১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন

ট্রেনকে লাভজনক করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এডিবি বোর্ড অব ডিরেক্টরসের প্রতিনিধিরা : পিআইডি -

রেলওয়েকে লাভজনক খাতে পরিণত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পুরো দেশকে রেলযোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘যারা অলাভজনক বলে রেলপথগুলো একেবারে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দিতে চাই যে এগুলোও লাভজনক হতে পারে। পাশাপাশি, রেলপথের আধুনিকায়নের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনসহ মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা যায়।’
বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম-ঢাকা রুটের ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ এবং রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের নতুন বগি সংযোজনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সাধারণ ও মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে রেল অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু বিএনপি সরকার এটা লাভজনক হবে না বলে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কথা মতো পরিকল্পিতভাবে রেলপথগুলো বন্ধ করে দেয়। ‘আমি মনে করি এটি দেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ দেশের সাধারণ মানুষ তাদের যোগাযোগের জন্য রেলকেই বেছে নেয়। একটি দেশের জন্য রেল, পানি, আকাশ ও সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা থাকা খুবই প্রয়োজন’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার বরিশালসহ প্রতিটি বিভাগে রেল যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের জন্য একটি বিশাল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ‘আমরা অনেকগুলো নতুন রেলপথ নির্মাণ করেছি এবং বহু পুরাতন রেললাইন মেরামত করেছি।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো পুরো বাংলাদেশকে, এমনকি দেশের দক্ষিণাংশকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা। সরকার বরিশাল, বাগেরহাটের মংলা ও পটুয়াখালীর পাইরা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করবে। আমরা দ্রুত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি।’ পরবর্তীতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করেন। লালমনিরহাটের স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গের এ জেলায় সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি (বিএসএমআরএএইউ) প্রতিষ্ঠা করছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে লালমনিরহাটের অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার থেকে হেলিকপ্টার, বিমান এবং যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ এখন জাহাজ নির্মাণ ও রফতানি করতে পারে বলেও জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রেলওয়ে সচিব মো: মোফাজ্জল হোসেন গত ১১ বছরে দেশের রেলপথের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর একটি অডিও-ভিজুয়াল উপস্থাপনা দেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনবার কুড়িগ্রাম সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে জেলার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ঢাকা-কুড়িগ্রাম একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুরও প্রতিশ্রুতি দেন। সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা পেল কুড়িগ্রামবাসী।
সড়ক ব্যবহারে সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : চালক, যাত্রী ও পথচারীদের সড়ক ও মহাসড়ক ব্যবহারে ও পারাপারে সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণ সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন নয়, তাদেরকে সচেতন হতে হবে।’
এ সময় ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের ১.২ কিলোমিটার ভুলতা উড়াল সেতু, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের পটিয়া বাইপাস, ভোমরা স্থলবন্দর-সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক, মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের ১৩টি সেতু ও ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টুক মহাসড়কের ২৮৩ মিটার দীর্ঘ পিসি গোয়াদার সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। ‘সবাইকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা সড়ক ব্যবহার করছে তাদের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অনেক পরিবার সমস্যার মধ্যে পড়ছে যা কখনোই প্রত্যাশিত নয়।’
‘সড়ক দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র চালকদের দোষারোপ ঠিক নয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চালক ও যাত্রীসহ সবাইকে যানবাহন চালানো ও সড়ক পারাপারের সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। যোগাযোগব্যবস্থা তৈরির মহপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন এবং ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে সহজে যাতায়াত করা যায়। এ সময় শেখ হাসিনা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সেতু থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, ইমাম, শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
প্রসঙ্গত, ভুলতা উড়াল সেতুর ১.৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১.২ কিলোমিটার পড়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আর ৬১১ মিটার ঢাকা বাইপাস মহাসড়কে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৩৮.৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
সেই সাথে, ৮৭.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া বাইপাস সড়ক, ৩৮.৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টুক মহাসড়কের ২৮৩ মিটার দীর্ঘ পিসি গোয়াদার সেতু এবং ৮৮.৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের ১৩টি কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement