২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আফগানভীতি লজ্জায় ডোবাচ্ছে সাকিবদের

-

১৬৫ রান করে ম্যাচ জিততে না পারলে টি-২০ ক্রিকেটে ভালো কিছু আশা গুড়েবালির মতোই। এ ফরম্যাটে বড় দলের বিপক্ষে জিততে ২০০ এর আশপাশে রান করার সামর্থ্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সে সামর্থ্যই হয়ে উঠেনি। তাই বারবার হারের অন্যতম কারণ। এ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলেছিল তিন ম্যাচের সিরিজ। যেখানে হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসে সাকিবরা ভারতের ধর্মশালা থেকে। ওই হারের কারণগুলো আরো একবার দেখিয়ে দিলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কাল মিরপুর শেরেবাংলায়। ব্যাট হাতে উল্টা-পাল্টা শটস খেলে একের পর এক আউট হন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বা অভিজ্ঞরা। যেখানে প্রতিপক্ষের অভিজ্ঞ মোহাম্মাদ নবি খেলেছেন বিপর্যয়ের মুখে ৮৪ রানের এক ইনিংস। সেখানে বাংলাদেশের মুশফিক, সাকিব, লিটন, সৌম্যদের ব্যর্থতা লজ্জায় ডোবানোর পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ছিল। এক আফিফ বাঁচিয়ে ছিলেন। এবার ওভারপ্রতি প্রায় ১৫ রান যখন প্রয়োজন। তখন মাঠে নামতে হয় আফিফ-মোসাদ্দেকদের। রানের অত বড় বোঝা নিয়ে ‘ডু অর ডাই’ খেলতে হয়েছে। তা সম্ভব হয় না। কারণ আফগানরা খেলে প্লান ক্রিকেট। যেভাবে বোলিং, ওইভাবেই সাঝানো ফিল্ডিং। বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তায় চোখ রেখে ঠাণ্ডা মাথায় বোলিং করে আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল তারা, ভালো ক্রিকেট খেলতে হলে, জয় পেতে হলেÑ কিভাবে খেলতে হয়।
চট্টগ্রামে একমাত্র টেস্টে বলে কয়ে হারানোর পর আত্মবিশ^াস বেড়েই ছিল আফগানদের। কাল তার প্রমাণ দিলো খেলাতেও। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কিভাবে আউট করতে হবে, তা জানত রশিদ খান, মোহাম্মাদ নবি, গুলবদ্দিন নায়িব, মুজিবরা। তা-ই তারা করেছেন। হেরে যায় বাংলাদেশ এ ম্যাচে ২৫ রানে। ফাইনালে যাওয়ার চান্সটা এখনো আছে সাকিবদের। কিন্তু তার চেয়েও বড় আফগানদের বিপক্ষে পরাস্ত হওয়া। টেনশন আরো বাড়িয়ে দিলেন। যে প্রেসার পরের আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচেও পড়বে। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আসে এ ম্যাচে। বিশ^কাপে চোখ রেখেই নতুন কোচিং স্টাফ যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় তার ধারাবাহিকতায় মুশফিক ও লিটন করেন ইনিংস ওপেন। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। মুজিবের ঘূর্ণি ও ফরিদ মালিকের পেসের সামনে বেসামাল হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। আফগানদের মতোই উইকেট হারাতে থাকে। ৩২ রানে হারিয়ে ফেলে চার উইকেট। মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির দেখেশুনে খেলে দলকে স্লো গতিতে এগিয়ে নিলেও প্রয়োজনীয় রানরেট বেড়ে যায়। যে চাপ গিয়ে পড়ে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের ওপর। কারণ অ্যাটাকিং খেলতে গেলেই আউট হতে হয়েছিল এ ম্যাচে। মাহমুুদুল্লাহ সর্বোচ্চ ৪৪ করে আউট হন। এ ছাড়া সাব্বিরের ২৪ রান উল্লেখযোগ্য। আফিফ এ ম্যাচে ১৪ বলে ১৬ করে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে দেন ক্যাচ। আশার পরিসমাপ্তি ওখানেই। এরপর সাইফুদ্দিন, মোসাদ্দেকের আউট শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তবে লক্ষণীয় আরো একটা। ওই স্কোর তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১ বল হাতে রেখে অলআউট হয়েছে ১৩৯ রানে। মুজিব নেন চার উইকেট। রশিদ খান, নায়িব, মালিক নিয়েছেন ভাগাভাগি করে সমান দু’টি করে।
এর আগে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে টসে জিতে প্রথম ব্যাটিং নিয়েছিল আফগানরা। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বলে একটু এক্সাইটেড ছিল তারা। বিশেষ করে সূচনা থেকে যেভাবে অ্যাটাকিং ব্যাটিংয়ে গিয়েছিলেন তারা, তা কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও সে ম্যাচে ১৯৭ করেছিল তারা পঞ্চম উইকেট জুটির দুর্দান্ত ৯৭ রানের পার্টনারশিপে। যাতে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তুলেছিল ৫৮ রান ১ উইকেট খরচায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে আরো ভালো কিছুর প্রত্যাশায় ওই অ্যাটাকিংয়ে যায়। যার পুরাপুরি সুফল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারেই তুলে নেয় বাংলাদেশ ৪ উইকেট।
প্রথম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড করে দেন রহমতুল্লাহ গুরবাজকে। দ্বিতীয় ওভারে সাকিবের শিকারে পরিণত হজরতুল্লাহ জাজাই। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে সাইফুদ্দিন আউট করে দেন নাজিব তারাকাইকে। এবং ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে সাকিব আবারো আঘাত হানেন। তার প্লানিং বোলিংয়ে এবার আউট নাজিবুল্লাহ জারদান। দলের রান তখন ৪০ রান ৪ উইকেটে। এ সময় দুই আফগান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মাদ নবি ও রহমত শাহ দায়িত্ব নেন। দেখেশুনে খেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। এ দুই ব্যাটসম্যানের ৭৯ রানের পার্টনারশিপে আফগানরা প্রাথমিক বিপর্যয় রোধ করে। রহমত শাহ চান্স দিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৪০ রানের এক ইনিংস খেলে আউট হন অ্যাটাকিংয়ে ফিরে আসা সাইফুদ্দিনের বলে। তবে মোহাম্মাদ নবি একাই যেন লড়ে যেতে থাকেন। অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান বহু ম্যাচ খেলেছেন বিপিএলে এবং এ শেরেবাংলাতেই। এতে বোলারদের ও উইকেট সম্পর্কে বেশ ধারণাও তার। তা কাজে লাগিয়েই খেলতে থাকেন। তবে এ ম্যাচে সুযোগ ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৮৯ রানের স্কোর ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু মুস্তাফিজের করা ইনিংসের শেষ ওভারে তা পারেননি। মুস্তাফিজেরই ক্রেডিট। নিখুঁত নিশানায় বল রেখে অনেকটা রোধ করেন নবির ওই অগ্রযাত্রা।
এ ম্যাচে নবি অপরাজিত থাকেন ৫৪ বলে ৮৪ করে। এর আগে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি ৪১ বলে। তার ইনিংসে রয়েছে ৭ ছক্কা তিন চারের মার। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব তার বোলিং অ্যাটাকে ভ্যারাইটি রাখেন। ২০ ওভারের ম্যাচে সাতজনকে দিয়ে বোলিং করিয়েছেন। কিন্তু নবিকে রুখতে পারেননি। আফগানিস্তানের ইনিংস শেষ হয় ১৬৪ রানে। ৬ উইকেট হারিয়ে ওই রান করেন তারা। সাইফুদ্দিন ৪ উইকেট নেন ৩৩ রানে। বাকি দুই উইকেট নেন সাকিব ১৮ রানের বিনিময়ে। ইনিংসে একটি ওভার মেডেন পায় বাংলাদেশ। যা ওই সাকিবের ওভারেই। মোহাম্মাদ নবি ম্যান অব দ্য ম্যাচের জন্য নির্বাচিত হন। পরের রাউন্ডের তিন ম্যাচ চট্টগ্রাম জহুর আহমেদে। ফাইনাল আবার শেরেবাংলাতেই হবে এ টুর্নামেন্টের।


আরো সংবাদ



premium cement