২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের কারণে উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের : অর্থমন্ত্রী

প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা কামনা
-

রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের উচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই, তাদেরকে অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্বব্যাংক বিশ্ববাসীর সাথে আলাপ করে একটা পজেটিভ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাই।
গত শনিবার রাতে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীবিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বের দু’টি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক সিটি ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ও এইচএসবিসি ব্যাংকের সাথে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্টরা। অর্থমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কিভাবে দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংককে জোরালো ভূমিকা রাখতে বলেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন হার্টউইগ শেফার।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, পৃথিববীর অন্যতম প্রধান ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এ দেশ হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রীতির দেশ এবং এটি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও একটি হাতিয়ার। এখানে একে অপরের কষ্টে ব্যথিত হয়, যেকোনো ধরনের আপদ-বিপদে একে অপরকে যেভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে তা যেকোনো দেশের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যাটির কারণে এটি এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। আর তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে, কিন্তু সেখানে কোনো টাইম লাইন দেয়া হয়নি। আশা করি দ্রুত টাইম লাইন আসবে।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও এখন তার উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে আমাদেরকে। কক্সবাজারসহ ওই এলাকার পুরো পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে আমাদের সামাজিকভাবে ও জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আমাদের সামাজিক বন্ধনসহ যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা ডলার বা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটিই আমাদের প্রধান চাওয়া।
তিনি বলেন, এ জন্য বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগীর এ খাতে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি আমরা ভাবছি না। আমরা শুধু ভাবছি তাদের প্রত্যাবাসন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আশা করি বিশ্বব্যাংক সবার সাথে আলোচনা করে আমাদেরকে একটা সুন্দর সমাধানের পথ দেখাবে। এ বিষয়ে বিশ্বের সবাই আমাদের সাথে একমত হয়েছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ে চীন, ভারত ও জাপান প্রত্যেকে একেকটি বড় ফ্যাক্টর উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ফলে এদেরকে বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না। এসব দেশ আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের চাওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। আমরা আর্থসামাজিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতেই হবে। আমরা সবই একই লাইনে কথা বলেছি। এখানে অল্টারনেটিভ অপশন নেই। রোহিঙ্গাদের নিজে দেশে ফেরাতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বের দু’টি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক সিটি ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ও এইচএসবিসি ব্যাংকের সাথে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক দু’টি বাংলাদেশে পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। বিশ্বব্যাংকের সভায় এ-সংক্রান্ত দু’টি প্রস্তাব আমার কাছে করা হয়েছে। এইচএসবিসি মালয়েশিয়ায় জনপ্রিয় সুকুব বন্ড ইস্যু করতে চায়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পাবলিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু নেই। তবে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে এটি চালু রয়েছে। এ জন্য তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক উৎস থেকে নেয়া ঋণগুলো এখন থেকে টাকায় পরিশোধের প্রস্তাব এসেছে। এ ক্ষেত্রে এ দু’টি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কেননা ডলারের বিপরীতে টাকার মান সব সময় ওঠানামা করে। এ ক্ষেত্রে টাকার মূল্যমান নির্দিষ্ট রেখে ডলারের বিপরীতে নেয়া ঋণ বাংলাদেশী টাকায় পরিশোধ করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement