২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

  রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘে বিপুল ভোটে প্রস্তাব গৃহীত

রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান
-

রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে রেজুলেশন (প্রস্তাব) গৃহীত হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যর্থতার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে স্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন ও রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতকে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট বিষয়ক রেজুলেশনটি গৃহীত হয়। ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে আনীত রেজুলেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপায়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। রেজুলেশনে নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা নিরাপত্তা পরিষদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবে।
রেজুলেশনটির পক্ষে ১৪০টি দেশ, বিপক্ষে ৯টি দেশ ভোট দিয়েছে। এ ছাড়া ৩২টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল। ওআইসি ও ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও মেক্সিকোসহ মোট ১০২টি দেশ রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে। কমিটিতে ওআইসির পক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইইউর পক্ষে ফিনল্যান্ড রেজুলেশনটি উত্থাপন করেছে। তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত এ রেজুলেশন আগামী মাসে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উত্থাপন করা হবে।
বিপুল ভোটের ব্যবধানে গৃহীত রেজুলেশনটি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশ্ব জনমতের জোরালো প্রতিফলন বলে বাংলাদেশ মনে করে। এ বছর সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যে সব প্রস্তাবনা দেন, তার বেশ কয়েকটি রেজুলেশনটিতে স্থান পেয়েছে। এতে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মুসলিম সংখ্যলঘু রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত জাতিগত নিধন অভিযান চালায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর থেকেই নিয়মিতভাবে ওআইসির নেতৃত্বে মিয়ানমারের মানবাধিকার সঙ্কট ইস্যুতে তৃতীয় কমিটিতে রেজুলেশন আনা হচ্ছে। গত বছর থেকে ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে তৃতীয় কমিটিতে রেজুলেশনটি উত্থাপন করে আসছে। প্রতিবারই বিপুল ভোটে তা গৃহীত হচ্ছে। এবারের রেজুলেশনটি মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপকে শুধু জোরদারই করবে না, বরং তা অব্যাহত রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
রেজুলেশনটি ভোটে যাওয়ার আগে এর পক্ষে ভোট দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ইইউর পক্ষে ফিনল্যান্ড এবং কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ড বক্তব্য রাখে। ভোটগ্রহণের আগে ও পরে দেয়া বক্তব্যে প্রায় সব সদস্য দেশের প্রতিনিধিরাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সংরক্ষণ, টেকসই পুনর্বাসন, জাতিগত নিধন ও গণহত্যার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ, সহিংসতার দায় নিরূপণ ও অপধারীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রেজুলেশনটি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে গৃহীত বৈশ্বিক পদক্ষেপের মধ্যে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ বলে তারা মন্তব্য করেন। প্রতিনিধিরা বলেন, এই রেজুলেশন সঙ্কট সমাধানে অন্য অংশীজনদের উৎসাহিত করবে। যেসব দেশ এখনো রেজুলেশনের বিপক্ষে ভোট দিচ্ছে তাদেরকে নৈতিক চাপের মধ্যে ফেলবে। প্রতিনিধিরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন।
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন রেজুলেশনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, এটিকে আমরা শুধু একটি দেশভিত্তিক রেজুলেশন হিসেবেই দেখছি না, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি দায়বদ্ধতার দলিল, যার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হতে পারে। রাষ্ট্রদূত মাসুদ এ সমস্যার সমাধানে দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে বিবেচনাধীন পদক্ষেপ ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত এই সহিংস অপরাধের প্রকৃত দোষীদের দায় নিরূপণের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন, রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠা এবং প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ ও আস্থা তৈরি করাসহ যে সব প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নিপীড়নের অভিযোগগুলো তদন্তের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আদর্শকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। রোম সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আইসিসির উদ্যোগকে সমর্থন দিয়ে যাবে। গণহত্যা সনদ ১৯৪৮ এর আওতায় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (আইসিসি) পক্ষে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা দায়েরের ঘটনায় বাংলাদেশ উজ্জীবিত। আমরা মনে করি, দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানের উদ্যোগ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল