এমপি বুবলীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও নরসিংদীর সাবেক পৌরমেয়র লোকমান হোসেনর স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলীর বিএর সব পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। এ ছাড়াও তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাউবির অধীনে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিশ^বিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বাউবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম এ মাননান।
ভিসি বলেন, বাউবির অধীনে সদ্য অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিলেন তামান্না নুসরাত বুবলী। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে পরপর আটটি পরীক্ষায় তার পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এসব পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্রের পরিবর্তে প্রবেশপত্র হারানোর কথা বলে থানায় জিডির (সাধারণ ডায়েরি) কপি নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তবে বুবলীর পক্ষে শেষ দিনের পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষা হলে হাতেনাতে ধরা পড়ে প্রক্সি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ধরা পড়া এবং এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। একই সাথে জালিয়াতির বিষয়টি আরো তদন্তের জন্য কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভিসি বলেন, গণমাধ্যমে ও নরসিংদী জেলা প্রশাসনের এক পত্রের ভিত্তিতে বিষয়টি অবগত হওয়ার পর রোববার বুবলীর বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়। এ সভায় বুবলীর সব বিষয়ের পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়াও ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে বাউবির পক্ষে থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাউবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: আসাদুজ্জামান উকিল, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস ডিভিশনের পরিচালক ড. আনিস রহমান ও ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আহমেদ সেলিম। তদন্ত কমিটিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন দিন সময় দেয়া হয়েছে। সভায় আরো জানানো হয়, এ ব্যাপারে বুবলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি বিশ^বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে তোলা হবে এবং পরে তা বোর্ড অব গভর্ন্যান্সে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে তার (বুবলী) বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সভায় আরো জানানো হয়েছে, বুবলী বাউবির কোনো প্রোগ্রামে আর ভর্তি হতে পারবেন না। যারা প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছে তাদের পরিচয় প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। বুবলীর এ ধরনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেছে। এ ধরনের কাজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর এক ধরনের ক্ষতিকর আঘাত বলে মনে করি। জরুরি সভায় বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আঞ্চলিক কেন্দ্রের ডিন, পরিচালক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিসি আরো বলেন, নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ওই পরীক্ষার সমন্বয়ক। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কখনো কেন্দ্রে যাননি। অথচ তার প্রতিদিনই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার কথা। কলেজের পক্ষ থেকে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হয়নি। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ছাড়া পরীক্ষা গ্রহণের কোনো নিয়ম এ বিশ^বিদ্যালয়ের নেই। তবে কারো পরীক্ষার প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কেন্দ্রে জানালে তাকে ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র সরবরাহ করা হয়। কিন্তু থানায় জিডির কপি দিয়ে এভাবে পরীক্ষা নেয়া ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে হয়তো ওই কলেজ অধ্যক্ষের দুর্বলতা রয়েছে। প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ছাড়া বুবলীর পক্ষে সাত-আটটি পরীক্ষা দিয়েছে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি যদি স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে টিকবে না। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব হবে না।
২০১১ সালের ১ নবেম্বর নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলাকারীর গুলিতে নিহত হন পৌরমেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন। তামান্না নুসরাত বুবলী নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী মহিলা সংরক্ষিত সংসদ সদস্য বুবলী এইচএসসি পাস। তবে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। বিএ পাস করার জন্য তিনি অনিয়মের আশ্রয় নেন। তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও তার হয়ে নরসিংদীতে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষা দেন প্রক্সি প্রার্থীরা। এ পর্যন্ত আটজন ছাত্রী এমপির হয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। বাউবির বিএ কোর্সে এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টার ও তেরোটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তিনি একটিতেও অংশগ্রহণ করেননি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যম কর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষার হলে সংসদ সদস্যের রোল নম্বরের সিটে এক তরুণীকে বসা দেখতে পান। এ সময় সাংবাদিকেরা ওই পরীক্ষার্থীর পরিচয় জানতে চাইলে সে দাবি করে, আমিই সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী। তার আইডি কার্ডটি দেখতে চাইলে ওই পরীক্ষার্থী বলে, আইডি আনতে ভুলে গেছি। আইডি কার্ড ছাড়া কিভাবে একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হলো এ প্রশ্ন হলপরিদর্শককে করা হলে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে বলে আমাদের জানিয়েছে ওই পরীক্ষার্থী। প্রমাণ হিসেবে সে থানায় জিডির কপি নিয়ে এসেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে।