২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উদযাপিত

-

যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে গত রোববার ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জশনে জুলুশ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া : মহানবীর সা: দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার উদ্যোগে ও মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের ইমাম শাহসূফি মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল-হাসানীর নেতৃতে লাখো লাখো নবীপ্রেমীর উচ্ছ্বাস মুখর অংশগ্রহণে জশনে জুলুশ বের করা হয়। কালেমাখচিত বিভিন্ন ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা হাতে ধর্মীয় মানব শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা স্লোগানে স্লোগানে রাজধানীর রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। মিরপুর-১ দারুস সালাম রোড থেকে জশনে জুলুশ শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশ। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল-হাসানী বলেন, মানবজাতিসহ সমগ্র সৃষ্টি জগতের মাঝে আজ অফুরান আনন্দের হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে। কেননা ১২ রবিউল আউয়ালের এই দিনে পুরো জগৎকে আলোকিত করে তশরিফ এনেছেন মানবজাতির মুক্তির দিশারি হজরত মুহাম্মদ সা:। তিনি যখন দুনিয়ায় আগমন করেন তখন ছিল তমাশাচ্ছন্ন তথা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ। ওই সময়ে কন্যাসন্তানকে অভিশাপ মনে করে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। নারী জাতির কোনো মর্যাদাই ছিল না। মহানবীর এসবের অবসান ঘটিয়ে নারী জাতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। শুধু তা-ই নয়, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় তিনি মদিনার সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। শান্তি সম্প্রীতি ও মানবকল্যাণই ছিল মহানবীর অনুপম আদর্শ অনুসরণ এবং যথাযথ স্মরণের মাধ্যমে আমরা জাগতিক জীবনে শান্তি এবং পরকালীন অনন্তজীবনেও মুক্তির দিশা পেতে পারি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, দেশকে জঙ্গিবাদের মাধ্যমে সঙ্কটের মধ্যে ফেলার চেষ্টা ছিল। কিন্তু হক্কানি আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন, শাহজাদা সৈয়দ হাসনাইন-এ-মইনুদ্দীন, পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড সূফীজের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আহমদ তিজানী বিন ওমর, আন্জুমান সাবেক সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ ইকবাল রিছালপুরী প্রমুখ।
আশেকানে মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশন : প্রতি বছরের মতো এবারো আশেকানে মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে ময়দানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের পীর মাওলানা সৈয়দ মুজিবুল বশর আল হাছানী আল মাইজভাণ্ডারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাজ্জাদানশিন শাহজাদা সৈয়দ নূরুল বশর আল হাছানী আল মাইজভাণ্ডারী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি রানা দাস গুপ্ত প্রমুখ। পরে এক জশনে জুলুশ তথা শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার রেলওয়ে মাঠে এসে শেষ হয়।
সভায় সৈয়দ মুজিবুল বশর আল হাছানী আল মাইজভাণ্ডারী বলেন, মহানবী সা:-কে সৃষ্টির কারণে সব সৃষ্টির আয়োজন করা হয়েছে। সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব আল কুরআন যার ওপর অবতীর্ণ, যাকে অনুসরণ করলে কুরআন অনুসরণ করা হয়, তার জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমরা সব অন্যায়-অবিচার, অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
তমদ্দুন মজলিস : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনের স্থপিত সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘মহানবী সা:-এর আদর্শ ও আজকের বিশ্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা, পদক প্রদান, পুরস্কার বিতরণ ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আরো বক্তৃতা করেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. এ কে এম ইয়াকুব হোসাইন, মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন খান, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আকরাম আলী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্টমিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. আহমদ আবুল কালাম, ড. মোহাম্মদ একরামুল ইসলাম, এমদাদুল হক চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার শওকত আজিজ প্রমুখ। কবিতা পাঠে অংশ নেন ছড়াকার মানসুন মুজাম্মিল, কবি রবিউল মাশরাফি, কবি শশী ইয়াসমিন, কবি সাঈদ জুবায়ের প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর তমদ্দুন মজলিস সম্পাদক এম এইচ সুজন মাহমুদ। প্রবন্ধ পাঠ করেন কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ তাওহিদ খান। অনুষ্ঠানে ইসলামী সংষ্কৃতি প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রাখায় ‘বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া সিলেটকে তমদ্দুন মজলিস শান্তি পদক-২০১৯ প্রদান করা হয়।
