২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ওমর ফারুককে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি

সম্মেলন কমিটির আহবায়ক চয়ন : বয়সসীমা ৫৫
-

তুমুল সমালোচনার মুখে থাকা আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্যসচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ সংগঠনের সদস্যদের বয়সসীমাও ৫৫ বছর বেঁধে দেয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার গণভবনে যুবলীগ নেতাদের সাথে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্যসচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস হবে। এর আগ পর্যন্ত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিই সংগঠনের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। আর অনূর্ধ্ব ৫৫ বছর বয়সীরা এবার যুবলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, ওমর ফারুক চৌধরীর একক কর্তৃত্বে যুবলীগে বিতর্কিতদের পদ দেয়া, কমিটি ভাঙা, নতুন কমিটি গঠন, বিতর্কিত নেতাদের প্রশ্রয় দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে অভিযোগ তুলে ধরেন শহীদ সেরনিয়াত। পাশাপাশি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের ওপরও এসব দায় বর্তায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাকে সমর্থন করে বক্তব্য দেন সুব্রত পাল, আমির হোসেন গাজী, নিখিল রঞ্জন গুহ, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, বেলাল হোসেন, ফারুক হাসান তুহিনসহ প্রায় সবাই। তখন প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত যুবলীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এসব অভিযোগ আরো আগেই জানানো উচিত ছিল।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘বিতর্কিত ও অভিযুক্ত কেউ যেন কোনো পদে না থাকতে পারেন। সম্মেলনের জন্য যেসব সাব-কমিটি করা হবে, তাতেও যেন এদের কেউ স্থান না পান।’
সূত্র জানায়, যারা দলীয় পদ ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ-বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কারও অপকর্মের দায় দল ও সরকার নেবে না। যারা অপকর্ম করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, তাদের ছাড়া হবে না। কারো অন্যায় কর্মকাণ্ডের কারণে দল ও সরকারের দুর্নাম হতে দেবো না। কারও কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হোক সেটা আমি হতে দেবো না। আমার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও আদর্শ কারো অপকর্মের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেবো না। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হতে বলেন তিনি।
গত মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনো চালানোর বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাতে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসে। এর সাথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগও উঠে আসে যুবলীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে। ক্যাসিনোকাণ্ডে এরই মধ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক শুরুতে এই অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরে সুর নরম করে অভিযানকে স্বাগত জানান। তার বিরুদ্ধেও কমিটি বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট যুবলীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তার ব্যাংক হিসাব তলব করে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তার গণভবনেও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছুদিন ধরে প্রকাশ্যে আসছেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। তার অনুপস্থিতিতেই সম্প্রতি যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে গতকালের এই বৈঠকেও তাকে রাখা হয়নি। সাথে দলের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ভিসি ড. মীজানুর রহমান ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকেও গতকালের বৈঠকে পাস দেয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ২০০৯ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগে পদ পেলে। পরে ২০১২ সালে যুবলীগের ষষ্ঠ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সে সময়কার ষাটোর্ধ্ব এ নেতা। তারপর থেকে টানা সাত বছর দুর্দান্ত প্রতাপের সাথেই এই পদে ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
গতকাল সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পাওয়া দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মযহারুল ইসলামের ছেলে। এর আগে যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।
গতকাল দায়িত্ব পেয়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, একটি ভালো সম্মেলন উপহার দেয়াই হবে এ কমিটির মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি যুবলীগের হারানো ইমেজও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে যাবো।


আরো সংবাদ



premium cement