমান ব্রিটেনের মূলধারার জিএসএ দ্বারা এত দিন পরিচালিত হওয়ায়, অতীতে দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা হয়নি। বর্তমানে বিমান কর্তৃপক্ষ জিএসএ পরিবর্তন করায় এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিমান বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তার গাফিলতি ও দূরদর্শিতার অভাবে বিমানের তৈরি করা এই ব্যবসা অন্য দেশীয় এয়ারলাইন্সের দিকে চলে যাচ্ছে। একই মন্তব্য করেন ব্রিটেনে বিমান বাংলাদেশ অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাটার প্রেসিডেন্ট হেলাল খান।

 


আরো সংবাদ



premium cement