১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার ক্ষোভে নয়, ভোটাধিকারের কথা বলেই যাবো : মেনন

-

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনিÑ এ কথা আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি। ভবিষ্যতেও জনগণ ভোটাধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এ কথা আমি বলেই যাবো। এ কথা আমি সংসদে ও সংসদের বাইরে এবং সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে বলছি। মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার কারণে আমি জনগণের ভোটাধিকার হরণের কথা বলছি- বিষয়টি ঠিক নয়।’
গতকাল রোববার একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। মেননের ওই মন্তব্য ফেসবুকে ‘লাইভ’ করে ওই চ্যানেল।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। রাশেদ খান মেনন বিগত মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ বছর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবারো তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ছিটকে পড়েন মন্ত্রিসভা থেকে। গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টির এক অনুষ্ঠানে মেনন বলেন, ‘আমি সাক্ষী, এই নির্বাচনে (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) আমিও নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি, জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) পারে নাই, উপজেলায় পারে নাই।’
মেননের এ বক্তব্যের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সরকার ও আওয়ামী লীগের ভেতরে। সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার দুটি প্রশ্ন মেনন সাহেবের কাছে। এক. আপনি মন্ত্রী হলে এ কথা বলতেন কি না? দুই. এমপি হয়েও এত দিন পরে এ অভিযোগ কেন তুললেন?’
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘সরকার বা দলের পক্ষ থেকে এ বিষয় নিয়ে তার (রাশেদ খান মেনন) সাথে আলাপ হয়নি। তিনি যদি বলেই থাকেন, তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে এত দিন পরে এই সময়ে কেন তিনি হঠাৎ করেই এ অভিযোগ তুললেন? নির্বাচন অনেক আগে হয়ে গেছে। মন্ত্রী হলে কি তিনি এ কথা বলতেন?’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্যাসিনো ঘটনায় তার নাম আছে কি না বা তিনি নিজেকে এসব ঘটনা থেকে মুক্ত রাখতে এ অভিযোগ করেছেন কি না এ প্রশ্ন আপনারা (সাংবাদিকরা) তাকে করুন।’ এসব প্রশ্নের জবাব দেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকারের জন্য আমরা সেই এরশাদ সরকারের আমল থেকে লড়াই শুরু করি। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় আমাদের এ লড়াই আরো তুঙ্গে ওঠে। এখন আমাদের সময়ে এসে যদি জনগণ ভোট দিতে না পারে, সেটা হবে সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক ঘটনা।’
ভোটাধিকারের কথা আপনি এখন হঠাৎ করে বলছেন কেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘আমি হঠাৎ করে বলিনি। আমি সংসদেও এ অভিযোগ করেছি। সংসদের বাইরে সভা সমাবেশ ও সেমিনারেও একই অভিযোগ করে আসছি। জনগণ ভোটাধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এ কথা আমি বলেই যাবো।’
আপনি এখন এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনি এর দায় এড়াতে পারেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘না আমি এর দায় এড়াতে পারি না। আমি এর দায় নিয়েই ভোটাধিকারের কথা বলছি। ভেতরে থেকেই আমি এ কথা বলছি।’
এর আগে আপনি গত দশ বছরে ৯ লাখ কোটি টাকা পাচারের কথা বলেছেন। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘গত দশ বছরে ৯ লাখ কোটি টাকা পাচারের কথা আমি সংসদেও বলেছি। অর্থমন্ত্রীও টাকা পাচারের কথা বলেছেন। টাকা পাচার না হলে দেশ আরো সমৃদ্ধ হতো এ কথা তিনি বলেছেন।’
চলমান ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযানকে আপনি কিভাবে দেখছেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘শুধু ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানই দুর্নীতিমুক্ত সমাজগঠনে যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে যে টাকা লুট হয়েছে তার বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে। বড় বড় প্রকল্পগুলোতে অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো উচিত।’

 


আরো সংবাদ



premium cement