২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঋণ অবলোপন, শ্রেণীকরণ ও অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা শিথিলের দাবি এমডিদের

বিবেচনার আশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকের
-

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ঋণ শ্রেণীকরণ, ঋণ অবলোপন ও অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা হালনাগাদ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক; কিন্তু এ তিন নীতিমালা শিথিল করার দাবি জানিয়েছে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনাদায়ী ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ বেড়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে নীতিমালাগুলো সংস্কার করা না গেলে কিছু ব্যাংক অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে। ব্যাংকারদের এমন দাবির বিপরীতে নীতিমালা শিথিলের বিবেচনা করার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যে থেকে যেটুকু করা যায় তার বাইরে যাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে এমডিদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
কয়েকটি ব্যাংকের এমডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে এসব কথা জানা গেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নরের সাথে বৈঠক করেন এবিবি নেতৃবৃন্দ। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান ও আহমেদ জামাল এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর এবিবির পক্ষে উপস্থিত ছিলেনÑ এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ সাত-আটটি ব্যাংকের এমডি। বৈঠকের পর এবিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান ব্যাংক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল খেলাপি ঋণ অবলোপন নীতিমালা সংস্কার, ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা সংস্কার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিদেশী ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা হালনাগাদকরণ; কিন্তু এসব নীতিমালা সময়োপযোগী হলেও এখন ব্যাংকের এমডিরা ওই নীতিমালা এখন সংস্কার করার দাবি তুলেছেন। যেমন শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনা করে ৯ মাস কোনো ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে ওই ঋণকে সাব-স্ট্যান্ডার্ড মানে শ্রেণীকরণ করার বিধান রাখা হয়; কিন্তু ব্যাংকারদের আপত্তি হলো এ নীতিমালার কারণে খেলাপি হওয়া ঋণ আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। তাই তারা ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ শ্রেণীকরণের সময় কমিয়ে আনার দাবি করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে একজন এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন।
অপর দিকে, এমডিদের পক্ষে খেলাপি ঋণ অবলোপনের নীতিমালাও শিথিল করার দাবি জানানো হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ মন্দ মানের খেলাপি হওয়ার সর্বনি¤œ তিন বছর পর অবলোপন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এর আগে যা ছিল সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ আদায়ে জোর দিতেই অবলোপন নীতিমালায় খেলাপি হওয়ার তিন বছর পার হওয়ার শর্তটি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যালান্সশিট পরিচ্ছন্ন দেখাতে অনেকসময় খেলাপি হওয়ার পর পরই ঋণ অবলোপন করে ফেলে। এতে খেলাপি গ্রাহকের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু এ নীতিমালা শিথিলের দাবি জানিয়েছেন এমডিরা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এতে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়া হয়নি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের বিদেশী ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা হালনাগাদ ছিল না। এতে দেদার অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের নামে বিদেশী ঋণ আনেন অনেকেই। আবার কিছু ব্যাংক ও গ্রাহকের বিরুদ্ধে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে টাকা পাচারেরও অভিযোগ ওঠে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করে। স্থানীয় সব ধরনের আমানতের বিপরীতে সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক রয়েছে। আর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে ব্যাংক বিদেশী মুদ্রা আমানত আকারে এনে তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে। এ জন্যই অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের তহবিলে বাধ্যতামূলক সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়; কিন্তু ব্যাংকের এমডিরা এ বিষয়ে অপত্তি তোলেন গতকালের বৈঠকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া হয়নি, তবে আইনের মধ্যে থেকে কিছু করার থাকলে করা হবে বলে জানানো হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement