২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএসএফ সীমান্তে ঢুকে বাহাদুরি দেখিয়েছে

ঘটনার জন্য তারাই দায়ী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্তে ঢুকে ‘বাহাদুরি’ দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমিন বলেছেন, এতে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) বাধ্য হয়েই গুলি করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলি এবং এক বিএসএফ সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো যেসব তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয়। এ ঘটনার জন্য বিএসএফই দায়ী।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে গতকাল ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিএসএফ আমাদের এখানে এসেছে, এসে বাহাদুরিও করেছে। বিজিবিকে লাস্ট রিসোর্ট হিসেবে বাধ্য হয়ে গুলি করতে হয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা ঘটেছে।
সাক্ষাৎকারে ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর, দুই দেশের চুক্তি ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন।
গত ১০ বছরে ৩০০ বেশি বাংলাদেশী বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেÑ এমন তথ্যের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী বলেন, আগে বিএসএফের গুলিতে বছরে একজন মারা যেত। আমরা তখন কেবল দুঃখ করেছি। গত বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে তিনজন মারা গেছে। সীমান্তে একজন বাংলাদেশীর মৃত্যুও অনাকাক্সিক্ষত। তিনি বলেন, সীমান্তের ঘটনায় আমরা আগে কখনো মামলা করিনি। কোনো পণ্ডিত মামলা করার কথা আমদের আগে বলেননি। ভারত এখন নতুন করে মামলা করছে। আগামীতে বাংলাদেশও একই পথে হাঁটতে পারে।
ভারতকে বাংলাদেশ দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছে : প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণতর করা, তা অর্জন হয়েছে।
ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু দিয়েই যাচ্ছে কি নাÑ প্রশ্ন করা হলে ড. মোমেন বলেন, এটা ডাহা মিথ্যা। যারা বিষয়টি পছন্দ করছেন না তারা নানা কথা বানিয়ে যাচ্ছেন। আমরা কিছু দিয়েছি, সেই সাথে কিছু পেয়েছি। সম্পর্কের স্থিতিশীলতাই বড় পাওয়া। সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বড় অর্জন। মন্ত্রী বলেন, বাহবা কুড়ানোর জন্য একসময় গঙ্গা ইস্যু আমরা জাতিসঙ্ঘে নিয়ে গেলাম। সাতাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত ভারত এ নিয়ে বাংলাদেশকে এক পয়সার দামও দেয়নি।
ফেনী নদীর পানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এর মধ্যে বড় নদী সাতটি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের প্রয়োজনীয়তার বাস্তবতা ভারত স্বীকার করে নিয়েছে। কিছু সমস্যা থাকায় তারা ২০১১ সালে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফেনী নদী থেকে খাবারের জন্য বাংলাদেশ যে পরিমাণ পানি ভারতকে প্রত্যাহার করতে দিতে সম্মত হয়েছে, তা খুবই সামান্য। ১২৬ কিউসেকের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৮২ কিউসেক, যা নদীর পানি প্রবাহের এক ভাগেরও কম। মানবিকতার জন্যই বাংলাদেশ এই পানি দিচ্ছে।
ড. মোমেন বলেন, ত্রিপুরার সাবব্রুমে খাবার পানির জন্য ফেনী নদী থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে এমনিতেই পানি নেয়া হচ্ছিল। এখন একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে। চুক্তির পর তারা ১ দশমিক ৮২ কিউসেকের বেশি পানি নিতে পারবে না। এর মাধ্যমে ভারতকে বাংলাদেশ একটি দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় ভারতের ট্রানজিট প্রস্তাবে বাংলাদেশ সায় দেয়নি। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইলিশ রফতানি। প্রধানমন্ত্রী সেই কূটনৈতিক অবস্থানে থেকে সরে এসেছেন কি নাÑ এ প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাউকে খুশি করার জন্য কিছু করেন না। ইলিশের পরিমাণ এখন অনেক বেড়ে গেছে। তাই দুর্গাপূজার সময় ভারতে ইলিশ পাঠানো হয়েছে।
আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না : ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আমরা বলেছি, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি। আর নতুন উদ্বাস্তু চাই না। তারা বলেছেন, এনআরসি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়। ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এটার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে না।
এনআরসি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় বাংলাদেশ বিশ্বাস রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেন ড. মোমেন।
রাডার স্থাপন নিয়ে কিছু নির্ধারিত হয়নি : প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে বাংলাদেশের উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার জন্য ভারতের সাথে যৌথভাবে রাডার স্থাপনের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এর ফলে চীনের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা চীন থেকে সাবমেরিন কিনেছিলাম। তখন ভারত যদি সাবমেরিন দিত আমরা ভারত থেকেও কিনতাম। ভারত তখন সাবমেরিন দিতে পারেনি, আমরা তাই চীন থেকে কিনেছি। রাডার সংক্রান্ত এমওইউ দিয়ে কী করা হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশের দেখভাল আমরা করব। সমুদ্রসীমার একটি অংশে ভারতের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেই অংশটি আমরা যৌথভাবে মনিটরিং করবÑ এটাই এমওইউর মূল লক্ষ্য। এমওইউর বাস্তবায়ন বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবেন।
রোহিঙ্গাদের কোথায় নেব তা ঠিক করা আমাদের এখতিয়ার : রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর জাতিসঙ্ঘের মাতব্বরি করার কোনো কারণ নেই। আমরা রোহিঙ্গাদের কোথায় নিয়ে যাব সেটা নির্ধারণ করা আমাদের এখতিয়ার, জাতিসঙ্ঘের নয়।
বিশ্বসংস্থার উদ্দেশে ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের অনেক উপদেশ দিয়েছেন। আমরা জানি আমরা কী করছি। আপনাদের উপদেশ আমরা চাই না।’ তিনি বলেন, ‘আমি জাতিসঙ্ঘকে দেশ ছাড়ার জন্য বলিনি। আমি জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে গিয়ে বেশি কাজ করতে বলেছি, যাতে রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে ফিরতে পারে।’
রোহিঙ্গাদের মধ্যে রাজনৈতিক মনোভাব প্রচার, জঙ্গি তৎপরতার উসকানি ও অস্ত্র সরবরাহকারী কিছু এনজিওকে কক্সবাজার থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ

সকল