২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবলোপনকৃত ঋণও আদায়ে ব্যর্থ সরকারি ৫ ব্যাংক

-

খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার পর এবার অবলোপনকৃত ঋণও আদায় করতে পারছে না সরকারি পাঁচ ব্যাংক। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংককে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অবলোপনকৃত ঋণ হতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল ৩৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময়ে ব্যাংকগুলো আদায়ে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আদায়ের দিক থেকে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে সোনালী ও রূপালী ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ ভাগ অবলোপনকৃত ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
একইভাবে পরিচালনগত মুনাফার ক্ষেত্রেও খারাপ অবস্থায় রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটি আলোচ্য সময়ে টার্গেট এক হাজার ৯০০ কোটি টাকার বিপরীতে ১৫৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ সময়ে লোকসান গুনেছে বেসিক ব্যাংক। প্রায় শত কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বেসিক ব্যাংক মাত্র তিন মাসে।
এ পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে দ্রুত ঋণ আদায় ও মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলোকে আর প্রভিশন ঘাটতির জন্য অর্থায়ন করা হবে না। তাই তাদের অর্থ তাদেরই সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্মসম্প্রদান চুক্তির (এপিএ) প্রথম ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৯) পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নবিষয়ক এক সভায় সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের ডাকা হয়। এখানে সরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় উপস্থাপিত তথ্য থেকে জানা যায়, অবলোপনকৃত ঋণ হতে সোনালী ব্যাংককে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২০০ কোটি টাকা আদায়ের টার্গেট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আলোচ্য ব্যাংকটি অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায় করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ ভাগ। একইভাবে জনতা ব্যাংকের আদায়ের টার্গেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ১৯ শতাংশ)। অগ্রণী ব্যাংকের আদায় করার কথা ছিল ৮০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা (১৮ শতাংশ)। রূপালী ব্যাংকের টার্গেট ছিল ৩৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে মাত্র ৯৫ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্য ছিল দুই কোটি টাকা। আদায় হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ টাকা (৮৬ শতাংশ)।
এ দিকে এপিএ চুক্তি অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফাও অর্জন করতে পারছে না। আলোচ্য সময়ে কম মুনাফা অর্জন করছে সোনালী ও জনতা ব্যাংক। এই সময়ে সোনালী ও জনতা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে যথাক্রমে ১৫ কোটি ৯৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কিন্তু এই সময়ে ব্যাংক দু’টির পরিচালন মুনাফা করার কথা ছিল সোনালী এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং জনতার এক হাজার কোটি টাকা। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংক ৮০০ কোটি টাকার টার্গেটের বিপরীতে মুনাফা করেছে ১৫১ কোটি টাকা (১৯ শতাংশ)। রূপালী ব্যাংক মুনাফা অর্জন করেছে ১০৪ কোটি টাকা। টার্গেট ছিল ৪৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে আলোচ্য সময়ে বেসিক ব্যাংক তো মুনাফা করেইনি, বরং লোকসান করেছে। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটিকে মুনাফার টার্গেট দেয়া হয়েছিল এক কোটি টাকা। কিন্তু লোকসান দিয়েছে ৯৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ব্যাংকগুলো আমাদের আশ্বাস দিয়েছে আগামী প্রান্তিকে তাদের অবস্থা ভালো হবে। কারণ ঋণ পুনঃতফসিলসংক্রান্ত সার্কুলারের জন্য অনেক খেলাপি তাদের ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করেনি গত তিন মাসে। কিন্তু আগামী প্রান্তিকে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement