১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেফটি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : আইএসপিআর -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে এর নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা নীতিমালা অনুযায়ী সব নির্দেশনা পূর্ণ করতে পেরেছেন বলে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কাজেই এটা ধরে রাখতে হবে।’
‘কেউ যদি এটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, সাথে সাথে তার এমপিওভুক্তি বাতিল হবে। কারণ এমপিওভুক্তি হয়ে গেছেÑ বেতন তো পাবোই, ক্লাস করানোর দরকার কী, পড়ানোর দরকার কী; এ চিন্তা করলে কিন্তু চলবে না’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল অপরাহ্ণে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে নতুন করে এমপিও’র তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ঘোষণা উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকে নতুন করে দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এপিওভুক্ত করলাম। একটি নীতিমালা করে নিয়ে যাচাই-বাছাই করে তারপরে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। ’ তিনি বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে আমাদের নীতিমালার যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে, যারা সেই নির্দেশনাগুলো পূরণ করতে পারবেন এবং সেই স্কুলগুলো যেগুলোর আসলে প্রয়োজন আছে সেটি বিবেচনা করেই আমরা এমপিওভুক্ত করব। কাজেই যারা এমপিওভুক্তি চান তাদের এই নির্দেশনা মানতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে আমরা করে দিচ্ছি ঠিকই; কিন্তু ওই নীতিমালাগুলো পূর্ণ করতে হবে এবং সেটি অব্যাহত রাখতে হবে। যদি এমপিওভুক্তির এই সুযোগটাকে অব্যাহত রাখতে চান।’ দুই হাজার ৭৩০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩৯টি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৯৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৩টি কলেজ, ৫৬টি ডিগ্রি কলেজ, ৫৫৭টি মাদরাসা এবং ৫২২টি কারিগরি শিক্ষা ইনস্টিটিউশন রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: সোহরাব হোসেইন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এমপিও ভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রতি ধন্যবাদ এবং এমপিও ভুক্ত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা দীর্ঘ দিনের একটা চাহিদা ছিল। আমরা এই নিয়ে অনেক দিন থেকেই কাজ করছি। সবাই মিলে কাজ করে একটা তালিকাভুক্ত করে আজ এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারলাম।’
যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে শিক্ষার সঠিক মানটা আর বজায় থাকে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচণ্ড একটা দাবি ছিল এমপিওভুক্তকরণের আর এ জন্য শিক্ষকরা আন্দোলনও করেছেন। তখন আমরা বলেছি আমরা সবই করব। কিন্তু একটা নীতিমালার ভিত্তিতে করব।’ তিনি বলেন, শিক্ষাকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিই বলেই একে একটি নীতিমালার ভিত্তিতে করতে চেয়েছে সরকার। যাতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। তবে এই নীতিমালা ঠিক করে একে যাচাই-বাছাই করে তালিকাটা করতে একটু সময় লেগে যায়।
শিক্ষার্থীরা স্কুলপর্যায় থেকেই যাতে কারিগরি শিক্ষা বা ভোকেশনাল ট্রেনিং নিতে পারে সে দিকে লক্ষ রেখে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের ভেতরে অনেক মেধা লুকিয়ে আছে। তারা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। সেটা বিকাশের একটা সুযোগ আমাদের করে দেয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘শুধু উচ্চশিক্ষা নিয়ে, ডিগ্রি নিয়ে তো লাভ নাই। তাকে তো কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু করে খেতে হবে। সেটার ব্যবস্থা যাতে করতে পারি, যা দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক। সেটাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সেভাবেই আমরা করে যাচ্ছি।’
বিমান চালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে যতœবান হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : বিমান উড্ডয়নকে একটি উচ্চতর কারিগরি পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ উড্ডয়ন এবং এয়ারক্রাফটের রক্ষণাবেক্ষণে যতœবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে সংগৃহীত এই মূল্যবান বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে যতœবান হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী ষষ্ঠ ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেফটি’ সেমিনারে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
বিমান উড্ডয়নে পেশাগত দক্ষতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দক্ষতা এক দিকে যেমন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, তেমনি সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্যও বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা।’ তার সরকারের এভিয়েশন সেক্টরের মানোন্নয়নে গৃহীত বিশেষ পদক্ষেপের ফলে এ অঞ্চলের বিমানবাহিনী এবং বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট সেফটি রেকর্ড অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এভিয়েশন সেক্টরের মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে আমাদের বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট সেফ্টি রেকর্ড অত্যন্ত সন্তোষজনক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমাদের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (আইসিএও)-এর ফ্লাইট সেফটি সমীক্ষায় ঈর্ষণীয় ৭৫ দশমিক ৪৬ ভাগ নম্বর অর্জন করেছে, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্প্রতি নিরাপদ উড্ডয়নের মানদণ্ডে পাঁচ তারকার আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক এভিয়েশন সেফ্টি অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথোরিটির টেকনিক্যাল রিভিউয়ে ক্যাটাগরি-১ ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই সেমিনারের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘টিম এফোর্ট ক্যান ইনশিউর টিম সেফটি।’ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, মিসর, ওমান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশসহ চারটি মহাদেশের ১৬টি দেশের বিমানবাহিনীর সদস্য ও আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (আইসিএও) প্রতিনিধিরা এবারের সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ মাফিদুর রহমান এবং ফ্লাইট সেফটি বিভাগের পরিচালক এয়ার কমোডর মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান বক্তৃতা করেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন।


আরো সংবাদ



premium cement