ইসলামী সমাজ : ইসলামী সমাজের আমির সৈয়দ হুমায়ূন কবীর বলেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের জীবনে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠিত না থাকায় সুশাসন ও ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ক্রম ঊর্ধ্বগতি, খুন-ধর্ষণ, রাজনীতির নামে দেশের অর্থ সম্পদ লুট-পাটসহ সর্বত্র ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে, ফলে জাতি আজ দিশেহারা।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে ইসলামী সমাজ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন। ইসলামী সমাজের সদস্য সাঈদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে এবং ইসলামী সমাজের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মুহাম্মাদ কবীর ও আসাদুজ্জামানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দোয়ার মাহফিলে আরো বক্তৃতা করেন মুহাম্মাদ ইয়াছিন, সোলায়মান কবীর, ইউসুফ আলী, নুরুদ্দীন, মুফতি মিজানুর রহমান, আমীর হোসাইন, আজমুল হক প্রমুখ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উদযাপিত হয়েছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জন্ম ও ওফাত দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে রোববার সকালে শোভাযাত্রা ও জশনে জুলুস বের করা হয়।
রাজশাহী মহানগর গাউছিয়া কমিটির উদ্যোগে এ দিন সকালে নগরীর শিরোইল কলোনির ৪ নম্বর গলি এলাকায় থাকা বায়তুল মামুর জামে মসজিদ থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী সা: উপলক্ষে জশনে জুলুস বের করা হয়। এটি নগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেট হয়ে নিউমার্কেট, রানিবাজার, গণকপাড়া, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে হজরত শাহ মখদুম রহ:-এর দরগা শরিফে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ, দেশ ও জাতির সুখ-সমৃদ্ধি এবং কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন শিরোইল কলোনির বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আতাউল মোস্তাফা কাদেরী।
কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেনÑ মহানগর গাউছিয়া কমিটির সভাপতি ড. শরিফুল ইসলাম, সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন মুন্না, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান আলী, প্রচার সম্পাদক খালেদ হোসেন ভোলা, সদস্য মাহবুব আলম প্রমুখ।
এ দিকে, একই দিন সকাল ৯টায় খানকায়ে গাওছুল আজম গাওসিয়া, তালিমে কুরআন তামাউয়াফি মাদরাসার উদ্যোগে নগরীতে আলাদা জশনে জুলুস বের করা হয়। এ ছাড়া সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে বাংলাদেশ সুফি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নূরানী আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শাহ মখদুম রহ: দরগা মসজিদে সিরাতুন্নবী সা: উদযাপনের লক্ষ্যে বয়ান ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ইয়া রাসূল আল্লাহ সা: ধ্বনিতে মুখরিত চট্টগ্রাম নগরী
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর পৃথিবীতে আগমন ও ওফাতের দিন উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। এ উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসে অংশ নেয়া লাখো মানুষের কণ্ঠে ইয়া রাসূল আল্লাহ সা: ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে বন্দরনগরী। গত রোববার সকাল ১০টায় আনজুমানে রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে নগরীর মুরাদপুর-ষোলশহরের জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা থেকে জশনে জুলুস বের হয়। জুলুসে নেতৃত্ব দেন পাকিস্তানের সিরিকোট দরবারের সাজ্জাদানশিন আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের শাহ।
বিকেলে নগরীর ষোলশহরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত মরহুম আল্লামা হাফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ রহ: চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের প্রবর্তনকারী। তার ছেলে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ ১৯৮৭ সাল থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement