২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পেঁয়াজ-ডিমের পাশাপাশি ভোগান্তি ভোজ্যতেলে

-

প্রায় দুই মাস ধরে দেশবাসীকে ভোগাচ্ছে পেঁয়াজ। বিশেষ করে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ক্রেতাদের। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম আশ্বাস দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাজধানীর বাজারগুলোতে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। দেশী রসুন বিক্রি হয় কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
বাজারে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ভিড় বেড়েছে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকেও। স্বস্তি নেই সেখানেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইন ধরেও মিলছে না কাক্সিক্ষত পেঁয়াজ। চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ কম থাকায় টিসিবির পক্ষ থেকেও দুই কেজির জায়গায় দেয়া হচ্ছে এক কেজি। এ ছাড়া লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই পেঁয়াজ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে ওজনে কম দেয়া, নি¤œমানের পেঁয়াজ বিক্রি এবং অনিয়ম দুর্নীতিরও। আশার কথা, বাজারে শীতকালীন আগাম পেঁয়াজপাতা আসতে শুরু করেছে। গাছের সাথে আসছে কচি পেঁয়াজও।
এ দিকে পেঁয়াজের দাম আপাতত ১০০ টাকার নিচে নামার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। তবে ১০০ টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। এ মাসের শেষ দিকে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমবে। তার আগে হয়তো সম্ভব হবে না। গতকাল শুক্রবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এ দিকে পেঁয়াজ-রসুনের পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও শাকসবজি। গত প্রায় তিন মাস ধরে নানা অজুহাতে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। এ সময়ে সরবরাহ বেশ বাড়লেও শাকসবজির দাম তেমন কমেনি। নতুন করে দাম বৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভোজ্যতেল। তবে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে চাল, মাছ, গরুর গোশত ও মুরগির দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
পেঁয়াজ নিয়ে ভোগান্তির মধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার অজুহাতে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে। অন্য দিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে তিন থেকে চার টাকা বাড়িয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা, গ্লোবসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরা খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের পাশাপাশি বোতলজাত করেও বিক্রি করে।
জানা যায়, এক মাস আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭১০ মার্কিন ডলার, যা এখন ৭৫০ ডলার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়াও প্রভাব পড়েছে বাজেটের কারণে। এবারের বাজেটে ভোজ্যতেল আমদানি মূল্য সংযোজন কর তিন স্তরে আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। এতে লিটারে তিন টাকার মতো বৃদ্ধির কথা জানায় কোম্পানিগুলো। তাদের দাবি, বাজেটের পরই নতুন করকাঠামোর কারণে এই দাম বাড়ানোর কথা ছিল; কিন্তু তখন বাড়ানো হয়নি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দর বেড়েছে। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজারে বিদ্যমান বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেলের এক লিটারের বর্তমান সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০২ থেকে ১১০ টাকা। তবে কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বড় বাজারের খুচরা বিক্রেতারা এমআরপির চেয়ে কম দামে তেল বিক্রি করেন। কোম্পানিগুলো দাম বাড়ালেও এমআরপিতে পরিবর্তন আসছে না। অবশ্য লিটারে তিন থেকে চার টাকা বাড়লে খুচরা বিক্রেতারাও আর ছাড় দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন না। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়বে মানুষের সংসারের ব্যয়ে।
এ দিকে সবজির খুচরা বাজারে গত সপ্তাহের মতো একই দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো ও শিম। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। শীতের সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহ থেকে কিছুটা বেড়ে বরবটি, ঢেঁড়স, কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। পাশাপাশি পটোল ও ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে একই দামে। তবে বেগুন, করলা, উস্তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আর একটু কম দামের তালিকায় রয়েছে মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে। বাজারে এক কেজির মতো আকারের প্রতি ফালি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে এক কেজি ৩০০ থেকে এক কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি বিক্রি হয় ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০০ টাকা। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০ টাকা কেজি, চাষের রুই কেজি ৪০০ টাকা, পাবদা ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। টেংরা বিক্রি হয় কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
গত সপ্তাহের মতোই প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। গরুর গোশত ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা ও খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।


আরো সংবাদ



premium cement