২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনছে বিজেপি

-

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনার জন্য আবার একটি বিল পেশ করতে চলেছে সে দেশের পার্লামেন্টে। সোমবার থেকে শুরু শীতকালীন অধিবেশনের কর্মসূচিতেই বিতর্কিত এই বিলের উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলটি আগেও একবার পেশ হয়েছিল, কিন্তু আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হওয়ায় তখন সেটি পাস করানো যায়নি। ইতোমধ্যেই লোকসভার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। তাই নতুন করে বিল পেশ করতে হচ্ছে সরকারকে। এই বিল পাস হলে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের হিন্দু-বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন আর পার্শি মানুষ, যারা কথিত ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতে চলে এসেছেন, তারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
ওই বিলের বিরুদ্ধে আসাম আর উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রতিবাদে নেমেছিল অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর সাথে উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। এবার বিল পেশের খবর প্রকাশ হওয়ায় আসামের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে।
নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে যেসব সংগঠন পথে নেমেছে, তার মধ্যে অন্যতম কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব রাতুল হোসেইন বলছিলেন, ‘ভারতীয় সংবিধানের মূল আঁধার হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু এই বিলে সেটাকেই ধ্বংস করে দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। এ দেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে ধর্ম কোনো ভিত্তি হতে পারে না, আর এই বিলে সেটাই করা হচ্ছে।’
জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা এনআরসিতে যে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে মুসলমান ছাড়া অন্যদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য রাতুল হোসেইনের।
আসামের অনেক বাংলাভাষী হিন্দু, যাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তারা বিবিসিকে নানা সময়ে বলেছেন যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়ে গেলেই যে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটাই বিজেপির নেতারা তাদের বলেছেন।
বিলটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনা হলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেয়ার যে শর্ত আসাম চুক্তিতে আছে, সেটা লঙ্ঘিত হবে। এটা যেমন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিরোধী নেতাদের ভাষ্য। অপর দিকে বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকাতেও নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা রয়েছে কিছুটা অন্যভাবে, বলছিলেন শিলচরের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের প্রধান সুস্মিতা দেব।
‘ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নেতারা এখন বিজেপির আনা এই বিলের বিরোধিতা করছেন ঠিকই, কিন্তু সেখানকার মানুষের ভোটে তো বিজেপি সেখানে সুইপ করে জিতেছে আর তাদের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রেও তো লেখা ছিল যে এই বিল তারা আনবে। সেটা তখন দেখেননি আপার আসামের মানুষ, যারা বেশির ভাগই অসমীয়া হিন্দু। এই বিলে আসামের বাঙালিদের কোনো লাভ হবে না,’ মন্তব্য সুস্মিতা দেবের। তবে বরাক উপত্যকার কংগ্রেস নেতারা ওই বিলের সরাসরি বিরোধিতায় না গিয়ে সংশোধন চাইছেন। এবং এই প্রশ্নে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের সাথে তাদের মতবিরোধ আছে।
মিজ দেব বলছিলেন, ‘আমরা চাই ধর্মনিরপেক্ষভাবে সব মানুষকে নাগরিকত্বের অধিকার দিক সরকার।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাশ বিবিসিকে জানিয়েছেন, যেভাবে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিল পাস হয়েছে লোকসভা আর রাজ্যসভায়, সেভাবেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও পাস হয়ে যাবে বলেই তাদের আশা। আগেরবারের প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখে এবার আগেভাগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বে অন্যান্য রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করেছেন বলেও জানান দাশ।


আরো সংবাদ



premium cement