১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে র‌্যাবের অভিযান : সভাপতিসহ গ্রেফতার ৫

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা জব্দ
-

রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়ে বিদেশী পিস্তল, ইয়াবা ও ক্যাসিনোর সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে র‌্যাব-২। এ ঘটনায় ক্রীড়াচক্রের সভাপতি কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, হারুন, আনোয়ার ও লিটন মিয়া। গত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গতকাল বেলা ১টায় ক্লাব থেকে সভাপতি ফিরোজকে আটক করে র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়। বিকেল ৪টা থেকে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের অফিসের আশপাশে অবস্থান নেয় র্যাবের সদস্যরা। পরে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে শফিকুল আলম ফিরোজকে নিয়ে ক্লাবটিতে অভিযান শুরু হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাল। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: গাউসুল আজম ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
ক্লাবের সাধারণ সদস্য আথজিজ উদ্দিন আহম্মেদ নান্নু সাংবাদিকদের বলেন, জুমার নামাজের জন্য সবাই যখন বের হবে তখন কয়েকজন র্যাব সদস্য এসে সভাপতিকে আটক করে। এ সময় তাকে বলা হয় আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। পরে র্যাবের একটি গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
নান্নু বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন শফিকুল। তিনি কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য।
অভিযান শেষে ৮টা ১৫ মিনিটে ফিরোজকে ক্লাব থেকে বের করে নিয়ে র‌্যাবের গাড়িতে তোলা হয়। এর আগে সফিকুল আলম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। কেন ধরা হলো জানি না। ওপরের কোনো নির্দেশ ছিল কি না তা-ও জানি না। আমাকে আটক দেখানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার কথা বলা নিষেধ।
ক্যাসিনোর সাথে জড়িত ছিলেন কি না জানতে চাইলে ফিরোজ বলেন, আমি কোনো সময় এসব খেলার সাথে জড়িত ছিলাম না। আমার অফিস থেকে শুধু তাস পেয়েছে। পরে দেখি কিছু ইয়াবা। আমি এসবের সাথে জড়িত না।
অভিযান শেষে র‌্যাব-২ অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা শহরে অবৈধ ক্যাসিনো এবং জুয়া পরিচালনার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সেই অভিযানের অংশ হিসেবেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-২ কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালায়। আমাদের কাছে তথ্য ছিল এখানে ক্রীড়া সংস্থার ব্যানারে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতেই দুপুরের পর থেকেই আমাদের সদস্যরা ক্লাবের চার দিকে অবস্থান নেয়।
তিনি বলেন, আমরা ক্লাব থেকে বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছি। আমরা বেশ কিছু বিদেশি কয়েন, বিপুল আমেরিকান তৈরি কার্ড উদ্ধার করেছি, যা দিয়ে জুয়া খেলা হয়ে থাকে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে ক্যাসিনোর যে সামগ্রী তা পাওয়া যায়নি কিন্তু ক্যাসিনো খেলার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে ক্যাসিনো পরিচালিত হতো। গত বুধবারের পর হয়তো এগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ক্যাসিনোর এসব সরঞ্জামাদি ছাড়াও একটি লাইসেন্সবিহীন বিদেশী পিস্তল ও গুলি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও হলুদ রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।
মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রজু করা হবে। নিয়মিত মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হবে।
গত বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় র্যাব। এ ছাড়া ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে জুয়ার আড্ডা চালানোর আয়োজন, নগদ দেশী ও বিদেশী টাকা, অস্ত্র ও নেশাজাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য জব্দ করা হয়। অভিযানে ইতোমধ্যে একাধিক যুবলীগ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন।
এ ছাড়া রাজধানীর কাওরানবাজারে মৎস্যজীবী ক্লাব ঘিরে রেখেছে র‌্যাব। রাত ১০টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement