২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ‘টর্চার সেল’ নিয়ে যে উদ্বেগ

-

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের নির্যাতন এমনকি টর্চার সেল গড়ে তোলার কথা জানা যাচ্ছে। কিছু দিন আগে যুবলীগের নেতাদের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে নির্যাতনের জন্য টর্চার সেলের অস্তিত্ব।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের মধ্যে এই টর্চার সেল বা নির্যাতনের একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বলে চলছে সমালোচনা।
বুয়েটের হলে থাকা এক ছাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাকেও শিবির মনে করে সন্দেহে রাতভর দফায় দফায় পেটানো হয়েছিল। কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে বিষয়টি গোপন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্র বলেন, নির্মমভাবে তাকে পেটানো হয়। ‘আমি আমার এলাকার এক নেতার দুর্নীতি আর ব্যাংকের অর্থ চুরির খবর ফেসবুকে দিয়েছিলাম। এটাই ছিল আমার অপরাধ।’ ‘রাতে রুমে ১০-১২ জন এসে আমাকে জেরা করে। বলে আমি শিবির কি না! প্রথমে চড় মারে। এরপর স্ট্যাম্প দিয়ে মারে। আমার পেছনে মারছিল পায়ে মারছিল। ধরেন রাত ১২টা থেকে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত এভাবে চলেছে।’
ভুক্তভোগী ছাত্ররা বলছেন, সরকারের সমালোচনা, অন্যায়ের প্রতিবাদ বা দুর্নীতি অনিয়মের খবর কেউ ফেসবুকে প্রচার করলেই সে ছাত্রলীগের জেরার নামে নির্যাতনের টার্গেট হয়েছেন। তুচ্ছ অপরাধেও নানা রকম হয়রানি আর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বহু ছাত্রকে। এমনকি প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের হল শাখার নেতারাও আক্রান্ত হয়েছেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অপসারণ এবং আবরার ফাহাদের ঘটনার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্যাতনের শিকার ছাত্রদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আগের কমিটির হল শাখার একজন পদধারী নেতা জানান, ফেসবুকে একটা পোস্টের কারণে তাকে যিনি নির্যাতন করেন তার দখলে থাকা রুমটি সিলগালা করে দিয়েছে হল প্রশাসন।
‘আমাকে চড়থাপ্পড় মারা হয়। পিস্তল মাথায় ঠেকিয়েছিল। কিন্তু মারেনি। আমিও অনেক ভয় পেয়েছিলাম। এদের কারণেই ছাত্রলীগের দুর্নাম।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মশিউর রহমান জানান, প্রথম বর্ষেই ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যোগ দেয়ার পর তাকে পিটিয়ে আহত করে পুলিশে দেয়া হয়। এরপর থেকে হল ছাড়া হয়েছেন তিনি।
‘আপনি একটু ভিন্নমতের হলে আপনাকে প্রথম যেটা বলা হবে যে আপনি শিবির! এই শিবির বলে নির্যাতন করা হয়। আর শিবির বলার পর আর কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায় না।’ শুধু বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের হাতে এমন নির্যাতনের একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। এ দিকে শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনই নয়, নির্যাতন বা টর্চার সেল সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে সরকারি দলের যুব সংগঠনেও। সম্প্রতি ঢাকায় রথ্যাবের অভিযানে যুবলীগ নেতাদের অফিসে অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামের সাথে ইলেকট্রিক শক দেয়ার মেশিন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে।
অভিযানে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগের এক নেতার মাধ্যমে একজন ভুক্তভোগী জানান, রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে আইন আদালত, পুলিশ প্রশাসন কিছুই তোয়াক্কা করতেন না যুবলীগের আটক নেতা। বেআইনিভাবে তার সম্পত্তি আরেকজনকে দখল করে দিয়েছেন যুবলীগের আটক নেতা।
যুবলীগ নেতার অফিসে কয়েকবার ডেকে নেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে এই ভুক্তভোগীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ব্যক্তি জানান, তাকে শারীরিক নির্যাতন না করলেও মানসিক নির্যাতনের শিকার তিনি। ‘একাধিকবার আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে যায় এবং সরাসরি আমাকে বলে দেয় কোনো কিছু করে কোনো লাভ হবে না।’ ‘যদি আপনি আইনের আশ্রয় নেন পুলিশের কাছে যান আপনার আরো ভয়ানক পরিস্থিতি হবে। এ এলাকার সর্বেসর্বা বলতে তাকেই বোঝাতো। সেটাকে মাফিয়া নাম দেবেন না ডন নাম দেবেন বা সন্ত্রাসী নাম দেবেন সেটা আপনারাই ভালো বোঝেন!’ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র এবং যুব সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে এমন নির্যাতনের সংস্কৃতি জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল